পদ্মা সেতু নির্মাণে কাতারকে বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। রোববার ঢাকায় কাতারের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় এক বৈঠকে বাংলাদেশের তরফ থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়।
বৈঠক শেষে সফররত কাতারের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী শেখ আহমদ বিন মোহাম্মদ বিন জাবর আল-থানি সংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রস্তাবের ব্যাপারে আমাদের আগ্রহ রয়েছে।’
এ সময় পাশে থাকা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বিষয়টির ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সঙ্গে পদ্মা সেতু নির্মাণের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। আমরা কাতারকে বলেছি, এতে যদি তারা রাজি থাকে তবে ত্রিপক্ষীয় একটি চুক্তি হতে পারে।’
কাতারের মন্ত্রী আল থানি জানান, বিষয়টি নিয়ে তারা আরো পর্যালোচনা করে দেখবেন।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকে অর্থ জমা রাখতে আগে দেওয়া প্রস্তাব নিয়েও এদিন আলোচনা হয়। এ প্রসঙ্গে দীপু মনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে কাতারের অর্থ জমা রাখার ব্যাপারে একটি আইনী কাঠামো (লিগ্যাল ফ্রেমওয়ার্ক) তৈরি করা হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গত এপ্রিলে কাতার সফরের সময় দেশটির আমিরের তরফ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে টাকা জমা রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এ ব্যাপারে কাতার ও বাংলাদেশ একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ তৈরি করবে বলে জানিয়ে দীপু মনি বলেন, ‘এ ওয়ার্কিং গ্রুপে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হবে।’
কাতারে বাংলাদেশি জনশক্তি আরো বেশি নিয়োগের ব্যাপারে কাতারের মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশি কর্মীদের কাতারে নিয়োগের জন্য একটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। এতে কাতার সহযোগিতা করবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে কাতারের মন্ত্রী আরো বলেন, ‘২০২২ সালে কাতারে ফুটবলের বিশ্বকাপ আয়োজন উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ থেকে নিশ্চয়ই আরো বেশি কর্মীর প্রয়োজন পড়বে। প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হলে তার মাধ্যমেই কর্মীর চাহিদা মেটানো যাবে।’
বৈঠকের অন্যান্য ইস্যু প্রসঙ্গে কাতারের মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের প্রস্তাব অনুযায়ী বাংলাদেশে একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে তারা আগ্রহী।
এছাড়া হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন এবং নদী খননের ড্রেজিং সরবরাহেও তাদের আগ্রহ রয়েছে।
রোববার ঢাকায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে বাংলাদেশ ও কাতারের এ বৈঠকে অবকাঠামোসহ ৫টি সুনির্দিষ্টখাতে সহায়তা পাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।
সফররত কাতারের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বিষয়ক সহকারী মন্ত্রী শেখ আহমদ বিন মোহাম্মদ বিন জাফর আল-থানি বৈঠকে কাতারের ১০ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
রোববার বেলা বারোটা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত বৈঠকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি বাংলাদেশের পক্ষে বৈঠকে নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের আধুনিকায়ন, নদী খননের ড্রেজার ক্রয়, ঢাকা বাইপাস নির্মাণ, বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং বিশেষ অর্থনৈতিক এলাকায় বিনিয়োগের বিষয় আলোচনায় স্থান পায়।
শাহজালাল বিমানবন্দরের আধুনিকায়নের মধ্যে নতুন একটি টার্মিনাল ও কার্গো ভিলেজ নির্মাণের প্রস্তাব কাতারকে দেওয়া হয়েছে।
বিমানবন্দরের ৩য় টার্মিনালটি নির্মাণের খরচ ধরা হয়েছে ৩৭৫ মিলিয়ন ডলার এবং কার্গো ভিলেজ নির্মাণের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০ মিলিয়ন ডলার।
চট্টগ্রামের মহেশখালীতে ১০০০ মেগাওয়াটের এলএনজি চালিত কম্বাইন্ড সাইকেল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৩০০ মিলিয়ন ইউএস ডলারের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।
নদী খননের জন্য ৫টি ড্রেজার কেনার জন্য কাতারের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে। এ জন্য ৫৫ দশমিক ২৬ মিলিয়ন ডলার ব্যয় ধরা হয়েছে।
ঢাকা বাইপাস নির্মাণের জন্য গাজীপুরের কড্ডা থেকে জয়দেবপুর, দেবগ্রাম ও ভুলতা হয়ে মদনপুর পর্যন্ত একটি প্রকল্পের প্রস্তাব কাতারকে দেওয়া হয়েছে।
৪৮ দশমিক ৭০ কিলোমিটার এই নতুন বাইপাসের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৪০ মিলিয়ন ডলার।
বৈঠকে এসব বিষয় উপস্থাপন করেন বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।