মহাজোট ছাড়ছেন না এরশাদ

মহাজোট ছাড়ছেন না এরশাদ

সরকার বিরোধী হম্বিতম্বি অনেকটাই কমে এসেছে জাতীয় পার্টি (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের। ‘স্বৈরাচার’ তকমা কুড়ানো সাবেক এই রাষ্ট্রপতি ও তার দল গত কয়েক মাস ধরে লাগাতার মহাজোট ছাড়ার হুমকি দিতে থাকলেও এখন যেন একেবারেই উল্টো সুরে গাইতে শুরু করেছেন তিনি।
পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকার নয়, বিরোধী দলের সমালোচকই হয়ে উঠেছেন তিনি।

দলীয় সূত্র বলছে, নানা কারণে এরশাদের ওপর মহাখাপ্পা হয়ে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। এমনকি আগামীতে ক্ষমতায় গেলে তিনি নতুন করে এরশাদের বিচার শুরু করবেন বলেও খবর ভাসছে দলীয় পরিমণ্ডলে। অপরদিকে ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের মামলার উদাহরণ সামনে রেখে জুজু দেখাচ্ছে সরকার পক্ষ।

এ পরিস্থিতিতে মহাজোট ছাড়ার চিন্তাকে ব্যাকগিয়ারে দেওয়া ছাড়া কোন উপায়ই নেই এরশাদের। তাই জাপাপ্রধান আপাতত মহাজোট ছাড়বেন না বলেই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দলটির সিনিয়র নেতারা মনে করছেন, বিরোধী দলের ব্যাপারে সরকার যেরকম হার্ডলাইনে থাকছে তাতে মহাজোট ছাড়লে একাধিক মামলায় ঝুলে থাকা এরশাদকে আবার জেলে নেওয়া বিচিত্র নয়। কিন্তু শেষ বয়সে এসে জেলবাসী হওয়ার কোনো ইচ্ছাই নেই এরশাদের।

তাই গত ক’মাস ধরেই মহাজোট ছাড়ার আওয়াজ দিতে থাকা এরশাদ ও তার অনুসারীরা এখন এ প্রসঙ্গে কুলুপ এঁটেছেন।

এরশাদের সাম্প্রতিক নড়াচড়া আর কথাবার্তাতেও এর প্রমাণ মিলছে। গেলো শুক্রবার হোটেল ওয়েস্টিনে দৈনিক ঘোষণা পত্রিকার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে সরকার নয়, বিএনপিরই সমালোচনায় মুখর ছিলেন এরশাদ।

এমনকি ওই দিন খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া ও হরতালের মামলায় বিএনপি নেতাদের জামিন না দেওয়াকে ‘আল্লাহর বিচার’ বলেও মন্তব্য করেন সাবেক এ রাষ্ট্রপতি।

কার্যত ৭ দিনের চীন সফর শেষে ২৩ মে দেশে ফিরেই বিএনপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন তিনি।

এদিকে চীনে যাওয়ার আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন এরশাদ। ওই বৈঠকে নাকি ‘আপনার দলের লোকেরা কাকে যেন তালাক দেওয়ার কথা বলছে’ বলেও এরশাদকে কটাক্ষ করেন প্রধানমন্ত্রী।

ওই বৈঠকের পর থেকেই মহাজোট ইস্যুতে এরশাদের সুর পাল্টে যেতে দেখা যায়। এর আগে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সরকারের কঠোর সমালোচনা করতেন। এখন সেই সমালোচনা থেকে একশ’ ৮০ ডিগ্রি ঘুরে গেছেন তিনি।

জাপা মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারে সঙ্গে কথা বলে এরশাদের মহাজোট না ছাড়ার বিষয়টি আরো স্পষ্ট হয়ে যায়।

বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘জাতীয় পার্টি মামলার ভয়ে এ মুহূর্তে মহাজোট ছাড়ছে না এ কথা ঠিক। তবে মহাজোট প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য পার্টির চেয়ারম্যানকে (হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ) একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তিনিই এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’

তবে বিরোধী দলের সমালোচনায় মুখর হলেও মহাজোট ছাড়া বা নাড়ার বিষয়ে স্পষ্ট কোন বক্তব্য এখনো দিচ্ছেন না এরশাদ।

কবে মহাজোট ছাড়ার ঘোষণা দেবেন জানতে চাইলে বাংলানিউজকে তিনি বলেন, ‘যথা সময়েই ঘোষণা আসবে।’

এ বিষয়ে আরো প্রশ্ন করা হলে জবাব এড়িয়ে যান তিনি।

এদিকে জাতীয় পার্টির কোন কোন নেতা মনে করছেন, আর কালক্ষেপণ না করে এখনই মহাজোট ছাড়া উচিত জাতীয় পার্টির।

এ প্রসঙ্গে দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম হাবিব দুলাল বাংলানিউজকে বলেন, ‘মহাজোট ছাড়ার বিষয়ে পার্টি চেয়ারম্যানকে একক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। আমার মতামত চাওয়া হলে বলব- এখনই মহাজোট ছাড়া উচিত।’

উল্লেখ্য, ‘১৯৯০ সালে গণআন্দোলনের মুখে এরশাদ সরকারের পতন হলে, তার নামে মোট ২৭টি মামলা দেওয়া হয়। এর মধ্যে ২০০৬ সালে বিএনপির সঙ্গে এরশাদের জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হলে ৫টি মামলা প্রত্যাহার করে নেয় বিএনপি। অপর ২২টি মামলার মধ্যে ১৮টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। বিচারাধীন রয়েছে মঞ্জু হত্যা, রাডার ক্রয়, বিটিভির জন্য ইনএনজি ক্যামেরা ক্রয় দুর্নীতি মামলা।’

এদিকে রংপুর-৩ সদর আসনে গত সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা মনোনয়নপত্রে এরশাদ উল্লেখ করেছিলেন- তার নামে মোট ৪০ টি মামলা দায়ের হয়েছে। ওই সময়ে (২০০৮ সালে অক্টোবর) ১৩টি মামলা বিচারাধীন অথবা স্থগিত ছিলো। আর ২৬টি মামলা থেকে অব্যহতি পেয়েছেন তিনি।’

রাজনীতি