মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্তের অগ্রগতি বা গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে গণমাধ্যমে কতটুকু প্রচার বা প্রকাশ করা যাবে, সেই বিষয়ে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশ মহাপরিদর্শকের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির জামিন দেওয়া রায়ে বৃহস্পতিবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই নির্দেশ দেন।
আজ জামিনের রায়ের সময় হাইকোর্ট বলেন, ‘আসামি আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি রিমান্ডে থাকা অবস্থায় বরগুনা জেলার পুলিশ সুপার জনাব মারুফ হোসেন গণমাধ্যমের সম্মুখিন হন। মিন্নি দোষ স্বীকার করেছেন মর্মে যে বক্তব্য তিনি দিয়েছেন, তা শুধু অযাচিত, অনাকাঙ্ক্ষিত নয়, বরং সুষ্ঠ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের পরিপন্থি।’
আদালত আরো বলেন, ‘পরিস্থিতি ও বাস্তবতা যাই হোক না কেন, পুলিশ সুপারের মত দায়িত্বশীল পদে থেকে মারুফ হোসেন যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা একদিকে যেমন জনমনে নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, তেমনি তিনি তার দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। যা দুঃখ এবং হতাশাজনক। উচ্চ পর্যায়ের একজন পুলিশ কর্মকর্তার নিকট হতে এ ধরনের কাজ প্রত্যাশিত বা কাম্য নয়। ভবিষ্যতে দায়িত্ব পালনে তিনি আরও সতর্কতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দেবেন এটাই কাম্য।’
হাইকোর্ট বলেন. ‘মামলাটির তদন্ত কাজ যেহেতু এখনও চলছে, সে কারণে এ মুহূর্তে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে আদালত বিরত থাকছে। তবে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শককে সময়মত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’
আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলেন: ‘ইদানিং প্রায়শ লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, আলোচিত ঘটনার তদন্তকালীন সময়ে পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তদের বিষয়ে এবং তদন্ত সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিং করা হয়ে থাকে। গ্রেপ্তারকৃত সন্দেহভাজন বা অভিযুক্তদের কোনো নিয়মনীতি ছাড়াই গণমাধ্যমের সামনে হাজির করা হয়, যা অনেক প্রশ্নের উদ্রেক করে। যদিও এ বিষয়ে অত্র আদালতে একটি রায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল।
‘আমাদের সকলকেই মনে রাখতে হবে যে, যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো অভিযুক্তের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমাণের মাধ্যমে অভিযোগ প্রমাণিত না হচ্ছে, ততক্ষণ বলা যাবে না সে অপরাধী বা অপরাধ করেছে। আর তদন্ত বা বিচার পর্যায়ে এমনভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করা উচিৎ নয় যেন মনে হয় অভিযুক্ত ব্যক্তি অপরাধী। সেই কারণে মামলার তদন্ত পর্যায়ে তদন্তের অগ্রগতি বা গ্রেপ্তারকৃতদের বিষয়ে গণমাধ্যমে কতটুকু বিষয় প্রচার বা প্রকাশ করা যাবে, সেই বিষয়ে একটি নীতিমালা করা বাঞ্ছনীয়। এই নীতিমালা প্রণয়ন ও প্রচারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পুলিশের মহাপরিদর্শককে নির্দেশ প্রদান করা হল।’