এক পরমাণু শীতকাল কি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে?

এক পরমাণু শীতকাল কি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে?

রাশিয়ার (তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন) সঙ্গে তিন দশক আগে করা একটি গুরুত্বপূর্ণ পারমাণবিক চুক্তি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সরে এসছে যুক্তরাষ্ট্র। তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগান ও সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্ভাচেভ ১৯৮৭ সালে স্নায়ুযুদ্ধ নিরসনে চুক্তিটি করেন।

মস্কো বারবার চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করছে বলে অভিযোগ তুলে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। এ কারণেই যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি থেকে সরে আসে। ধারণা করা হচ্ছে, চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণাকে রাশিয়ার সঙ্গে নতুন করে অস্ত্র প্রতিযোগিতায় যাওয়ার পরোক্ষ ঘোষণই দিল যুক্তরাষ্ট্র।

এদিকে পরমাণু শক্তিশালী দু’টি দেশের মধ্যে যদি কোনো কারণে উত্তেজনা বেড়ে যায় তাহলে সারাবিশ্ব মুহূর্তের মধ্যে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। বিশ্বের পারমাণবিক শীতও নেমে আসতে পারে বলে একটি নতুন গবেষণায় বলা হচ্ছে। জার্নাল অব জিওফিজিকাল রিসার্চ: অ্যাটমোস্ফিয়ারসে গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়েছে।

গবেষণাটি ২০০৭ সালের একটি জলবায়ু মডেলের সঙ্গে তুলনা করে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সেখানে বলা হয়, যদি কোনো কারণে এই পরাশক্তি দুটি পরমাণু যুদ্ধে জড়িয়ে পরে আর প্রচুর পরিমাণে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়; তাহলে পারমাণবিক বিস্ফোরণে উত্পন্ন ধোঁয়ায় সারাবিশ্ব যথেষ্ট পরিমাণে শীতল হয়ে যাবে। বিস্ফোরণের ফলে ধোঁয়া সূর্যকে ঢেকে রাখবে। বছরের পর বছর ধরে এই গ্রহে সূর্যের আলো এসে পৌঁছবে না।

২০০৭ সালের একটি জলবায়ু মডেল ব্যবহারের পরও আরো একটি নতুন মডেল ব্যবহার করে গবেষণায় একই ফলাফল পাওয়া যায়। গবেষণায় কমিউনিটি আর্থ সিস্টেম মডেল-হোল অ্যাটমোস্ফিয়ার কমিউনিটি ক্লাইমেট মডেল-ভার্সন ফোর নামে একটি মডেল ব্যবহার করা হয়। সেই মডেলে দেখানো হয়, পারমাণবিক যুদ্ধের ফলে সারা বিশ্বে শীতল অবস্থা তৈরি হতে পারে। এতে করে বৈশ্বিক তাপমাত্রা মারাত্মকভাবে হ্রাস পেতে পারে।

গবেষণায় বলা হয়, যুদ্ধের কয়েক মাস পর ৩০ শতাংশ বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমে যাবে। আর যদি এ অবস্থা চলতে থাকে তাহলে সারা বিশ্বে ধোঁয়া দীর্ঘদিন ঠিকে থাকবে। এর ফলে শীতের মাত্রা বেড়ে যাবে। নেমে আসবে পারমাণবিক শীত (নিউক্লিয়ার উইন্টার)। এর ফলে পৃথিবীতে কোনো মানুষ ঠিকে থাকতে পারবে না।

গবেষণার বলা হয়, এ ধরনের যুদ্ধের ফল মানব জাতির জন্য ভয়বাহ পরিস্থিতি ডেকে আনতে পারে। মানব জাতির বিলুপ্তি ঘটতে পারে। অতীত তত্ত্বগুলো এমনই বার্তা দেয় বলে গবেষকরা জানান।

পারমাণবিক শীত বা নিউক্লিয়ার উইন্টার কী?

নিউক্লিয়ার উইন্টার বা পারমাণবিক শীত ভলকানিক উইন্টারের মতোই। খুব শক্তিশালী আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের ফলে অনেক ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছাই ও বস্তুকণা তৈরি হয় যা বায়ুমণ্ডলে ভাসতে থাকে ও সূর্যালোক প্রতিফলিত করে বাইরের দিকে পাঠিয়ে দেয়। ফলে পৃথিবী ঠাণ্ডা হয়ে আসে। ইতিহাস থেকে দেখা যায় এসব ভলকানিক উইন্টার কয়েক বছর অব্যহত থাকে। এমনকি পৃথিবীতে মানুষের আগমনের আগে কয়েক বার মাস প্রাণীজগতের বিলুপ্তির পেছনে কিছুটা হলেও এসব ভলকানিক উইন্টারের হাত ছিলো। তারা পৃথিবীকে সম্ভবত কয়েকশ বছর পর্যন্ত ঠাণ্ডা করে রাখতো।

অনেকটা এই ধরনেরই হবে নিউক্লিয়ার উইন্টার। তবে এখানে বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ছাইগুলো হবে রেডিওঅ্যাকটিভ। এই ছাই নিঃশ্বাসের সাঙ্গে বেশি পরিমাণে গ্রহণ করলে হবে মৃত্যু।

এমন একটি নিউক্লিয়ার উইন্টার নিয়ে আসার জন্য রাশিয়া ও যুক্তরাশষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ যথেষ্ট। এর ফলে সূর্যের প্রায় সবটা আলো থেকে বঞ্চিত হবে পৃথিবী, কয়েক বছরের জন্য। ফলে অন্ধকারে ঢেকে যাবে এই গ্রহ। এতে বন্ধ হয়ে যাবে জীবন ধারণের অপরিহার্য একটি প্রক্রিয়া, আলোকসংশ্লেষণ। বেশিরভাগ উদ্ভিদ মারা যাবে নিউক্লিয়ার উইন্টারে। আমাদের মানব প্রজাতিটিও বিলুপ্ত হয়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা আছে।

সূত্র: ফক্সনিউজ।

আন্তর্জাতিক