অর্থপাচারের অভিযোগ খালেদার নয়, ছেলেদের বিরুদ্ধে: অর্থমন্ত্রী

অর্থপাচারের অভিযোগ খালেদার নয়, ছেলেদের বিরুদ্ধে: অর্থমন্ত্রী

বিরোধীদলীয় নেতা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে ক্ষমতায় থাকাকালে অর্থপাচারের কোনো অভিযোগ নেই বলে জানালেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত।

সোমবার জাতীয় সংসদে প্রশ্নোত্তর পর্বে আওয়ামী লীগের জিল্লুল হাকিমের এ সংক্রান্ত এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘চারদলীয় জোট সরকারের শেষদিকে ওমরা পালনের জন্য বিরোধীদলীয় নেতা সৌদি আরব যাওয়ার সময় যে ৪৬০টি স্যুটকেস সঙ্গে নিয়েছিলেন তখন শূল্ক কর্তৃপক্ষ কীভাবে কী করেছিলেন সে ব্যাপারে নতুন করে এখন কোনো রিপোর্ট পাওয়া যাবে না। তবে ঐ সরকারের সময় কিছু অর্থপাচারের অভিযোগ আছে। কিন্তু এই অভিযোগ তার (খালেদা জিয়া) বিরুদ্ধে নয়, তার ছেলেদের বিরুদ্ধে।’

জিল্লুল হাকিম তার প্রশ্নে বলেন, `খালেদা জিয়া তার পরিবারের সাতজন সদস্যকে নিয়ে সৌদি আরব যাওয়ার সময় ৪৬০টি স্যুটকেস সঙ্গে নেন। এসব স্যুটকেসে তিনি কী নিয়েছিলেন? সাতজনের জন্য তো ৪৬০টি স্যুকটেস লাগে না, সাতজনের জন্য একটি করে ব্যাগ ও একটি স্যুটকেস নিয়ে ১৪টি স্যুটকেস-ব্যাগ লাগে।’

আওয়ামী লীগের তারানা হালিমের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেন, ‘ডলারের বিপরীতে বাংলাদেশে টাকার অবমূল্যায়নের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে কী হবে তা এই মুহূর্তে আমি বলতে পারব না। তবে অবমূল্যায়ন রোধে সবসময়ই আমাদের নানা ব্যবস্থা থাকে। অবশ্য বর্তমানে বাজারে ডলারের চাহিদা ও সরবরাহের ভারসাম্য ভালো।’

আওয়ামী লীগের কামাল আহমেদ মজুমদার এক সম্পূরক প্রশ্নে বলেন, ‘মানুষ ট্যাক্স দিতে চায়। কিন্তু এজন্য ট্যাক্স কর্মকর্তাদের যেভাবে ঘুষ দিতে হয়, সেজন্য মানুষ আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। এটি বন্ধ করা হবে কিনা?’

জবাবে মুহিত বলেন, ‘এই ঘুষের বিষয়টি কমুক তা আমরাও চাই। এজন্য কর প্রদান সহজ করার লক্ষ্যে সরকার নানা পদক্ষেপ নিয়েছে।’

শাহীন মনোয়ারা হকের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (টিআইএন) ধারীর সংখ্যা ৩০ লাখ। এর মধ্যে অনেক ভুয়া টিআইএনও আছে। এ বিষয়ে জরিপ চলছে, তা এ বছর শেষ হবে। আগামী বছরের মধ্যে টিআইএন ধারীর সংখ্যা ৫০ লাখে উন্নীত করার টার্গেট রয়েছে সরকারের।

একই প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যারা কর প্রদানের উপযুক্ত, কিছু জটিলতার কারণে তাদের সবাইকে করের আওতায় আনা যাচ্ছে না। কর প্রদান সহজ করার লক্ষ্যে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে এ বছর আমরা ৭ থেকে ১০ লাখ নতুন করদাতা সনাক্ত করতে পেরেছি।’

সাধরা হালদারের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রবাসীরা এক হাজার ৬১ কোটি মার্কিন ডলার রেমিটেন্স দেশে পাঠিয়েছে।

ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট এরই মধ্যে ১১টি দেশের ফাইন্যান্সিয়াল ইউনিটের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক করেছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট সন্দেহজনক ও নগদ লেনদেন এবং মানিলন্ডারিং ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন বিষয়ক বিভিন্ন অভিযোগ সম্পর্কে ডাটাবেজ সংরক্ষণ করছে।

সালমা ইসলামের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী জানান, সম্পূর্ণ প্রস্তুতকৃত পণ্য ও বিলাস দ্রব্যের ৫ ভাগ রেগুলেটরি ডিউটি অব্যাহত রাখা হয়েছে। চলতি অর্থবছরে এর থেকে প্রাশ এক হাজার ২০০ কোটি টাকা আদায় হবে বলে আশা করা যায়।

একই প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও জানান, বর্তমানে চাহিদার তুলনায় ডলারে যোগান পর্যাপ্ত থাকায় ডলার/টাকার বিনিময় হার স্থিতিশীল রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আন্তব্যাংক বৈদেশিক মুদ্র বাজারে ডলার বিক্রির আবশ্যকতা নেই। ফলে রিজার্ভ স্থিতিও কোনো ধরনের চাপের মুখে নেই।

এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ২০১০-১১ অর্থবছরে মোটরযান আমদানি খাতে ট্যাক্স বাবদ আদায় হয়েছে চার হাজার ২২২ কোটি টাকা। একই খাতে চলতি অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত আদায় হয়েছে দুই হাজার ৭১১ কোটি টাকা।

নিলোফার চৌধুরী মনির প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, সোনালি ব্যাংক গত ৩১ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ৩৫ হাজার ৬৩৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ঋণ নিয়েছে সাত হাজার ৯৯৫ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।

হোসেন মকবুল শাহরিয়ারের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, গত ৩০ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিলো ১০ হাজার ১৯৩ দশমিক শূন্য চার মিলয়ন মার্কিন ডলার।

শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীর লিখিত প্রশ্নের জবাবে মুহিত বলেন, নতুন ব্যাংক স্থাপনের জন্য উদ্যোক্তাদের সম্মিলিতভাবে ৪০০ কোটি টাকার প্রারম্ভিক পরিশোধিত মূলধন নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে হবে। এক্ষেত্রে একজন উদ্যোক্তা সর্বনিম্ন এককোটি টাকা ও সর্বোচ্চ মোট মূলধনের ১০ ভাগ অর্থাৎ ৪০ কোটি টাকার সমপরিমান শেয়ার ধারণ করতে পারবেন।

মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত ট্যাক্সেস আপিলাত ট্রাইবুনালে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা এক হাজার ৬২টি।

শহীদুজ্জামান সরকারের প্রশ্নের জবাবে মুহিত জানান, দেশের ২৯টি বেসরকারি ব্যাংক চলতি অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত তিন হাজার পাঁচ কোটি ৫ লাখ কৃষি ঋণ বিতরণ করেছে।

শাহিন মনোয়ারা হকের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশে আয় করদাতা ৩০ লাখ। তবে এ হিসাবে গোলমাল আছে। তাই নতুন করে  জরিপ করা হচ্ছে। আগামী অর্থবছরে আয়কর দাতা ৫০ লাখে হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘দেশে ১০ লাখ লোক আয়কর দেয়। লোকজনকে ট্যক্সের আওতায় নিয়ে আসতে জরিপ করে নতুন করে আয়কর দাতা খুঁজে বের করছি। বিভিন্ন এলাকায় নতুন আয়কর অফিস করা হচ্ছে। এছাড়া মানুষ যাতে সহজভাবে আয়কর দিতে পারে সে জন্য কাজ করছি।’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা তিন বছরে আয়করদাতা ৭ লাখ থেকে ১০ লাখে নিয়ে এসছি। আগামী বছরে ২০ লাখ আয়কর দাতা হবে।’

তারানা হালিমের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে ডলারের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে ভারসাম্য রয়েছে। তবে ভবিষ্যতে কি অবস্থা হবে সেটা এ মুহূর্তে বলতে পারছি না।

এর আগে বিকেল সোয়া পাঁচটায় ডেপুটি স্পিকার শওকত আলীর সভাপতিত্বে চলতি ১৩তম অধিবেশনের দ্বিতীয় কার্যদিবসের কার্যক্রম শুরু হয়।

বাংলাদেশ