দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটের চলন্ত ফেরিতে যাত্রীদের টাকা-পয়সা ও মালামাল লুটপাট করে নেওয়ার কাজে জুয়াড়িদের স্থানীয় প্রশাসন, ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী নেতা ও ফেরি সংশ্লিষ্টরা সহায়তা করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সম্প্রতি রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সম্পাদক এবং গোয়ালন্দ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ফেরিতে জুয়াড়িদের হামলায় গুরুতর আহত হন।
এ ঘটনায় দোষীদের আটক ও বিচারের দাবিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মহাসড়ক অবরোধ করেন।
জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১টি জেলার সঙ্গে রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর কয়েকশ যাত্রীবাহী যানবাহন পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে ফেরিতে নদী পার হয়।
অভিযোগ রয়েছে, রাতে যাত্রীদের নিরাপত্তা দিতে সরকারি নির্দেশনা থাকলেও পুলিশ টহল দেয় না। দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ঘাট এলাকায় পুলিশের কয়েকটি স্পিডবোট অলস পড়ে থাকে। আর এ সুযোগে যাত্রীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা লুটে নিচ্ছে একটি সংঘবদ্ধ জুয়াড়ি চক্র।
গভীর রাতে পন্টুন থেকে ফেরি ছেড়ে কিছু দূর যাওয়ার পর ২০ থেকে ২৫ জনের সশস্ত্র জুয়াড়ি দল ট্রলারে করে ফেরিতে ওঠে।
প্রথমে তারা নিজেরা কয়েক জন মিলে তিন তাস নামক জুয়া খেলা দিয়ে যাত্রীদের আকৃষ্ট করে। পরে যাত্রীদের কাছ থেকে সর্বস্ব জোর করে কেড়ে নেয় তারা। এসময় তাদের কেউ বাধা দিলে তাকে নির্মমভাবে মারধর ও কুপিয়ে জখম করা হয়।
২২ মে মঙ্গলবার সিলেট থেকে ফেরার পথে ভোর ৪টার দিকে পাটুরিয়া ঘাট থেকে ফেরি শাহজালালে নদী পারের জন্য ওঠেন রাজবাড়ী ও গোয়ালন্দের কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা।
তারা ফেরিতে জুয়ার নামে যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা ছিনতাই ও মারধরে বাধা দিলে জুয়াড়িরা ওই নেতাদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়।
এতে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মুসাব্বির হোসেন বাঁধন, সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া মাসুদ রাজীব, সম্পাদক ম-লীর সদস্য ইপ্তি হোসেন সৌরভ, গোয়ালন্দ উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি এবিএম বাতেন ও তাদের গাড়ি চালক জসিম গুরুতর জখম হয়।
এ ঘটনা প্রতিবাদে ২২ মে দুপুরে দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়ক ২ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখা হয়। প্রশাসনকে ১২ ঘণ্টার মধ্যে সব জুয়াড়িকে আটকের আল্টিমেটাম দিলে সেন্টু ও মঞ্জুকে আটক করে পুলিশ। বাকিরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরেই থেকে যায়। অবরোধকালে আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বেশ কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন, পুলিশের পাশাপাশি সরকারি দলের স্থানীয় কয়েকজন শীর্ষ নেতা ও জনপ্রতিনিধি জুয়াড়িদের কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকার সুবিধা নিয়ে তাদের খেলা চালাতে সহায়তা করছেন। এ কারণে জুয়াড়িরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
এ বিষয়ে গোয়ালন্দ ঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার বলেন, ‘জুয়াড়িদের কাছ থেকে পুলিশের সুবিধা নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। তবে অন্যদের ব্যাপারে কিছু বলতে পারবো না।’
তিনি বলেন, ‘এ সব ঘটনায় যে কোনো অভিযোগ পাওয়া মাত্রই ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ ঘটনায় ২ জুয়াড়িকে আটক করা হয়েছে। অন্যদের আটকের জন্য অভিযান চলছে।’
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া কার্যালয়ের উপসহকারী মহাব্যবস্থাপক নাসির মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘চলতি বছরের জানুয়ারি মাসেও গোয়ালন্দ ঘাট থানায় ফেরিতে জুয়া খেলা বন্ধের ব্যবস্থা নিতে লিখিতভাবে জানাই। এর আগে আরিচা কার্যালয় থেকেও পুলিশকে জানানো হয়। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি।’
এ প্রসঙ্গে গোয়ালন্দ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাসান ইমাম চৌধুরীর সঙ্গে একাধিকবার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন কল রিসিভ করেননি।