নূর চৌধুরীর তথ্য প্রকাশে কানাডার আদালতে বাংলাদেশের পক্ষে রায়

নূর চৌধুরীর তথ্য প্রকাশে কানাডার আদালতে বাংলাদেশের পক্ষে রায়

বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত ও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের অন্যতম নূর চৌধুরীকে বাংলাদেশে ফেরানোর প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে বাংলাদেশের আবেদনে সাড়া দিয়েছেন কানাডার আদালত। বাংলাদেশ সরকারের দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে কানাডায় নূর চৌধুরীর অবস্থানসংক্রান্ত তথ্যের বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার আদেশ দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) ফেডারেল কোর্টের বিচারক ও’রেইলি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য প্রশাসনকে এ নির্দেশ দেন।
আদালত রায়ে জানান, নূর চৌধুরীর অবস্থান জানতে চেয়ে বাংলাদেশ যে আবেদন করেছে তা বৈধ। এ ধরনের তথ্য প্রকাশ জনস্বার্থের জন্য ক্ষতির কারণ হবে না।
ঘাতক নূর চৌধুরী কানাডায় কীভাবে আছেন এবং ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের’ (পিআরআরএ) আবেদন কী পর্যায়ে আছে সে বিষয়ে বাংলাদেশকে কানাডা কোনো তথ্য দিচ্ছে না অভিযোগ করে গত বছর জুন মাসে ‘জুডিশিয়াল রিভিউয়ের’ (বিচারবিভাগীয় পর্যালোচনা) আবেদনটি করা হয়।
দেশটির উচ্চ আদালত আবেদনটি মঞ্জুর করে বলছেন, কানাডা কর্তৃপক্ষ ও নূর চৌধুরীর বিষয়ে বাংলাদেশকে তথ্য না দেওয়ায় যেসব যুক্তি তুলে ধরেছেন তা গ্রহণযোগ্য নয়। আর তাই বাংলাদেশের আবেদন আবার বিবেচনা করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
আদালতের রায়ে আরও বলা হয়, নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী ১৯৯৬ সালে কানাডায় ‘ভিজিটর’ স্ট্যাটাস পান। এর কিছু দিন পরই তারা ‘রিফিউজি প্রটেকশনের’ (শরণার্থী হিসেবে সুরক্ষা) আবেদন করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার দায়ে বাংলাদেশে ফেরারি হিসেবে নূর চৌধুরীর বিচার হয় এবং সেখানে তিনি দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন।
এ ছাড়া গুরুতর ‘অরাজনৈতিক’ অপরাধের কারণে নূর চৌধুরী ও তার স্ত্রী ২০০২ সালে ‘রিফিউজি প্রটেকশন’ সুরক্ষা থেকে বাদ পড়েন। তবে নূর চৌধুরীকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়নি। বাংলাদেশে ফিরলে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হতে পারে—এমন যুক্তি দেখিয়ে নূর চৌধুরী ‘প্রি-রিমুভাল রিস্ক অ্যাসেসমেন্টের’ জন্য অনুরোধ করেছেন বলেও রায়ে উল্লেখ করেন আদালত।
এর আগে কানাডা সরকার বরাবরই দেশটিতে অভিবাসিত নূর চৌধুরীর বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত জানিয়ে আসছিল।
কেননা কানাডার আইন অনুযায়ী, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত কাউকে প্রত্যর্পণে বাধা থাকায় সে দেশের সরকার জনস্বার্থ রক্ষার্থে নূর চৌধুরীর বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করছিল না।
মঙ্গলবার এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এলো কানাডা। রায়ের পর বাংলাদেশ মনে করছে, বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত এ খুনিকে দেশে ফেরানোর চেষ্টায় এক ধাপ অগ্রগতি হয়েছে।
মৃতুদণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক এ সেনা কর্মকর্তাকে ফিরিয়ে এনে শাস্তি কার্যকর করতে সর্বদাই চেষ্টা করে আসছিল আওয়ামী লীগ সরকার। জাতির পিতার খুনিদের একজন কীভাবে কানাডায় বসবাস করছেন, সেই অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য দেশটির সরকারের কাছে চেয়ে আসছিল বাংলাদেশ।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলে আইন করে বন্ধ করে দেয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ খোলে। এ নিয়ে মামলার পর বিচার শুরু হলেও বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর মামলার গতি ধীর হয়ে যায়।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় এলে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি করে দণ্ডিত ৫ জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, মহিউদ্দিন আহমদ (ল্যান্সার), একে বজলুল হুদা ও একেএম মহিউদ্দিনকে (আর্টিলারি) ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডাদেশ কার্যকর করা হয়।
কিন্তু মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খন্দকার আবদুর রশিদ, এএম রাশেদ চৌধুরী, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, আবদুল মাজেদ ও রিসালদার মোসলেম উদ্দিন খান পলাতক থেকে যান।
তাদের মধ্যে নূর কানাডায় এবং রাশেদ যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছেন। বাকিদের অবস্থান এখনো শনাক্ত হয়নি। সবাইকে দেশে ফেরানোর চেষ্টায় ইন্টারপোল থেকে রেড নোটিশ জারি করা হলেও তাতে কোনো সুফল আসেনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিপদগামী দল স্বাধীনতার স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে তার ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বাসভবনে হত্যা করে।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর