বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে গড়ে উঠে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে সর্বোচ্চ শান্তিসেনা প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করেছে। যা দেশ ও জাতির জন্য অনেক বড় গৌরবের বিষয়।
আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস ২০১২ উপলক্ষে কোয়ালিশন অব লোকাল এনজিওস বাংলাদেশ (সিএলএনবি) এর এক প্রতিবেদনে জানা যায়, জনশক্তি রপ্তানি, গার্মেন্টস এর পর ৩য় বৃহৎ আয়ের খাত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষা মিশন। জাতিসংঘ থেকে অর্জিত আয়ের দ্বারা বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশের জাতীয় বাজেটে বিশাল অংশ নিজেদের আয় দ্বারা পরিশোধিত হয়ে থাকে।
জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে শান্তি স্থাপন পরবর্তী ভারত ও চীনের মত বাংলাদেশকে উক্ত দেশ গুলোর উন্নয়ন সহযোগী হওয়ার মাধ্যমে উক্ত দেশগুলোতে বাংলাদেশীদের ব্যাপক কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
১৯৮৮ সন থেকে ইরান-ইরাক যুদ্ধে ১৫ জন বাংলাদেশের সেনা সদস্য ইরাকে যুদ্ধ তদারকির মাধ্যমে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কার্যক্রম শুরু। ১১৬ দেশের সমন্বয়ে গড়ে উঠে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বাংলাদেশের এককভাবে সর্বোচ্চ ১০২২৫ শান্তিসেনা বর্তমানে কর্মরত, যা মোট বাহিনীর ১০.৩৩% এবং এ পর্যন্ত মিশন সমাপ্ত করেছে ১২৮৪২২ জন (কমবেশি)। এর মধ্যে এগিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ২য় বাংলাদেশ পুলিশ, বাংলাদেশ নৌ বাহিনী ও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী মিশনে কঠিন দায়িত্ব পালনকালে এ পর্যন্ত নিহত/মৃত্যু বরণকারী ১০৯ জন বাংলাদেশ শান্তিসেনা।
বর্তমান মিশন চলছে সিরিয়া, সুদান, দক্ষিণ সুদান, আইভরি কোস্ট, লাইবেরিয়া, সিয়েরালিয়ন, কঙ্গো, বসনিয়া, পশ্চিম সাহারা, হাইতি, পূর্বতীমুর ও লেবানন উল্লেখযোগ্য।
দিবসের নানা কর্মসূচি
মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবস উপলক্ষে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হবে।
আইএসপিআর সূত্রে জানা জানায়, আজ মঙ্গলবার সকালে পিস কিপার্স রানের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী দিবসের কর্মসূচি শুরু হবে এবং বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শহীদ শান্তিরক্ষীদের নিকট-আত্মীয় এবং আহত শান্তিরক্ষীদের জন্য সংবর্ধনা, স্মৃতিচারণামূলক আলোচনা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের ওপর বিশেষ উপস্থাপনার কর্মসূচি রয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের কার্যক্রমের ওপর প্রদর্শনী সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বিটিভি ওয়ার্ল্ড সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।
দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশিত হবে এবং বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন বেসরকারি চ্যানেলে বিশেষ টক শো প্রচারিত হবে। `এ সেন্টার অব একসেলেন্স` এবং `বিশ্ব শান্তির অন্বেষণে` শিরোনামে দুটি প্রামাণ্য চিত্র বিটিভিসহ অন্যান্য বেসরকারী চ্যানেলে রোববার ও সোমবার প্রচারিত হয়েছে।