গাড়ি পোড়ানোর মামালায় কারাবন্দী ১৮ দলীয় জোটের পাঁচ সাংসদকে জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোট নেতাদের কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
রোববার বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহসানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ জামিন দেন।
এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ১লা জুন পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
তবে এই মামলার অন্য আসামি ঢাকা মহানগর বিএনপির সভাপতি সাদেক হোসেন খোকার আবেদনের শুনানি সোমবার দুপুর দুইটায় শুনানি হবে।
জামিন পাওয়া পাঁচ সাংসদ হলেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব) অলি আহমেদ, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী ও বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ।
আদালতে আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন, সুপ্রীম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, খন্দকার মাহবুব হোসেন, জয়নুল আবেদীন ও আহসানুল করীম প্রমূখ।
রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোন্দকার দিলীরুজ্জামান।
এম কে রহমান বাংলানিউজকে বলেন, সাংসদদের ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়েছেন। এছাড়া বাকীদের কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে এক সপ্তাহের রুল দিয়েছেন আদালত।
আদেশের পরে মওদুদ আহমদ বলেন, এটা একটা মিথ্যা ও বানোয়াট মামলা। ঘটনার দিন দুলু ছিলো নাটোরে জজ আদালতে, শফিউল আলম প্রধান ছিলেন পঞ্চগড়ে। এছাড়া জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এ কাজ করতে পারে না। তাই আদালত সাংসদদের জামিন দিয়েছেন। আর বাকীদের কেন জামিন দেওয়া হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত।
এর আগে গত বুধবার জামিন আবেদন নাকচ করে বিচারিক আদালতের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে রোববার সকালে হাইকোর্টে এ আবেদন করেন তাদের আইনজীবীরা।
গত ১৬ মে তারা ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসর্মপণ করলে মহানগর হাকিম এরফান উল্লাহ জামিন আবেদন নাকচ করে তাদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ওইদিন জামিন নাকচের পর আসামিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম বিকাশ কুমার সাহার কাছে জামিন আবেদন পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে বিচারক তাও নাকচ করে দেন।
আসামিরা হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, স্থায়ী কমিটির সদস্য বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব) অলি আহমেদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, রুহুল কবির রিজভী, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, সংসদ সদস্য ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবুন-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীম, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, ঢাকা মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম মজনু, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ঢাকা মহানগর উত্তরের স্বেচ্ছাসেবক দল আহ্বায়ক ইয়াছিন আলী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আ. মতিন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদল সাধারন সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহমেদ লিটু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, বিএনপি নেতা ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আবুল বাসার, বিএনপি নেতা ও ৪০ নং ওয়ার্ড কমিশনার আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান ওরফে এল রহমান, বিএনপির সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নবী সোলায়মান, খিলগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি সাবেক কমিশনার ইউনুছ মৃধা ও মোহাম্মদপুর থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মান্নান হোসেন শাহীন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ এপ্রিল বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের পর রাত ৯টা ৫ মিনিটে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে একটি গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হরতালকারীরা।
এ ঘটনায় তেজগাঁও থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইসমাইল মজুমদার বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় দ্রুতবিচার আইনের ৪ ও ৫ ধারায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের ৪৪ নেতা-কর্মীকে আসামি করা হয়।
গত ১০ মে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জোটের ৪৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর নুরুল আমিন।
২১ মে সব আসামির বিরুদ্ধেই চার্জশিট আমলে নেন সিএমএম আদালত। ওইদিন জামিনে থাকা একমাত্র আসামি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের জামিন আবেদনও নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে, মামলার অপর চার্জশিটভুক্ত আসামি জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল হোসেন, ঢাকা মহানগর জামায়াত নেতা বুলবুল ও ছাত্রশিবির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী পলাতক আছেন। তাদের পক্ষে এ পর্যন্ত আদালতে কোনো আবেদন করা হয়নি।