বাংলাদেশে প্রাথমিকভাবে ১০ কোটি থেকে সাড়ে ১২ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসাগ্রুপ সাহারা।
সাহারা ইন্ডিয়া পরিবারের চেয়ারম্যান সুব্রত রায় সাহারা শুক্রবার রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘সাহারা মাতৃভূমি উন্নয়ন করপোরেশন’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বাংলাদেশে এই বিনিয়োগ করা হবে।
সংবাদ সম্মেলনে সুব্রত রায় বলেন, বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য অনেকগুলো প্রকল্পের পরিকল্পনা তাদের রয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে সাহারা বাংলাদেশে ১০ কোটি থেকে সাড়ে ১২ কোটি ডলার বিনিয়োগে আগ্রহী।
বাংলাদেশে সাহারা গ্র“পের ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সাহারা মাতৃভূমি উন্নয়ন করপোরেশনের নিবন্ধনের কাজ শুরু হয়েছে বলে জানান সুব্রত রায়।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে শেখ ফজলে হোসেন ফাহিমকে এ কোম্পানির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে ব্যবসায়িক কার্যক্রমে ফাহিম আমাদের পথপ্রদর্শক হবেন।”
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগনে শেখ সেলিম শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাহারা ইন্ডিয়া পরিবারের কর্ণধারকে স্বাগত জানিয়েছিলেন।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে সুব্রত রায় ২০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা পৌঁছান। আবাসন খাতে বিনিয়োগের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বুধবার একটি সমঝোতা স্মারকে সই করেন তিনি।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভবনা নিয়ে সাহারার একটি দল এক বছর ধরে কাজ করছেন জানিয়ে সুব্রত রায় বলেন, “আমরা ইতিমধ্যে জরিপ চালিয়েছি এবং খুব সাবধানে এগোচ্ছি।”
বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত ৪০ বছরে ভারত থেকে ৬০ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ বাংলাদেশে এসেছে, যার বেশিরভাগই হয়েছে টেলিকম খাতে।
সাহারা গ্রুপ বাংলাদেশে ৮০ হাজার কোটি রুপি বিনিয়োগ করবে- ভারতীয় গণমাধ্যমে আসা এমন খবরের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুব্রত রায় বলেন, “এটি সম্পূর্ণ ভুল তথ্য। এমন কোনো পরিকল্পনা তাদের আপাতত নেই।”
বাংলাদেশে সাহারার বিনিয়োগ সম্ভাবনা নিয়ে অনেক রাজনৈতিক আলোচনাও হচ্ছে- এমন মন্তব্য করে সুব্রত বলেন, তারা এখানে ব্যবসা করতে আগ্রহী। এর মধ্যে রাজনৈতিক আলোচনা উঠলে ব্যবসায়ীরা উৎসাহ হারিয়ে ফেলবেন।
সাহারার সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের করা সমঝোতা স্মারকে বলা হয়, ঢাকার আশেপাশে কয়েকটি উপশহর গড়ে তোলার জন্য সরকার উপযুক্ত নির্মাতা প্রতিষ্ঠান খুঁজছে এবং সাহারা পরিবার এ কাজ করার জন্য যোগ্য প্রতিষ্ঠান। কম আয়ের মানুষদের জন্য বাসস্থান নির্মাণে দুই পক্ষ একে অপরকে সহযোগিতা করবে।
সাহারা ঢাকায় একটি কার্যালয় খোলার মাধ্যমে প্রস্তাব তৈরি করে সরকারকে জমা দেবে বলেও এতে উল্লেখ করা হয়।
ভারতীয় এ পুঁজিপতি বলেন, বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ও তালিকাবহির্ভূত ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের জন্য নির্ধারিত করের মধ্যে পার্থক্য অনেক বেশি।
তিনি বলেন, “আমরা চাইলেও তিন বছরের আগে তালিকাভুক্ত হতে পারবো না। এ সময়ে ৩৭ শতাংশ কর দিতে বাধ্য হবো যেটি অনেক বেশি।”
বিনিয়োগ বোর্ডের প্রধান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলো ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর দিয়ে থাকে। তবে তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানিগুলোকে ৩৭ দশমিক ৫ শতাংশ কর দিতে হয়।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের পৃষ্ঠপোষকতা করার ইঙ্গিতও দেন সুব্রত রায়।
“ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সিতে সাহারার লোগো শোভা পাচ্ছে। আমি কোনো ঘোষণা দিতে চাই না, তবে একই লোগো বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের জার্সিতেও দেখতে পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
১৯৭৮ সালে সাহারা ইন্ডিয়া পরিবার প্রতিষ্ঠা করেন সুব্রত রায় সাহারা, যার আদি বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে। মহারাষ্ট্রে অ্যাম্বি ভ্যালি নামের আবাসন প্রকল্প গড়ে তুলে সুনাম অর্জন করে এই প্রতিষ্ঠান।
আবাসন প্রকল্প দিয়ে শুরু হলেও এখন অর্থনৈতিক সেবা, জীবন বীমা, মিউচুয়াল ফান্ড, আবাসিক খাতে অর্থ যোগান, অবকাঠামো, সংবাদপত্র ও টেলিভিশন, বিনোদন, চলচ্চিত্র প্রযোজনা, স্বাস্থ্যসেবা, পণ্য উৎপাদন, ক্রীড়া এবং তথ্য প্রযুক্তি খাতে সাহারার ব্যবসা ছড়িয়ে আছে।
টাইম ম্যাগাজিনের বিচারে, ভারতীয় রেলওয়ের পর জনশক্তির দিক দিয়ে সাহারা গ্রুপ দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিষ্ঠান।