আজ নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস

আজ নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস

আজ সোমবার ২৮ মে, নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস। ‘নিরাপদ প্রসব, মায়ের অধিকার’ প্রতিপাদ্য নিয়ে ২০১২ সালের নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালন করা হচ্ছে।

পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর শব্দ ‘মা’|  বলা হয়ে থাকে একজন নারীর পূর্ণতা আসে মাতৃত্বে। বংশানুক্রম ধারা টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব প্রাকৃতিকভাবেই নারীর ওপর তার মাতৃত্বের মধ্য দিয়ে বর্তেছে। যদিও এখন পুরুষদের  পেটে বাচ্চা ধারণের ব্যপারে পরীক্ষা নিরীক্ষার কথা শোনা যাচ্ছে। তারপরও মাতৃত্বের জন্য মাই সবচেয়ে নিরাপদ ও স্বাভাবিক।

নিরাপদ মাতৃত্বের অধিকার একটি মানবাধিকার। তেমনি নিরাপদ প্রসবের সব ধরনের সুযোগ পাওয়াও একজন মায়ের অধিকার। একজন নাগরিক হিসেবে তিনি সেই অধিকার ভোগ করার ক্ষমতা রাখেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লক্ষ জীবিত জন্মে ১৯৪ জন ।  নবজাতকের মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ৩২ জন । তবে আশার কথা, ২০১১ সালে জাতিসংঘের ৬৬তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে মা ও শিশু স্বাস্থ্যে অসামান্য অবদানের জন্য ডিজিটাল হেল্থ ফর ডিজিটাল ডেভেলপমেন্ট শীর্ষক ‘সাউথ-সাউথ’ পুরস্কার প্রদান করা হয়।

১৯৮৭ সালে কেনিয়ার নাইরোবিতে উন্নয়ন-সহযোগীদের বৈঠকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিরাপদ মাতৃত্ব বিষয়ে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় । ১৯৯৭ সালে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন বিষয়টি পর্যালোচনা করে এ কার্যক্রমকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। যার মূল উদ্দেশ্য হলো নিরাপদ মাতৃত্বকে নারীর অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে মা ও নবজাতকের মৃত্যুহার কমিয়ে আনা।

অন্যান্য দেশ বিভিন্ন তারিখে দিবসটি পালন করে। ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের ঘোষণা দেয়। তখন থেকেই বাংলাদেশে এই দিবসটি পালন হয়ে আসছে।

রোববার নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী  দিয়েছেন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা, কর্মশালা, পুষ্টি প্রদর্শনী, গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টিকর খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
safe-mother
মাতৃত্বের অধিকারের ব্যপারে বলা যায়, একজন নারী কত দিন কোন ধরনের জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করবেন বা আদৌ ব্যবহার করবেন কি না এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার একমাত্র তারই। নারী আদৌ সন্তান নেবেন কি না বা কবে নেবেন, কজন নেবেন সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারও তিনি সংরক্ষণ করেন। একজন গর্ভবতী মহিলা গর্ভকালীন সেবা, নিরাপদ প্রসবের জন্য যাবতীয় সেবা এবং প্রসব-পরবর্তী সেবা পাওয়ার সব অধিকার রাখেন।

বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশের অধিকাংশ নারীই এখনো কোনো অধিকারই পুরোপুরি ভোগ করতে পারেন না। তাঁরা স্বামী বা বেশির ভাগ ক্ষেত্রে শাশুড়ির ইচ্ছা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হন। নিরাপদ শিশু জন্মদানের জন্য বাংলাদেশের সকল মা এখনো হাসপাতালের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। শহরাঞ্চলের মায়েদের হাসপাতাল সেবা গ্রহণের সুযোগ থাকলেও দরিদ্রসীমার নিচে বসবাসকারী গর্ভবতী মায়েদের কাছে এখনো তা অধরা। শহরের বস্তিবাসীদের কাছেও তা অনেকটাই অসম্ভব।

দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সরকারি হাসপাতাল,চিকিৎসা,পর্যাপ্ত ডাক্তার ,আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব এখনো প্রকট। মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্র,স্যাটেলাইট ক্লিনিক এবং বিভিন্ন এনজিও বা সংস্থার মা ও শিশু স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোর দশা এতোটাই খারাপ যে সার্বক্ষণিক ডাক্তারের অভাব খুবই প্রকট। তারপরও মাতৃত্ব নিরাপদ হবে , সবার মধ্যে সচেতনতা বাড়বে, নিরাপদ মাতৃত্ব নিশ্চিত হবে, সব শ্রেণীর মানুষ এই অধিকার পাবে, এই হোক এবারের নিরাপদ মাতৃত্ব দিবসের প্রত্যাশা।

বাংলাদেশ