ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শঙ্কর তিন দিনের সফরে আজ সোমবার রাতে ঢাকায় আসছেন। আগামীকাল মঙ্গলবার তিনি বৈঠক করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের কথা রয়েছে। সফর শেষে আগামী বুধবার সকালে তিনি বাংলাদেশ ছাড়বেন।
গত মে মাসে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর জয়শঙ্করের এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। তবে ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় বেশ কয়েকবার বাংলাদেশ সফর করেন তিনি। এ কারণে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তিনি পরিচিত মুখ।
ভারতীয় সূত্রগুলো পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে জয়শঙ্করের এ সফরকে ‘সৌজন্যমূলক’ বললেও নরেন্দ্র মোদি দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠনের পর তাঁর সরকারের উচ্চপর্যায়ের কোনো প্রতিনিধির এটিই প্রথম বাংলাদেশ সফর। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, এ সফরে বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ব্যাপারে ভারতের মোদি সরকারের মনোভাব আরো স্পষ্ট হতে পারে। বিদ্যমান চমৎকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে আরো এগিয়ে নিতে দুই দেশ আলোচনা ও কাজ করবে।
গত দুই মাসে বিদেশে আঞ্চলিক/আন্তর্জাতিক সম্মেলনের ফাঁকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. জয়শঙ্কর অন্তত দুই দফা বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকগুলোতে বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারে ভারত ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। আগামীকাল ঢাকায় অনুষ্ঠেয় বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন ইস্যুতে আরো সুনির্দিষ্ট ধারণা পাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া আগামী অক্টোবর মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নয়াদিল্লি সফরও চূড়ান্ত হতে পারে এই বৈঠকে।
এদিকে গত মে মাসে নরেন্দ্র মোদি ভারতে দ্বিতীয় দফায় সরকার গঠনের পর দুই দেশের অভিন্ন নদ-নদীর পানিবণ্টনসহ পানিসংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু সুরাহা করতে গত ৮ আগস্ট ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসির) সচিব পর্যায়ের বৈঠক হয়েছে। ওই বৈঠকে ফেনী, ধরলা, দুধকুমার, মনু, খোয়াই, গোমতী ও মুহুরী—এ সাতটি নদীর পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুত সই করার লক্ষ্যে কাজ করতে দুই দেশ সম্মত হয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যেই অন্তর্বর্তী চুক্তি সইয়ের জন্য আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ওই নদ-নদীগুলোর তথ্য-উপাত্ত হালনাগাদ করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানিয়েছে, পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের আসন্ন বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যুতেও আলোচনা হতে পারে। বাংলাদেশ, ভারত উভয়ই দ্রুত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন চায়। এ ছাড়া উঠতে পারে কাশ্মীর ইস্যুও। বাংলাদেশ কাশ্মীরকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেই মনে করে। জানা গেছে, বৈঠকের এজেন্ডায় না থাকলেও বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগ ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাজ্য ভারতের আসামে চলমান নাগরিক তালিকা হালনাগাদের ব্যাপারেও আলোচনা হতে পারে।
আসামে নাগরিক তালিকা হালনাগাদকে বাংলাদেশ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় বলেই মনে করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সম্প্রতি বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অনুপ্রবেশের অভিযোগ নাকচ করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে কোনো বাংলাদেশি ভারতে যায় না।