মিয়ানমারের গণহত্যার পেছনে দেশটির সামরিক বাহিনী জড়িত থাকলেও দেশটির নেত্রী অং সান সু চি তাতে কিছুই করার ছিল না, এমন একটা প্রচারণা রয়েছে। কিন্তু এখন ক্রমে স্পষ্ট হচ্ছে তাতে সু চির প্রত্যক্ষ সমর্থন ছিল। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তাঁর ‘ফর দ্য রেকর্ড’ বইয়ে সু চির সঙ্গে আলাপের প্রসঙ্গ তুলে ধরেছেন। যেখানে স্পষ্ট হয় রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর ‘জেনোসাইডের’ ইঙ্গিত ২০১৩ সালের অক্টোবরে লন্ডন সফরকালেই দিয়েছিলেন সু চি।
রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার বাহিনীর ‘জেনোসাইডের’ ইঙ্গিত ২০১৩ সালের অক্টোবরে লন্ডন সফরকালেই দিয়েছিলেন মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চি। এমনকি রোহিঙ্গাদের হত্যা, ধর্ষণ ও জাতিগত নির্মূল প্রসঙ্গে সাফাই গেয়ে সু চি বলেছিলেন, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের প্রকৃত বাসিন্দা নয়, বাংলাদেশি। সাবেক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন তাঁর ‘ফর দ্য রেকর্ড’ বইয়ে ২০১৩ সালে সু চির সঙ্গে আলাপের বিষয়ে এসব তথ্য তুলে ধরেছেন।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত ওই বইটিতে এমন তথ্য প্রকাশিত হওয়ার পর রোহিঙ্গা ইস্যুতে সু চির মনোভাব নতুন করে আরো স্পষ্ট হয়েছে। ২০১২ সালে সু চি ভারত সফরকালে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশি হিসেবে অভিহিত করলে বাংলাদেশ এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিল। কিন্তু বহু বছর ধরে পরিকল্পনা করে রোহিঙ্গাদের ওপর জেনোসাইড চালানো মিয়ানমার ওই জনগোষ্ঠীকে ‘বিদেশি’ বা ‘বাংলাদেশি’ বলা ছাড়েনি।
ডেভিড ক্যামেরন তাঁর বইয়ে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী সু চির সঙ্গে ২০১২ ও ২০১৩ সালের সাক্ষাতের বিষয়ে লিখেছেন। ২০১২ সালে সু চির সঙ্গে প্রথম সাক্ষাৎ বিষয়ে ক্যামেরন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে লিখেছেন, ‘আমি গণতন্ত্রপন্থী প্রচারক অং সান সু চির সঙ্গে দেখা করেছি। তিনি শিগগিরই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে লড়বেন। ১৫ বছর গৃহবন্দি থাকার পর দেশকে সত্যিকারের গণতন্ত্রে রূপান্তর—কী চমৎকার ইতিহাস হতে যাচ্ছে তা তিনি বলেছেন।’
কিন্তু এক বছর পর ২০১৩ সালে ক্যামেরন লন্ডনে সু চির সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের বর্ণনা দিয়েছেন ভিন্নভাবে। তিনি লিখেছেন, ‘‘২০১৩ সালের অক্টোবর মাসে তিনি যখন লন্ডন সফরে এলেন তখন সবার দৃষ্টি তাঁর দেশের রোহিঙ্গা মুসলমানদের দিকে। বৌদ্ধ রাখাইনরা রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাড়িঘর থেকে তাড়াচ্ছিল। ধর্ষণ, হত্যা ও জাতিগত নির্মূলের তথ্য আসছিল। আমি তাঁকে বললাম—বিশ্ব দেখছে। তাঁর জবাব ছিল—‘তারা (রোহিঙ্গারা) সত্যিকারের বার্মিজ নয়। তারা বাংলাদেশি।’
গত সপ্তাহে জাতিসংঘের তদন্তদল বলেছে, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালে মিয়ানমার বাহিনীর নির্মূল অভিযান তাদের পরিকল্পনা ও উদ্যোগের অংশ মাত্র। জেনোসাইড প্রতিরোধবিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে মিয়ানমার জেনোসাইড ঠেকাতে ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না। জাতিসংঘের তদন্তকারীরা গত সপ্তাহে জেনেভা মানবাধিকার পরিষদে বলেছেন, রোহিঙ্গা জেনোসাইড, গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধে সম্পৃক্ততার দায়ে সু চিরও বিচার হতে পারে।
মিয়ানমার সরকারের কার্যত প্রধান হিসেবে আছেন স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। রোহিঙ্গা জেনোসাইডের ব্যাপারে সু চির নীরবতা নিয়ে পশ্চিমা বিভিন্ন দেশ ও জাতিসংঘের দূতরা প্রশ্ন তুললেও ক্যামেরনের বইয়ের তথ্যে আরো স্পষ্ট হলো যে রোহিঙ্গাদের ব্যাপারে মিয়ানমার বাহিনী ও সু চির মনোভাবের তেমন কোনো পার্থক্য নেই।