তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের উচিত দেশে যেকোন অনিয়মের বিরুদ্ধে সরকারের অভিযানের জন্য সরকারকে অভিনন্দন এবং সাধুবাদ জানানো। এবং নিজেদের অতীতের অপকর্মের জন্য জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়া। ‘সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত পুরোপুরি দুর্নীতিতে নিমজ্জিত’- বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন অভিযোগের কড়া সমালোচনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “ নিজেদের বগলের তলায় উৎকট গন্ধ নিয়ে বিএনপি নাকে গন্ধ খুঁজছে।”
তথ্যমন্ত্রী আজ দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু অডিটোরিয়ামে দি সিনিয়র সিটিজেন্স সোসাইটি- চট্টগ্রাম আয়োজিত বয়োজ্যেষ্ট নাগরিক সম্মাননা অনুষ্টানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে মির্জা ফখরুল ইসলামের একটি বক্তেব্যের বিষয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক বলেন, বিএনপির আমলে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া হয়েছে। হাওয়া ভবন তৈরী করে সমস্ত ব্যবসা থেকে ১০ শতাংশ করে কমিশন নেয়া হয়েছিল। তিনি বলেন, “হাওয়া ভবনের দুর্নীতির সাথে তারেক জিয়ার সংশি¬ষ্টতা, বিএনপির বড় বড় মন্ত্রীর সংশি¬ষ্টতা আমরা দেখেছি। বিএনপির এই অপকর্ম দুর্নীতির কারণেই বিএনপির শাসনামলের ৫ বছরের প্রতি বছরই বাংলাদেশ লজ্জাজনকভাবে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে।”
হাছান মাহমুদ বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলামের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অবৈধভাবে অর্জিত কালো টাকা সাদা করেছিলেন জরিমানা দিয়ে। কোকোর দূর্নীতি ধরা পড়েছে সিঙ্গাপুরে। তারেক রহমানের দূর্নীতির বিরুদ্ধে এফবিআই এসে সাক্ষ্য দিয়ে গেছেন। দূর্নীতির দায়ে তারেক রহমানের দশ বছর সাজা হয়েছে। এতিমদের জন্য টাকা এনে সে টাকা এতিম খানার একাউন্টে না রেখে নিজের ব্যক্তিগত একাউন্টে নিয়ে খালেদা জিয়া নিজে দূর্নীতির দায়ে সাজাপ্রাপ্ত হয়ে আজকে জেল খানায় আছেন উল্লেখ করে হাছান মাহমুদ বলেন,“ যাদের নেতা-নেত্রী দেশকে দূর্নীতিতে আকুণ্ঠ নিমজ্জিত করেছিল তাদেরতো এনিয়ে কথা বলার নৈতিক অধিকারই নেই।”
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠন করার পর থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করে দেশ পরিচালনা করছেন। সেকারণে দূর্নীতিদমন কমিশনকে শক্তিশালী করা হয়েছে। বিভিন্ন ক্ষেত্রে দূর্নীতি বা অনিয়ম যেগুলো হচ্ছে সেটির বিরুদ্ধে বর্তমানে ঢাকা শহরে অভিযান চলছে, চট্টগ্রামেও শুরু হয়েছে। দূনীতির বিরুদ্ধে যে সরকার কঠোর অবস্থানে আছে, এজন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন জানিয়ে এ ব্যাপারে তার বোন সেলিমা ইসলাম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে গণমাধ্যমে এসেছে। এ বিষয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়ার হাতে-পায়ের যে ব্যাথা এটি তার বহু পুরনো শারীরিক সমস্যা।
তিনি বলেন, এই শারীরিক সমস্যা নিয়েই বেগম খালেদা জিয়া দেশের দুইবার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। দুইবার বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন। বিএনপির মতো দলের চেয়ারপার্সনের দায়িত্ব পালন করেছেন। সুতরাং এই সমস্যাকে সময়ে সময়ে বলে জণগণকে বিভ্রান্ত করার যে চেষ্টা, এটি আমরা সবসময় দেখেছি। গতকাল তার পরিবারের সদস্যরা দেখা করে যে কথাগুলো বলেছেন সেটা বিএনপি নেতাদের কথাগুলোর পুনরাবৃত্তি।
হাছান মাহমুদ বলেন, খালেদা জিয়াকে যাতে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্য সেবা দেয়া যায়, সেজন্য তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। তিনি যাতে সর্বোচ্চ সেবা পান। সেটা দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসালয়। সেখানে দেশের প্রথিতযশা ডাক্তাররা আছেন। দেশের সর্বোচ্চ চিকিৎসা তাকে দেয়া হচ্ছে। হাসপাতালে আনার আগে তিনি যখন কারাগারে ছিলেন, তার জন্য সার্বক্ষণিক একজন ফিজিওথেরাপিস্ট ছিল। এমনকি তার পছন্দের আয়াও তার সাথে আছে; পাকিস্তান আমলেও এ ধরনের ঘটনা ঘটেনি। ভারতে ঘটেছে কিনা আমার জানা নেই।
চট্টগ্রামে জুয়ার আসর পরিচালনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারের পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বলেন, ঢাকায় অভিযান চলছে। চট্টগ্রামেও হয়েছে। যেখানেই অনিয়ম পাওয়া যাবে সেখানেই এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দি সিনিয়র সিটিজেন্স সোসাইটি-চট্টগ্রামের সভাপতি দৈনিক আজাদী সম্পাদক এম এ মালেকের সভাপতিত্বে অনুষ্টানে সম্মানীয় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, বিশেষ অতিথি ছিলেন দি সিনিয়র সিটিজেন্স সোসাইটির কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক আবু বকর ছিদ্দিকী, সাংগঠনিক সম্পাদক আজহার মিয়া। স্বাগত বক্তব্য রাখেন লায়ন এম এ শামসুল হক।
অনুষ্ঠানে সংগঠনের পক্ষ থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী এ. এ. এম জিয়া হোসাইন, বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান শিক্ষাবিদ ড. প্রণব কুমার বড়–য়া, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট মাহবুব উদ্দিন আহমেদ, কবি ও লেখক সাংবাদিক অরুণ দাশ গুপ্ত ও উদীচী চট্টগ্রামের সভাপতি লেখক বেগম মুশতারি শফিকে খ্যাতিমান বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিক সম্মাননা প্রদান করা হয়।