ইদানিং ঢাকা মহানগর এলাকায় কাজের বুয়া কর্তৃক গৃহকত্রীকে সুযোগ বুঝে সুকৌশলে নেশাদ্রব্য খাইয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুট করে নিয়েছে এমন অভিযোগ থানায় পাওয়া গেছে। কখনও কখনও এমন ঘটনায় গৃহকত্রী ৩/৪ দিন অজ্ঞান থাকেন ও পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায় ভুগেন। বেশিরভাগ অভিযোগের প্রেক্ষিতে পুলিশের তদন্তে দেখা যায় কাজের বুয়া নিয়োগের সময় তার সঠিক পরিচয় যাচাই না করে বাসায় কাজের জন্য নিয়োগ দেয়া হয়।
এছাড়াও বিভিন্ন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে কাজের বুয়া নিয়োগ করা হলেও কাজের বুয়া সরবরাহকৃত ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠান ও কাজের বুয়ার কোন তথ্য সংগ্রহ করেন না বাড়ির মালিক। যার ফলে কাজের বুয়া অপরাধ ঘটিয়ে চলে গেলেও সঠিক তথ্যের অভাবে পুলিশের পক্ষে প্রকৃত অপরাধীকে গ্রেফতার করা কষ্টসাধ্য হয়। অনেক সময় অপরাধীকে সনাক্ত করে গ্রেফতার করা সম্ভব হয় না।
কাজের বুয়া নিয়োগের ক্ষেত্রে গৃহকত্রী একটু সচেতন হলে এমন অপরাধ অনেকাংশে কমে যাবে। কাজের বুয়া নিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব সতর্কতা অবলম্বব করতে হবে তা জানাচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ।
কাজের বুয়া/কাজের লোক নিয়োগের আগে যা করবেন-
> কাজের বুয়া/কাজের লোক নিয়োগের আগে তার নিকট হতে জাতীয় পরিচয় পত্র, সদ্য তোলা রঙ্গিন ছবি, সনাক্তকারী ব্যক্তি, ব্যক্তির পরিচয় ও তার জাতীয় পরিচয় পত্র নিন।
> সমস্ত তথ্য নেয়ার পর তথ্য যাচাই করার জন্য নিকটস্থ থানায় কাজের বুয়া/ কাজের লোকের তথ্য প্রদান করুন এবং নিজের কাছে রাখুন। তাতে করে সে যদি পূর্বে কোন অপরাধ করে থাকে তাহলে পুলিশ তাকে সহজে সনাক্ত করতে পারবে।
> পূর্ববর্তী সময়ে সে কোথায় কাজ করেছে তার বিস্তারিত তথ্য নিন এবং কাজ ছাড়ার কারণ জানার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে পূর্বের কাজের ঠিকানায় যোগাযোগ করে তার তথ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে পারেন।
> কাজের বুয়া/ কাজের লোকের পরিবারের তথ্য নিন। তার স্থায়ী ঠিকানা ও পরিবারে কে কে আছে তা জানার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে তার স্থায়ী ঠিকানায় যোগাযোগ করে দেখতে পারেন, সে আসলে ওই ঠিকানায় বসবাস করে কি না। এত কিছু খোঁজ খবর অনাবশ্যক মনে হতে পারে। কিন্তু সমস্যা সৃষ্টি হলে তখন আফসোসের অন্ত থাকবে না।
> বর্তমানে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ নগরীর সকল মানুষের তথ্য সংরক্ষণের কাজ করছে। ডিএমপি কর্তৃক নির্ধারিত তথ্য ফরমে আপনার কাজের বুয়া/ কাজের লোকের তথ্য পূরণ করে থানায় জমা দিন।
কাজের বুয়া/ কাজের লোক নিয়োগের পরে যা করবেন
> নিয়োগের পর কাজের বুয়া/কাজের লোকের গতিবিধি লক্ষ্য করুন। তার চালচলনে আপনি বুঝতে পারবে সে আসলে কেমন ব্যক্তি।
> বাসার মেইন গেইটে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে পারেন। এতে করে আপনার বাসায় কোন অপরিচিত লোকের আনাগোনা হচ্ছে কি না তা দেখতে সহজ হবে। প্রয়োজনে ঘরের ভেতরেও সিসি ক্যামেরা লাগানো যেতে পারে যাতে আপনার অনুপস্থিতিতেও কাজের বুয়ার কর্মকাণ্ড মনিটর করতে পারেন।
> বাসায় মূল্যবান জিনিসপত্র, স্বর্ণালঙ্কার ও টাকা কাজের বুয়া/ কাজের লোকের অগোচরে রাখুন। আপনার লকারের চাবি সবসময় আপনার কাছে রাখার চেষ্টা করুন। প্রয়োজনে যে রুমে লকার/আলমারি রয়েছে সে রুম আলাদাভাবে লক করে রাখুন।
> বাড়িতে কাজের বুয়া/ কাজের লোককে একা রেখে সবাই বাড়ি ছেড়ে যাবেন না। বাচ্চা রেখে গেলে সাথে আরও একজনকে রাখুন। কোনো অবস্থাতেই বাচ্চাকে একা রেখে যাবেন না।
> কাজের বুয়ার চাহিদা বুঝার চেষ্টা করুন। তাতে করে সে লোভী কি না জানতে সহজ হবে।
> সন্দেহজনক কারোর সাথে কাজের বুয়া মোবাইলে কথা বলে কি না অথবা তার কাছে সন্দেহজনক কেউ দেখা করতে আসে কি না এ বিষয়ে লক্ষ্য রাখুন।
> বাড়িতে গ্যাসের চুলা, ইলেক্ট্রিক যন্ত্রাংশ ব্যবহারে কাজের বুয়া/ কাজের লোক সতর্ক রয়েছে কি না লক্ষ্য করুন। অসতর্কতার ফলে যেকোন বড় ধরণের দূর্ঘটনা ঘটতে পারে।
> কাজের লোক/বুয়াকে নিয়ে কোথাও ভ্রমনে গেলে সবসময় সাথে সাথেই রাখুন। সে হারিয়ে গেলে বা কোন দূর্ঘটনা ঘটলে আপনাকেই বিড়ম্বনায় পড়তে হবে।
> সর্বশেষ, আপনার বাসার কাজের লোক/বুয়ার সাথে মানবিক আচরণ করুন।
আপনার সচেতনতাই রুখতে পারে কাজের বুয়া/ কাজের লোকের অপরাধের তৎপরতা। কাজের বুয়া/ কাজের লোককে অতি বিশ্বাস না করাই শ্রেয়। তাদেরকে নজরদারীতে রাখুন আপনার স্বার্থেই। আপনার যেকোন প্রয়োজন ও সমস্যায় যোগাযোগ করুন নিকটস্থ থানা বা ফাঁড়ির পুলিশের সাথে। – ডিএমপি নিউজ