সেতুর পাশাপাশি জাতীয় সড়ক ও মহাসড়ক ব্যবহার করলে সেখানেও টোল বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টোলের মাধ্যমে আদায় করা অর্থ মহাসড়কের উন্নয়নে ব্যবহার করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।
আজ মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে বর্তমান সরকারের ১৪তম জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এই নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। সভা শেষে প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশ গণমাধ্যমকর্মীদের সামনে তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশেও বড় বড় মহাসড়ক যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা রংপুর ও ঢাকা-ময়মনসিংহ এসব মহাসড়কে টোলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শুধু তাই নয়, টোলের মাধ্যমে আদায় করা টাকা রাখার জন্য একটি আলাদা অ্যাকাউন্ট করতে হবে। সেই টাকা দিয়ে মহাসড়কগুলো সংস্কার করতে হবে।
তিনি বলেন, ব্রিজে আমরা টোল নিই। সড়ক নয়, জাতীয় মহাসড়কগুলোতে থাকা (যেমন ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-খুলনা, ঢাকা-রংপুর জাতীয় মহাসড়ক) ব্রিজ ছাড়াও রাস্তার ওপর টোল বসানো হবে। সারাবিশ্বে তাই আছে। টোলে কত টাকা নির্ধারণ হবে, সেটা ঠিক করব এখন। কারণ এভাবে আর পারা যাবে না।
কিভাবে টোল আদায় হবে তা তুলে ধরে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, বিদেশে আমরা যেটা দেখেছি, সেকশন সেকশন হয়। ধরুন, ২০০ মাইল রাস্তা। প্রত্যেক ৫০ মাইল রাস্তায় একটা গেট থাকে। স্থানীয় গাড়িগুলো ১০ মাইল গিয়ে আরেক রাস্তায় গেলে টোল আসবে না। লং ডিসটেন্স ট্রাভেলারদের (দূরবর্তী যানবাহন) জন্য এটা হবে। তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত কাজ করবে আমাদের প্রকৌশলীরা।
প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের বিষয়ে তিনি জানান, যেকোনো উন্নয়ন প্রকল্পের প্রয়োজনীয় জনবল যেন আগে থেকেই নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়। তাদের প্রশিক্ষণসহ অন্যান্য কার্যক্রমের ব্যবস্থা প্রকল্পের মধ্যেই থাকতে হবে। যাতে প্রকল্প শুরু হলে জনবলের কারণে বাস্তবায়ন বাঁধাগ্রস্ত না হয়।
এদিকে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, একনেক সভায় মোট ১০টি প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ১০টি প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ হাজার ৩শ ২৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৯শ ৯৯ কোটি টাকা প্রকল্প সাহায্য, বাকি অর্থ সরকারি খাত থেকে সংস্থান করা হবে।
এক্সেল লোড স্থাপন প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১ হাজার ৬শ ৩০ কোটি টাকা। চলতি সময় থেকে ২০২২ সালের জুন মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় ৯০ সেটওয়ে ইন মোশন স্কেল, ৩১ সেট স্ট্যাটিকওয়ে ব্রিজ স্কেল স্থাপন ও কমিশনিং করা হবে।
সব ক্ষেত্রে নিরাপদ পানি ব্যবহার জনস্বাস্থ্য রক্ষার অন্যতম শর্ত। কিন্তু পরিবেশে রাসায়নিক দ্রব্য ও জীবাণুর কারণে বিশুদ্ধ ও নিরাপদ পানি এখন সবার জন্য প্রায় দুষ্প্রাপ্য। সেজন্য জনস্বাস্থ্যও মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন। তাই সারাদেশের মানুষের জন্য বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিত করতে ৫২টি নতুন পরীক্ষাগার স্থাপন করবে সরকার।
এ ছাড়া ‘পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্প; এবং বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের ‘কনভারশন অব ১৫০ মে. ও. সিলেট গ্যাস টারবাইন পাওয়ার প্ল্যান্ট টু ২২৫ মে. ও. কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট (২য় সংশোধিত)’ প্রকল্প একনেক সভায় অনুমোদন পায়।
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীরা।