জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনের উচ্চপর্যায়ের বিতর্কে অংশ নিতে আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আগামী রবিবার নিউ ইয়র্ক পৌঁছার পর পরবর্তী এক সপ্তাহে তিনি বেশ কিছু বৈঠকে অংশ নেওয়া ছাড়াও সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন। সেখানে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে জোর দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এ সফরেই দুটি সম্মাননা পাচ্ছেন তিনি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল বুধবার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, জাতিসংঘের এ অধিবেশনে রোহিঙ্গা সমস্যা আলোচনায় আসবে এবং এ বিষয়ে বেশ কিছু ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হবে। রোহিঙ্গা বিষয়ে বিশ্ব নেতৃত্বের আগ্রহ, সার্বিক অবস্থান অব্যাহত রাখা এবং প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টির জন্য এ বিষয়ে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে বাংলাদেশের জোরালো বক্তব্য ও অংশগ্রহণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর সাধারণ পরিষদের বিতর্ক পর্বে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে অতীতের মতো এবারও সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাব তুলে ধরতে পারেন। এর আগে ২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রী যে পাঁচ দফা ও গত বছর তিন দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন তা এখনো প্রাসঙ্গিক বলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
এবারের প্রস্তাবে কী থাকবে—জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় কী বলবেন তা আগেই বলা ঠিক হবে না। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যাতে প্রত্যাবাসন করে, নিরাপত্তা ও সুরক্ষার মধ্যে থাকে এবং অবাধে চলাফেরার সুযোগ পায় সে বিষয়ে বক্তব্য দেবেন।’ অতীতের পাঁচ দফা ও তিন দফার সঙ্গে এবারের প্রস্তাবের পার্থক্য কী হবে—জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সেগুলো জোরালো করে ভিন্ন আঙ্গিকে উত্থাপন করব।’
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, প্রত্যাবাসন শুরুর উদ্যোগ দুইবার ভেস্তে যাওয়ার পর সমস্যাটা যে মিয়ানমারের ভেতরই তা বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে আরো স্পষ্ট হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতে আগ্রহী করতে হলে মিয়ানমারে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে—এ বিষয়টি বাংলাদেশ আবারও তুলে ধরতে পারে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটের বিরূপ প্রভাব ও ঝুঁকিগুলো তুলে ধরে সংকট সমাধানে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টির আহ্বান জানাতে পারেন প্রধানমন্ত্রী। জাতিসংঘের নতুন রেসিডেন্ট কোঅর্ডিনেশন প্রগ্রামে সহায়তা হিসেবে সংস্থাটির ট্রাস্ট ফান্ডে এক লাখ ডলার অনুদান ঘোষণা করবে বাংলাদেশ।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গাবিষয়ক একাধিক আলোচনা অনুষ্ঠানে ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেবেন। এ ছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরাও ত্রিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
তিনি আরো বলেন, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে নতুন করে সরকার গঠনের পর এই অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের নেতৃত্বে বিগত বছরগুলোতে অর্জিত বাংলাদেশের সাফল্যগুলো তুলে ধরতে পারেন। এর পাশাপাশি দেশে চলমান অর্থনৈতিক উন্নয়ন, গণতন্ত্র ও সুশাসনের ধারা অব্যাহত রাখতে তিনি বাংলাদেশের কর্মপরিকল্পনা বিশ্ববাসীকে অবহিত করতে পারেন।
এবারের অধিবেশনের ফাঁকে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস আয়োজিত ভোজসভা ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আয়োজিত অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের সভাপতি ইরিনা বোকোভা, আন্তর্জাতিক ফৌজদারি আদালতের প্রধান কৌঁসুলি ফেটু বেনসুডা, এক্সন মবিলের প্রধান নির্বাহী ড্যারেন উডসসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এ ছাড়া মহাত্মা গান্ধী ও সমসাময়িক বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানেও প্রধানমন্ত্রী অংশ নেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দ্য ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্স নামে একটি সংস্থা সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচিতে বাংলাদেশের অভাবনীয় সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে প্রধানমন্ত্রীকে ‘ভ্যাকসিন হিরো’ সম্মাননা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া জাতিসংঘের শিশু সংস্থা ইউনিসেফ তরুণদের দক্ষতা উন্নয়নে উদ্যোগের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ‘চ্যাম্পিয়ন অব স্কিল ডেভেলপমেন্ট ফর ইয়ুথ’ সম্মাননা প্রদান করবে।
প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসায়ী নেতাদের ও নীতি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেও বৈঠক করবেন।
এনআরসি নিয়ে মোদির কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, নিউ ইয়র্কে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরবর্তী সময়ে তিনি নয়াদিল্লিতে বিশদ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।
মোমেন বলেন, ‘দেশে যতগুলো সমস্যা, নিশ্চয়ই তিনি (প্রধানমন্ত্রী) সেগুলো ভারতকে জানাবেন। বিশেষ করে, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে ধরনের সমস্যা আছে, আমার ধারণা সেগুলো তিনি সেখানে উত্থাপন করবেন; সেটা জাতিসংঘে করেন, আর ভারতে গিয়েই করেন।’
বাংলাদেশ সরকার আসামে নাগরিক তালিকাকে (এনআরসি) সমস্যা হিসেবে দেখছে কি না জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাছে সমস্যা নয়। এটি ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে এটাতে কারো কারো উদ্বেগ আছে। মনে হয়, প্রধানমন্ত্রী সেই কথাটা প্রকাশ করতে পারেন।’