বকেয়া না পেয়েই শুটিং শুরু

বকেয়া না পেয়েই শুটিং শুরু

ভারতের কলকাতার সিরিয়াল পাড়ার খবর, প্রযোজক সুব্রত রায় আর তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সুব্রত রায় প্রোডাকশনসের কাছে ১৪ কোটি রুপি বকেয়া পাবেন শিল্পী ও কলাকুশলীরা। কিন্তু কবে এবং কীভাবে এই বকেয়া পরিশোধ করা হবে, সে ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেননি। এ কারণেই শুটিং থেকে সবাই সরে দাঁড়ান। এর ফলে জি বাংলার ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’ ও ‘সৌদামিনীর সংসার’ আর স্টার জলসার ‘দেবী চৌধুরাণী’ এবং আরও কয়েকটি সিরিয়ালের নিয়মিত সম্প্রচার থেমে যায়। দর্শকদের কাছে তা আড়াল করার জন্য ওই সময় সংশ্লিষ্ট সিরিয়ালের পুরোনো পর্ব কিংবা অন্য সিরিয়াল এক ঘণ্টা প্রচার করা হয়। কিন্তু তা সহজভাবে নিতে পারেননি সাধারণ দর্শক। ফলে এসব সিরিয়ালের টিআরপি দ্রুত হ্রাস পায়। সাত দিন প্রযোজক আর শিল্পী ও কলাকুশলীদের মধ্যে টানাপোড়েনের পর শেষ পর্যন্ত ক্যামেরার সামনে ফিরে এসেছেন সবাই। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে আবার শুটিং শুরু হয়েছে। তবে সংবাদমাধ্যমকে অনেকেই বলেছেন, দর্শকদের কথা ভেবে তাঁরা শুটিং ফ্লোরে ফিরে এসেছেন।

বকেয়া আদায়ের জন্য প্রযোজক সুব্রত রায়ের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করেছে অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন আর্টিস্ট ফোরাম। শেষ পর্যন্ত তাদের বৈঠকে যুক্ত হয় কয়েকটি টিভি চ্যানেলের কর্তৃপক্ষ। চ্যানেলগুলো থেকে বকেয়া পরিশোধের ব্যাপারে সহযোগিতা করার আশ্বাস দেওয়া হয়। আলোচনার সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, জুলাই মাস পর্যন্ত সব বকেয়া আগামী ১৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। আগস্ট মাসের বকেয়া পরিশোধের শেষ সময় ২২ সেপ্টেম্বর। আর ১৮ অক্টোবরের মধ্যে সেপ্টেম্বর মাসের পারিশ্রমিক পরিশোধ করতে হবে।

আর্টিস্ট ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলগুলোর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা শিল্পীদের পাশে আছেন। বকেয়া পরিশোধের জন্য যে সময়সীমা চূড়ান্ত হয়েছে, সেই সময়ের মধ্যে যেন প্রযোজক সম্পূর্ণ বকেয়া পরিশোধ করেন, তা চ্যানেল কর্তৃপক্ষ খেয়াল রাখবে।’ এর আগে আর্টিস্ট ফোরামের পক্ষ থেকে সপ্তর্ষি রায় বলেছেন, ‘সমস্যা সমাধানের পথে।’

এদিকে ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কারস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার সভাপতি স্বরূপ বিশ্বাস বলেছেন, ‘বকেয়া পারিশ্রমিকের বিষয়ে ফেডারেশনের কাছে কোনো অভিযোগ জমা পড়েনি। যাঁরা পারিশ্রমিক পাননি বলছেন, তাঁদের ফেডারেশনের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করছি।’ তবে পরিচালকদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এরই মধ্যে বকেয়া পাওনা আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফেডারেশন অব সিনে টেকনিশিয়ানস অ্যান্ড ওয়ার্কারস অব ইস্টার্ন ইন্ডিয়ার কাছে তাঁরা লিখিত আবেদন করেছেন।

সুব্রত রায় প্রোডাকশনসের তিনটি সিরিয়াল হলো ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’, ‘দেবী চৌধুরাণী’ এবং ‘মা মনসা’। এ ছাড়া ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’ এবং ‘সৌদামিনীর সংসার’ সিরিয়াল দুটির সঙ্গে সুব্রত রায় জড়িত ছিলেন। কিন্তু পরে তিনি সরে যান। এখন ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’ সিরিয়ালের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সুরিন্দর ফিল্মস আর ‘সৌদামিনীর সংসার’ সিরিয়ালের দায়িত্বে আছে ম্যাক্স এন্টারটেইনমেন্ট।

এর আগে ‘আমি সিরাজের বেগম’, ‘জয় বাবা লোকনাথ’, ‘মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য’, ‘খনার বচন’ ও ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’র ইউনিটে যে শিল্পী ও টেকনিশিয়ানরা কাজ করেছেন, তাঁরা সিরিয়ালগুলোর প্রযোজক রানা সরকার আর তাঁর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান দাগ ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার কাছ থেকে পারিশ্রমিকের টাকা পাননি। এই পাঁচটি সিরিয়াল থেকে শিল্পীদের বকেয়া ছিল প্রায় তিন কোটি রুপি আর টেকনিশিয়ানদের পাঁচ কোটি রুপি। এই বকেয়া পারিশ্রমিকের কারণেই গত এপ্রিল থেকে বন্ধ হয়ে যায় এই পাঁচ সিরিয়ালের কাজ। বকেয়া আদায়ের জন্য আর্টিস্টস ফোরাম ধর্মঘটের হুমকি দেয়। এরপর টিভি চ্যানেল আর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে কিছু বকেয়া পারিশ্রমিক আদায় করা সম্ভব হয়।

এবার বকেয়া পারিশ্রমিক আদায়ের জন্য গত শুক্রবার ভারতের বাংলা টিভি চ্যানেলে এ সময়ের জনপ্রিয় সিরিয়াল ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’, ‘দেবী চৌধুরাণী’ আর ‘সৌদামিনীর সংসার’-এর শুটিং বন্ধ রাখা হয়। এই তিন সিরিয়ালের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান সুব্রত রায় প্রোডাকশনস। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে অনেক দিন থেকেই শিল্পী ও কলাকুশলীদের পারিশ্রমিক বকেয়া রাখার অভিযোগ রয়েছে।

বিনোদন