বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে নির্ভুল পরিকল্পনা ও সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি : অর্থমন্ত্রী

বিদ্যুৎ সংকট নিরসনে নির্ভুল পরিকল্পনা ও সঠিক বাস্তবায়ন জরুরি : অর্থমন্ত্রী

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, ‘দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মাধ্যমে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে হবে। তাই নির্ভুল পরিকল্পনা, সঠিক বাস্তবায়ন আর উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। আমি আশা করি, সেই সময় আসবে যখন আমাদের দেশে জ্বালানির সংকট থাকবে না।’

সোমবার বিকেলে রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর  অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

অনুষ্ঠানে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইসিজিবিএল) ও  জেভি অব আইসোলাক্স
ইঞ্জিনিয়ারিয়া এসএ অ্যান্ড স্যামস্যাং সিএন্ডটি করপোরেশনের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উন্নতির দিকে যাচ্ছি। উন্নয়নে বিদ্যুৎ একটি জরুরি ব্যপার। জ্বালানি খাত দেশি ও আন্তর্জাতিক নানা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে। আমাদের দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ যথেষ্ট নয়। কারণ, প্রতিদিনই চাহিদা বাড়ছে।’

অর্থমন্ত্রী স্পেনের রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করে বলেন, ‘আপনারা বাংলাদেশের বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও অন্যান্য সেক্টরে বিনিয়োগ করতে পারেন। বাংলাদেমের শ্রম সম্পদকে কাজে লাগাতে পারেন। এর আগে স্পেনের সঙ্গে যেসব চুক্তি হয়েছে, বাংলাদেশ সবগুলোর সুফল পায়নি।’

বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই এলাহী চৌধুরী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী এনামুল হক, বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যালেন গোলস্টেইন, স্পেনের রাষ্ট্রদূত লুইচ তেদা চেকন।

জ্বালানী উপদেষ্টা বলেন, ‘সরকার বিদ্যুৎ উৎপাদনে নানা কাজ করছে। গণমাধ্যমকে আশার কথা শোনাতে হবে। আমরা কি কি কাজ করছি, সেসব তুলে ধরুন।’ ‘প্রধানমন্ত্রীও বিদ্যুতের ব্যাপারে বিশেষ নজর রাখছেন। আশা করি, আগামী বছরের মধ্যেই আপনারা আরো ভালো খবর পাবেন। আমরা সবার ভালো পরামর্শ ও সহযোগিতা চাই।’
বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, ‘উন্নয়ন পরিকল্পনার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিদ্যুৎ খাত। এজন্য এ খাতের সঙ্গে জড়িত সবাই আন্তরিকভাবে কাজ করছেন। সমন্বিত পরিকল্পনার মাধ্যমে ২০২১ সালের মধ্যে সবার ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজটি যাতে দক্ষতার সঙ্গে শেষ করা জরুরি। আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পগুলো দ্রুততার সঙ্গে শেষ করার চেষ্টা করবো।’

বিশ্ববাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর বলেন, ‘বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের সঙ্গে বিশ্বব্যাংক দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। আমরা এ খাতে অর্থ সহায়তাও দিয়ে যচ্ছি। বাংলাদেশ গত দেড় দশকে নারীশিক্ষা, স্যানিটেশন, দারিদ্র্য দূরীকরণ, বেসরকারি বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টিতে বিস্ময়কর উন্নতি সাধন করেছে। রাতারাতি বিদ্যুৎ খাতে উন্নতি সম্ভব নয়। এজন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগোতে হবে। বাংলাদেশও সেদিকেই যাচ্ছে। আমরা বাংলাদেশের ব্যাপারে আশাবাদী থাকতে চাই।’

বিদ্যুৎ সচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা বিদ্যুৎ নিযে নানা নমস্যায় আছি। তবে বিদ্যুৎ সংকট থাকবে না। অনেকেই বলেন, এতো বিদ্যুৎ কোথায় গেল। তাদের জানা উচিত, শিল্প কারখানায় প্রতি বছর ২১ শতাংশ হারে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। বর্তমান সংকট সাময়িক। তাই হতাশ হবার কিছু নেই।’

অনুষ্ঠানে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশের (ইসিজিবিএল) কোম্পানি সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম, জেভি অব আইসোলাক্স ইঞ্জিনিয়ারিয়া এসএ’র এমডি জোসে গুরিডিও, স্যামস্যাং সি এন্ড টি করপোরেশনের জিএম মুসিকারতো সানকি না নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে স্বাক্ষর করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইসিজিবিএল) এর চেয়ারম্যান নীলুফার আহমেদ স্বাগত বক্তব্য রাখেন।

ঢাকা ও আশপাশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা স্থানীয়ভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যমে মেটানোর লক্ষ্যে  সিদ্ধিরগঞ্জ বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।

গত বছরের ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে এ প্রকল্প অনুমোদন করা হয়। এ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয়েছে ‘সিদ্ধিরগঞ্জ ৩৩৫ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণ (সংশোধিত)’।

ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইসিজিবিএল) ২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ২৭৯ কোটি ৫০ লাখ ৮১ হাজার ৭০৬ টাকা। এ প্রকল্পের অনুমোদিত মুলধন প্রায় ৩০০ কোটি টাকা। প্রকল্পে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক ও জিওবি। প্রাকৃতিক গ্যাস দিয়ে এ কেন্দ্রটি উৎপাদন কাজ চালাবে।

অর্থ বাণিজ্য