মিন্নির জামিন আদেশের কপি পৌঁছাল বরগুনার আদালতে

মিন্নির জামিন আদেশের কপি পৌঁছাল বরগুনার আদালতে

বরগুনায় প্রকাশ্য দিবালোকে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফের স্ত্রী কারাবন্দি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে জামিন দেওয়া হাইকোর্টের আদেশের কপি বরগুনার আদালতে পৌঁছেছে। আজ মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে জামিনের আদেশের কপি পৌঁছায় সেখানে।

মিন্নির আইনজীবী মাহবুবুল বারী আসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মিন্নির হাইকোর্টের জামিনের আদেশের স্বাক্ষরিত কপি বরগুনার আদালতে এসে পৌঁছেছে। মিন্নির পক্ষে জামিননামা (বেলবন্ড) দাখিলের অনুরোধ করেছি। আদালতের বিচারক জামিননামা গ্রহণ করে কারা কর্তৃপক্ষকে রিলিজ অর্ডার পাঠাবেন। এরপর সব দাপ্তরিক কাজ শেষ করে আজকের মধ্যেই মিন্নিকে মুক্ত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছি আমরা।

গত ২৯ আগস্ট বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এক রায়ে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেন। এই রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি ১ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ মিন্নির জামিন স্থগিত চেয়ে চেম্বার বিচারপতির আদালতে আবেদন করে। গতকাল এ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। মিন্নির পক্ষে আইনজীবী ছিলেন অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন, জেসমিন সুলতানা, আইনুন্নাহার সিদ্দিকা, মাক্কিয়া ফাতেমা ইসলাম, জামিউল হক ফয়সল প্রমুখ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল জাহিদ সারোয়ার কাজল ও মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।

গতকাল শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে বলা হয়, এরই মধ্যে এই মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে। তাতে মিন্নিকে আসামি করা হয়েছে। তালিকায় ৭ নম্বরে মিন্নির নাম রয়েছে। তিনি ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মিন্নির জবানবন্দি পাঠ করেন।

রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের বিরোধিতা করে মিন্নির আইনজীবীরা বলেন, ১৯ বছরের একটি মেয়ে। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ১৬ জুলাই পুলিশ লাইনসে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে বেশ কয়েক ঘণ্টা রাখার পর রাতে ১০টার পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়। এর পরদিন ১৭ জুলাই তাঁকে আদালতে নিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হয়। রিমান্ডে নিয়ে পুলিশ লাইনসে রাখা হয়। আইনজীবীরা বলেন, আইন অনুযায়ী আইনজীবীর উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদ করার কথা। কিন্তু তা করা হয়নি। একজন তরুণীকে এত ঘণ্টা পুলিশের হেফাজতে রাখা হলে এমনিতেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কথা। তা ছাড়া তাঁকে আদালতে হাজির করার পর তিনি বলেছিলেন, ঘটনার সঙ্গে তিনি জড়িত নন। এমনকি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার পরও তিনি এই জবানবন্দি প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করেছেন। তাঁরা বলেন, ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দি দেখলে যে কেউ বুঝতে পারবে যে একজন আসামি স্বেচ্ছায় এত গুছিয়ে এত কথা বলতে পারে না।

গত ২৬ জুন সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে কুপিয়ে রিফাত শরীফকে হত্যা করে। এ ঘটনায় নিহত রিফাতের বাবা আব্দুল আলিম দুলাল শরীফ বাদী হয়ে মামলা করেন। এই মামলার মিন্নি, রিফাত ফরাজী, টিকটক হৃদয়সহ ১৫ জনকে আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া এজাহারভুক্ত নয়ন বন্ড ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছে। গত ১৬ জুলাই রাতে গ্রেপ্তার করে পরদিন ১৭ জুলাই মিন্নিকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয় পুলিশ। রিমান্ড শেষ হওয়ার আগেই গত ১৯ জুলাই ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন মিন্নি। এরপর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগের দিন ১৮ জুলাই দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করেন বরগুনার এসপি মারুফ হোসেন। এ অবস্থায় প্রথমে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ও পরে জেলা জজ আদালতে মিন্নির জামিনের আবেদন করা হলেও ওই দুই আদালতে তাঁর জামিনের আবেদন খারিজ হয়। এরপর হাইকোর্টে জামিনের আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট মিন্নির ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দির আগেই এসপির সংবাদ সম্মেলনে দেওয়া বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে আদালত মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেন।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর