সাম্য মানবতাবাদ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে সমৃদ্ধশালী দেশ ও সমাজ বিনির্মাণে সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানানোর মধ্য দিয়ে পালিত হচ্ছে সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৩তম মৃত্যুবার্ষিকী।
১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসের এদিনে শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (সাবেক পিজি হাসপাতাল) শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম। কবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হয়। এখানেই তিনি চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন।
এ উপলক্ষ্যে আজ বাদ ফজর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদুল জামিয়া’য় কোরানখানি অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ৭টায় কলাভবন প্রাঙ্গনস্থ অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ জমায়েত হন। সেখান থেকে তাঁরা সকাল সোয়া ৭টায় শোভাযাত্রা সহকারে কবির সমাধিতে গমন, পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ করেন।
পরে কবির সমাধি প্রাঙ্গণে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এক আলোচনা সভা ও সংগীতানুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য রাখেন নজরুল গবেষক ও জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
উপাচার্য জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে বলেন, তিনি ছিলেন মানবতার কবি, সাম্যের কবি, অসাম্প্রদায়িক চেতনার কবি, জগরণের কবি। তাঁর বহুমাত্রিক সাহিত্য প্রতিভার মর্মমূলে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রস্ফুটিত হয়েছে। বাঙালি সমাজ ও সংস্কৃতি বিনির্মাণে তাঁর সৃষ্টিকর্ম সবসময় আমাদের প্রেরণার উৎস।
তিনি বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কবিকে ভীষণ ভালবাসতেন। তাই বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরে কবি নজরুল ইসলামকে ভারত থেকে বাংলাদেশে এনে জাতীয় কবির সম্মানে ভূষিত করেন এবং তাঁর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।
বাংলা একাডেমি কবির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে একক বত্তৃতার আয়োজন করে । বিকাল ৪টায় এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ প্রাঙ্গণে কবির সমাধিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করে কবির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। এসময় তারা ফাতেহা পাঠ ও দোয়া অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহন করেন।
বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের নেতৃবৃন্দ সকালে কবির সমাধিসৌধে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন। পরে সংগঠনের গুলশান কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি সারাহ বেগম কবরী’র সভাপতিত্বে আলোচনা সভা, নজরুল সঙ্গীত, কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্রোহী কবি হিসেবে পরিচিত হলেও কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন একাধারে কবি, সংগীতজ্ঞ, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, সাংবাদিক, চলচ্চিত্রকার, গায়ক ও অভিনেতা। তিনি বৈচিত্র্যময় অসংখ্য রাগ-রাগিনী সৃষ্টি করে বাংলা সঙ্গীত জগতকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছেন।
প্রেম, দ্রোহ, সাম্যবাদ ও জাগরণের কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবিতা ও গান শোষণ ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে সংগ্রামে জাতিকে উদ্বুদ্ধ করেছে। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর গান ও কবিতা ছিল প্রেরণার উৎস।
নজরুলের কবিতা, গান ও সাহিত্য কর্ম বাংলা সাহিত্যে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক চেতনার পথিকৃৎ লেখক। তাঁর লেখনি জাতীয় জীবনে অসাম্প্রদায়িক চেতনা বিকাশে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। তাঁর কবিতা ও গান মানুষকে যুগে যুগে শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির পথ দেখিয়ে চলছে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর পরই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে স্বপরিবারে সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বাংলাদেশে তাঁর বসবাসের ব্যবস্থা করেন। ধানমন্ডিতে কবির জন্য একটি বাড়ি প্রদান করেন।