ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে গুচ্ছগ্রাম (ক্লাইমেট ভিকটিম রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্ট) প্রকল্পের আওতায় মুন্সীগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি গুচ্ছগ্রামে ভূমিহীনদের পুনর্বাসনের ফলে মানবেতর জীবন থেকে মুক্তি পেলেন ৫০ পরিবারের ২০৬ জন মানুষ। তবে জীবনযাপনের সুব্যবস্থা হলেও মুন্সীগঞ্জ জেলা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের তেমন কোনো ব্যবস্থা (সংযোগ সড়ক) নেই বলে অভিযোগ করেছেন গুচ্ছগ্রামের একাধিক বাসিন্দা। এ প্রকল্পে বসবাসরত ৫০ পরিবারের এখন প্রধান দাবি বিদ্যুৎ সংযোগ।
এছাড়া পুনর্বাসিতদের জন্য এখানে পানীয়জলের সুব্যবস্থা থাকলেও তারা জানেন না তা আর্সেনিকমুক্ত কিনা। নেই স্বাস্থ্য এবং পরিকল্পিত পরিবার সম্পর্কে তেমন কোনো সচেতনতাও।
তবুও হতদরিদ্র-ভূমিহীন ও হতাশাগ্রস্ত এসব মানুষকে সরকার পুনর্বাসন করায় ৫০ পরিবার পেয়েছে নতুন আলোর সন্ধান।
শনিবার ভূমি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার মোল্লাকান্দি গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পে সরেজমিনে গিয়ে এ চিত্র দেখা গেছে।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, মোল্লাকান্দির এ গুচ্ছগ্রামে নির্মিত ঘরের সংখ্যা ৫০টি। এখানে ৫০ পরিবারকে পুণর্বাসন করা হয়েছে।
এখানে রোপন করা হয়েছে ১০০০টি বৃক্ষ। এর মধ্যে ফলজ বৃক্ষ ৩৫০টি, বনজ ৬০০টি এবং ঔষধি বৃক্ষ ৫০টি।
এর মধ্যেই নির্মাণ করা হয়েছে একটি কমিউনিটি সেন্টারও। নলকূপের সংখ্যা ২৩টি। গুচ্ছগ্রামে বসবাসরতদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বিআরডিবি’র মাধ্যমে ফেরতযোগ্য ঋণ দেওয়া হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। এ ঋণ নিয়ে গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দারা হাঁস-মুরগি পালনসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এ সকল তথ্যেরও সত্যতা পাওয়া যায়।
তবে, মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্যমতে এখানকার ৯০ শতাংশ মানুষ পরিবার পরিকল্পনা গ্রহণকারী এবং শতকরা ৭৩ শতাংশ শিশু স্কুলগামী। এসব তথ্যের সঙ্গে গড়মিল দেখা গেছে।
গুচ্ছগ্রামের ১৫ নম্বর ঘরের বাসিন্দা নূর ইসলাম শিকদার। তার স্ত্রীর নাম লালভানু। এ দম্পতির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নূর ইসলাম শিকদারের বয়স ৬৫ বছর। তিনি কোনো বয়স্ক ভাতা পাননি। এক ছেলে কৃষি শ্রমিকের কাজ করেন। মেয়েটির বিয়ে দিয়েছেন একজন রিকশাচালকের সঙ্গে। তবে এখন তিনি অনেক ভালো আছেন। তার স্ত্রী লালভানু বলেন, ‘সরকারের কাছ থেকে বাড়ি পাইয়া আমরা ভালা আছি। ঋণ আইন্যা মুরগি পালতাছি। পুলাডা কাম কইরা সংসার চালায়।’
এ গ্রামের ১৩ নম্বর ঘরটি পেয়েছেন আব্দুল মালেক এবং তার স্ত্রী শাহিদা বেগম। তাদের যৌথভাবে মালিক করে জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। সংসারে তাদের ২ ছেলে। বাড়ি পাওয়ার আগে রাস্তার পাশে ঘর বানিয়ে বসবাস করতেন। ভাগ্য ভালো বলে তারা এ ঘর পেয়েছেন।
শাহিদা বেগম জানান, তার স্বামী রিকশা চালিয়ে সংসার চালান। তিনি পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তবে তিনি সংসারে সদস্য সংখ্যা আর বাড়াতে চান না। হাঁস মুরগি পালন করছেন। এছাড়া, ফলজ, বনজ এবং ঔষধি বৃক্ষ রোপন করেছেন তার বাড়ির আঙিনায়।
গুচ্ছগ্রামের আরেক বাসিন্দা শাহনাজ বেগম। তার স্বামীর নাম নাজমুল হাসান হাওলাদার। তিনি শ্রমজীবী। তিনি বলেন, ‘আগে মাইনষের বাড়িতে কাম করতাম। তাগো কত কথা হুনতে অইতো। অহন নিজের বাড়িতেই থাহি।’
গুচ্ছগ্রামে বসবাসকারী যুবক জুয়েল, আলম এবং মো. মোহসিন অভিযোগ করে বলেন, ‘সংযোগ সড়ক না থাকায় আমাদের যাতায়াতের অনেক সমস্যা হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এ সমস্যা আরো প্রকট হয়। বর্ষা মৌসুমে ট্রলারে করে একবার পার হতে ৫ টাকা করে ভাড়া লাগে। আমাদের দাবি সংযোগ সড়ক।’
গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প প্রসঙ্গে পরিচালক মো. হাসান ইমাম সাংবাদিকদের জানান, নারীর ক্ষমতায়নে এখানে কাজ করা হয়েছে। গুচ্ছগ্রাম শব্দটি প্রধানমন্ত্রী চয়ন করেছেন। এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে ২০০৯ সালে। এ গ্রামে বসবাসের সুযোগ পেয়ে এসব মানুষের শহরমুখী প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। সংযোগ সড়কের একটু সমস্যা রয়েছে। যার কারণ হচ্ছে, জায়গা নেই। বিদ্যুৎ আমাদের প্রকল্পের আওতার বিষয় নয়। ‘রজত রেখা’ নদীর একপাশে টঙ্গীবাড়ি উপজেলা, অন্যপাশে সদর উপজেলা। এ কারণেই সমস্যাটির সৃষ্টি হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, জার্মানের অর্থায়নে এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
গুচ্ছগ্রাম পরিদর্শনে আরও উপস্থিত ছিলেন মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক গোলাম সারওয়ার ভূঁইয়া, মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহানা ইয়াসমিন লিলি, অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. আব্দুল হাই ও আব্দুর রহমান প্রমুখ।