বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে মঙ্গলবার ইডেনেও বরণ করা হলো ভারতের পঞ্চম আইপিএল ট্রফি জয়ী টিম-শাহরুখকে। ইডেনে পৌঁছানোমাত্রই গানে গানে বরণ করা হয় তাদের। শাহরুখ ও তার যোদ্ধাদের সঙ্গে টিম বাসে করে ইডেনে আসেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিও ।
সকাল থেকেই ইডেনে কাতারে কাতারে মানুষের ভিড়ে পরিস্থতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয়েছে বিশাল পুলিশ বাহিনীকে। ইডেনে ছিল সকলের জন্য অবারিত দ্বার। প্রায় ২ ঘণ্টার অধীর অপেক্ষার পর কিং খান ঢুকলেন তার নাইটদের নিয়ে। সঙ্গে ছিলেন টিমের ‘কো-ওনার’ জুহি চাওলা।
হাততালি আর উচ্ছ্বাসের মাঝেই মঞ্চে এলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। হাত ধরে মঞ্চে তুললেন রাজ্যপাল এমকে নারায়ণনকেও।
সিল্কের আকাশি উত্তরীয় আর বেতের ঝুড়িতে সাজানো নকূড়ের সন্দেশে নাইটদের অভ্যর্থনা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কলকাতার জয়ে আমি গর্বিত।’
মমতা ব্যানার্জির ভূয়সী প্রশংসা করে রাজ্যপাল বলেন, ‘এটাই বাংলার প্রকৃত পরিবর্তন। এ পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতিই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দিয়েছিলেন।’
এরপর সাকিবদের এক ভরির সোনার চেন পরিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ করেছি, লড়েছি, জিতেছি বাংলা লেখা একটি বিশাল সন্দেশের তৈরি করা কেক কাটেন শাহরুখ, গম্ভীর আর জুহি।
কলকাতার রাজপথ-মহাকরণের পর অভূতপূর্ব ট্রফি-উন্মাদনা আর আবেগের বিস্ফোরণ দেখলো বহু ক্রিকেট ক্লাসিকের সাক্ষী থাকা ইডেন গার্ডেন্স। রাজ্য সরকারি সংবর্ধনা তৈরি করে দিল আরো বহুবর্ণীয় বিচিত্র দৃশ্য।
আইপিএল আর শাহরুখ। মঙ্গলবার ভর দুপুরে ৩৭ ডিগ্রির কলকাতাকে ইডেনমুখী করতে শুধু এই দুটো ফ্যাক্টরই যে যথেষ্ট তা আরও একবার দেখলো পরিবর্তনের কলকাতা। প্রায় ১ লাখ মানুষের উপস্থিতিতে গ্যালারি উপচে পড়া ভিড়ের মাঝখানে শাহরুখ খান এলেন, নাচলেন, জয় করলেন। সংবর্ধনা শেষে দিদির কপালে এঁকে দিলেন স্নেহচুম্বন।
বাঁধভাঙা আবেগ এমন জায়গায় পৌঁছালো যে, কলকাতা নাইট রাইডার্সের মালিক শাহরুখ খান নাচলেন রাজ্যপাল কে আর নারায়ণন ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির হাত ধরে। স্বর্গোদ্যানের সবুজ ঘাসে। নাচলেন বাংলার তারকা জিৎ, দেব, ঋতুপর্ণা, লকেটরাও।
মমতার নির্দেশে শুরু হয় ‘ধিতাং ধিতাং বোলে..।’ বাদশা ফের গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে টুইস্ট শুরু করেন। এমনকি এটাও বলেন, ‘দিদি আমার সঙ্গে নাচবেন।’
দিদি না নাচলেও আগাগোড়া এনার্জি-আবেগ নিয়ে নেচে গেলেন কিং খান। তার গায়ের নীল রঙের টি-শার্ট তখন ঘামে ভিজে জবজবে। প্রথমে গান হচ্ছিল- ‘করবো, লড়বো, জিতবো রে…’। দিদির নির্দেশে শুরু হল ‘ধিতাং ধিতাং বোলে..।’
তখনও অক্লান্ত বাদশা। একটানা কিং খানের দীর্ঘ পারফরম্যান্স ছিল হাজির হতে পারা দর্শকদের বাড়তি পাওনা।
খুশির বহির্প্রকাশে কখনও জিত, ঋতুপর্ণার পাশে দাঁড়িয়ে নেচে গেলেন নাইট মালিক। কখনও জুহি চাওলার সঙ্গে একটু আলাদা হয়ে। আবার দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে।
এরপর ট্রফি হাতে নিয়ে গোটা ইডেন প্রদক্ষিণ করেন নাইট বাহিনী। আনন্দে গ্যালারির ফেনসিং স্ট্যান্ডে উঠে দর্শকদের দিকে ঘন ঘন চুম্বন ছুঁড়ে দিতে থাকেন কিং খান। তার পাশে ট্রফি হাতে নিয়ে ফেনসিংএ উঠে পড়েন সাকিবও।
তবে অনুষ্ঠান চলাকালীন ইডেনের বাইরে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। হুড়োহুড়িতে আহত হন কয়েকজন। ১ লাখ দর্শক ভিতরে থাকলেও বাইরে ছিলেন প্রায় ৩০ হাজার দর্শক। কেউ কেউ জোর করেই ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করেন। শুরু হয় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধস্তাধস্তি। কিছু লোক ক্লাব হাউসের গেট দিয়েও মাঠে ঢুকে পড়ার চেষ্টা চালান।