পুঁজিবাজারে অস্থিরতার মধ্যে এক পর্যায়ে এ নিয়ে কথা বলা ছেড়ে দেওয়া অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত দীর্ঘদিন পর মুখ খুলেছেন।
বুধবার এক বৈঠকে তিনি বলেছেন, পুঁজিবাজারে এখনকার সূচকের ওঠানামা অযৌক্তিক।
“আমি আশা করি, স্টক মার্কেট যৌক্তিক আচরণ করবে। কিন্তু বর্তমানে যেটা করছে সেটা অযৌক্তিক। একদিন উঠছে তো আরেকদিন নামছে,” বলেন তিনি।
গত বছর দেশের পুঁজিবাজারে অস্থিরতার মধ্যে বিনিয়োগকারীদের নিয়ে মন্তব্যের জন্য সমালোনার মুখে পড়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। ব্যক্তি শ্রেণীর বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সরকারি দলের সংসদ সদস্যরাও তার সমলোচনায় মুখর হন।
এরপর গত বছরের ১৯ জুন মুহিত এক সভায় বলেছিলেন, “আমি এ নিয়ে কোনো কথা বলতে চাই না। কারণ আমি কথা বললেই বাজার পড়ে।”
পুঁজিবাজারে সূচকের সাম্প্রতিক ওঠানামার ‘সুরাহা’ করতে হবে বলেও বুধবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বলেন অর্থমন্ত্রী।
গত প্রায় একমাস ধরেই পুঁজিবাজারে নিুমুখী প্রবণতা রয়েছে। গত দুদিনে ডিএসই সাধারণ সূচক ১৯৪ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮২৮ পয়েন্টে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে এসইসি কাজ করছে, পাশাপাশি সরকারের সর্বাত্মক সহযোহিতা অব্যাহত রয়েছে।”
সচিবালয়ের এই বৈঠকে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) চেয়ারম্যান এম খায়রুল হোসেনও ছিলেন।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ডিএসই সভাপতি রকিবুর রহমান বলেন, “বাজার এখন চলছে খুচরো (রিটেইল) বিনিয়োগকারীদের দিয়ে। শুধু রিটেইলারদের দিয়ে বাজার স্থিতিশীল করা যাবে না।”
“বাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ একদম কমে গেছে। ব্যাংকগুলো তাদের মোট দায়ের ১০ শতাংশ পর্যন্ত বিনিয়োগ করতে পারলেও বর্তমানে তাদের বিনিয়োগ ২ শতাংশেরও কম। মার্চেন্ট ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলো তাদের দায়িত্ব পালন করছে না তা খতিয়ে দেখতে হবে,” বলেন তিনি।
প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, “পুঁজিবাজার কখনো রিটেইলারনির্ভর হতে পারে না। এদের কমিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।”
ব্যাংক কোম্পানি আইনের সংশোধনের দিকে ইঙ্গিত বরে রকিবুর রহমান বলেন, “বর্তমানে পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর যে বিনিয়োগসীমা রয়েছে, আইন পরিবর্তন করার সময় সেই বিনিয়োগসীমা যাতে কমে না যায় সে দিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে।”
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রশ্নের জবাবে ডিএসই সভাপতি বলেন, “মার্চেন্ট ব্যাংক ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলো বাজারে যদি যথাযথ দায়িত্ব পালন না করে তাহলে তাদের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে।”
এদিকে এসইসি চেয়ারম্যান বলেছেন, উদ্যোক্তা পরিচালকদের রিট আবেদনের কারণে বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
বৈঠকে তিনি বলেন, “এখন বিনিয়োগকারীদের আত্মবিশ্বাসে কিছুটা ঘাটতি আছে। রায়ের কপি পেলে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো। আশা করি বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে।”
উদ্যোক্তা পরিচালকদের ন্যূনতম শেয়ার ধারণের বিষয়ে এসইসির একটি আদেশের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা তিনটি আবেদন সোমবার খারিজ করে দিয়েছে উচ্চ আদালত।
এরপর মঙ্গলবার এসইসির আইনের একটি ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে আরো পাঁচটি আবেদন করা হলে বিচারক তা গ্রহন না করে সিদ্ধান্তের জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে পাঠিয়েছেন।
বৈঠক থেকে বেরিয়ে খায়রুল হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, “নতুন করে কয়েকটি রিটের কারণে গত দুদিনে সূচক কমে ৫০০০ পয়েন্টের নিচে চলে এসেছে।”
“এটা আত্মবিশ্বাসে ঘাটতির কারণেই হয়েছে। আমরা সার্ভিল্যান্সে দেখেছি, অ্যাগ্রেসিভ সেল দিয়ে বাজার ফেলা হচ্ছে না,” বলেন তিনি।
অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ডিএসইর পক্ষ থেকে আগামী বাজেটে পুঁজিবাজারের ‘স্বার্থে’ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে কর কমানোর সুপারিশ করা হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, “পুঁজিবাজারে যেসব সুযোগ-সুবিধা দেওয়া আছে তা অব্যাহত থাকবে।”
ডিএসইর পরে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) কর্মকর্তারাও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে বাজেটের বিষয়ে কয়েকটি ক্ষেত্রে কর কমানোর প্রস্তাব দেন।