উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে ভারতের বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্য আসামের চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হয়েছে।
এনডিটিভি জানিয়েছে, শনিবার সকালে কেন্দ্রীয় সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) বা নাগরিকপঞ্জিতে আসামে বসবাসরত ১৯ লাখের নাম নেই।
অর্থাৎ নাগরিকত্বের তালিকা থেকে এই ১৯ লাখ বাদ পড়লেন; যার একটি বড় অংশ মুসলমান বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি নেতারা আবার আশঙ্কা করছেন, বাঙালি অনেক হিন্দুর নামও তালিকা থেকে বাদ পড়েছে।
চূড়ান্ত তালিকায় আসামের নাগরিক হিসাবে ৩ কোটি ১১ লাখ ২১ হাজার ৪ জনের আবেদন গৃহীত হয়েছে; বাদ পড়েছেন ১৯ লাখ ৬ হাজার ৬৫৭ জন।
সকাল ১০টায় অনলাইনে চূড়ান্ত নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হয়। যাদের ইন্টারনেট সংযোগ নেই, তারা সরকার পরিচালিত সেবাকেন্দ্রে গিয়ে নিজেদের অবস্থা দেখতে পারছেন বলে আনন্দবাজার জানিয়েছে।
তালিকায় নাম না থাকলেই বিদেশি বলে চিহ্নিত কিংবা বন্দিশিবিরে নেওয়া হবে না বলে ইতোমধ্যে আশ্বস্ত করেছে আসাম রাজ্য সরকার।
তালিকায় যাদের নাম নেই, তাদের ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদন করতে বলা হয়েছে ১২০ দিনের মধ্যে। এই বিষয়ে শুনানির জন্য রাজ্যজুড়ে ১ হাজার ট্রাইব্যুনাল গড়ে তোলা হবে বলে জানানো হয়েছে।
ইতোমধ্যেই ১০০ ট্রাইব্যুনাল খোলা হয়েছে। আরও ২০০টি ট্রাইব্যুনাল সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই খোলার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
ট্রাইব্যুনালে মামলায় হেরে গেলে হাই কোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার সুযোগও রয়েছে।
তালিকা প্রকাশের পর বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কা করে গোটা আসামকে নিরাপত্তার বলয়ে মুড়ে ফেলা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে ৬০ হাজার পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। আরও ২ হাজার আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যও পাঠিয়েছে কেন্দ্র।
বৈধ নাগরিকদের চিহ্নিত করা এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের বাতিল করার লক্ষ্যে নতুন করে এই নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হল বলে সরকারের তরফে বলা হচ্ছে।
আসামে প্রথম নাগরিকপঞ্জি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫১ সালে। তবে প্রতিবেশী বাংলাদেশে থেকে বহু মানুষ অবৈধভাবে আসামে বসবাস করছে দাবি তুলে কয়েক দশক আগে আসামে ‘বাঙ্গালি খেদাও’ আন্দোলন শুরু হয়।
তার ধারাবাহিকতায় রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্কের মধ্যে অবৈধ বাংলাদেশিদের চিহ্নিত করে তাদের ফেরত পাঠানোর লক্ষ্যে চার বছর আগে আসাম সরকার নতুন নাগরিকপঞ্জি তৈরির কাজ শুরু করে।
নাগরিকপঞ্জিতে ঠাঁই পেতে হলে বাসিন্দাদের প্রমাণ করতে হয়, তারা বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরুর আগে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে রাজ্যে আবাস গেঁড়েছেন।
গত চার বছর ধরে সেখানকার বাসিন্দাদের নিজেদের নাগরিকত্ব প্রমাণের নানা কাগজ-পত্র হাতে এক দরজা থেকে অন্য দরজায় ছুটতে হয়েছে।
এরপর ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে প্রথম খসড়া নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ করা হয়। সেখানে মাত্র ১ কোটি ৮০ লাখ মানুষের ঠাঁই হয়। অথচ আবেদন করেছিল ৩ কোটি ২৯ লাখ মানুষ।
তা নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও বিক্ষোভ শুরু হলে ওই বছর জুলাই মাসে সংশোধিত খসড়া নাগরিকপঞ্জি প্রকাশ পায়। নতুন তালিকায় ২ কোটি ৮৯ লাখ মানুষের নাম ঠাঁই পেলেও বাদ পড়েন উত্তর-পূর্ব আসামের ৪০ লাখ বাসিন্দা।
তা নিয়েও বিতর্কের পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হল। এতে বাদ পড়াদের সংখ্যা কমে ১৯ লাখে দাঁড়াল।
নাগরিকপঞ্জিতে বাদ পড়াদের ‘অবৈধ বাংলাদেশি’ হিসেবে চিহ্নিত করে ভারত থেকে বের করে দেওয়া হতে পারে বলে আলোচনায় বাংলাদেশের ভেতরেও উদ্বেগ রয়েছে।
তবে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর তার সাম্প্রতিক ঢাকা সফরে বাংলাদেশকে আশ্বস্ত করে বলেন, “এটা একান্তই ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়।”