ভারতের অর্থনীতিতে অশনি সঙ্কেত, চলতি ত্রৈমাসিকে জিডিপির রেকর্ড পতন

ভারতের অর্থনীতিতে অশনি সঙ্কেত, চলতি ত্রৈমাসিকে জিডিপির রেকর্ড পতন

শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। তার পরেও সত্য এড়ানো গেল না। ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি অনেকটাই স্থিতিশীল বলে দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতবাসীকে যা বোঝানোর আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, শুক্রবার সেই তত্ত্ব থেকেই ঘুরে গেলেন।

সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে কার্যত স্বীকার করলেন, আর্থিক বৃদ্ধির হার নিম্নমুখীই শুধু নয়, গত কয়েক বছরে কমেছে রেকর্ড পরিমাণ। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে জিডিপির হার ছিল ছয় দশমিক আট শতাংশ। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম ত্রৈমাসিকে সেই হার পাঁচ দশমিক আট শতাংশ এবং চলতি ত্রৈমাসিকে তা নেমে দাঁড়িয়েছে মাত্র পাঁচ শতাংশে। যার ফলে রীতিমতো অশনি সঙ্কেত দেখছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ।

ভারতের আর্থিক পরিস্থিতি ভালো, আর্থিক বৃদ্ধির হারও ভালো, কমছে রাজস্ব ঘাটতির পরিমাণ, বাড়ছে অনাদায়ী ঋণ; অর্থনীতি নিয়ে এমনই নানা ভরসা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন দ্বিতীয়বার মোদি মন্ত্রিসভা গঠনের পর অন্যতম ভরসাযোগ্য অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।

কিন্তু বাস্তব চিত্র যে অন্য, তা খানিকটা আঁচ করা গিয়েছিল এ সপ্তাহের গোড়ায়। রিজার্ভ ব্যাংক এক লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রকে অনুদান দেওয়ায় সেটা বোঝা যায়।

রাজকোষের প্রকৃত অবস্থা, সঙ্কেত আেএরা ছিল। গাড়িশিল্পের করুণ দশা, বিভিন্ন সংস্থা থেকে বৃহৎ সংখ্যক কর্মী ছাঁটাই থেকেই একটু একটু করে স্পষ্ট হচ্ছিল, আর্থিক পরিস্থিতি মোটেই ভালো নয়। তার ওপর চলতি মাসের শুরুতেই রিজার্ভ ব্যাংকের সিদ্ধান্তে রেপো রেট কমে যায়। তার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রাও কমানো হয়। সাত থেকে কমিয়ে তা ছয় দশমিক আট শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়।

সম্প্রতি অর্থনৈতিক এক সমীক্ষায় ইঙ্গিত ছিল, চলতি ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার কমতে পারে সামান্য। কিন্তু পাঁচ দশমিক আট থেকে একেবারে হু হু করে পাঁচে নেমে যাওয়াটা অর্থনীতিবিদদের কাছেও বড়সড় ধাক্কার। এর আগে ২০১৩ সালে ভারতের জিডিপি বৃদ্ধির হার উদ্বেগজনকভাবে কমে দাঁড়িয়েছিল চার দশমিক তিন শতাংশে।

মোদির শাসনামলে ভারতের অর্থনীতির ছিদ্রগুলো চোখে পড়ছিল একটু একটু করে। অর্থনীতির নানা মারপ্যাঁচের কথা বলে পরিস্থিতি ততটা বেহাল নয় বলে বারবারই তুলে ধরার চেষ্টা করে গেছেন তখনকার অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। এমনকি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও তেমনটাই দাবি করেছিলেন। তাদেরর দেখানো পথেই পা বাড়িয়েছিলেন এখনকার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ।

তবে শুক্রবারের রিপোর্ট দেখে তিনি নিজেও স্বীকার করেন, পরিস্থিতি সত্যিই আশঙ্কাজনক। কীভাবে এই সমস্যা সমাধান করা যায়, মোদি সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে তা এক বড় চ্যালেঞ্জ তো বটেই।

আন্তর্জাতিক