অবসরের কথায় আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছেন মাশরাফি

অবসরের কথায় আবেগতাড়িত হয়ে পড়ছেন মাশরাফি

মাশরাফি বিন মুর্তজা নড়াইল থেকে ফিরেছেন কাল রাতে। রাতেই তাঁকে জানানো হয় আজ দুপুরে যেন দেখা করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সঙ্গে। বিসিবি কার্যালয়ে দেখা করতে এলে বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ককে মৌমাছির মতো ঘিরে ধরেন সংবাদকর্মীরা। হঠাৎ তাঁকে নিয়ে এই বিপুল আগ্রহ দেখে একটু বোধ হয় বিরক্তই হলেন মাশরাফি।

বিপুল আগ্রহের কারণ আছে। কদিন ধরে মাশরাফিকে নিয়ে যে আলোচনাটা হচ্ছে—জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটা ওয়ানডে খেলেই কি বিদায় নেবেন? বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক কখনোই জানাননি তিনি কখন অবসর নেবেন। তবে গত ডিসেম্বরে রাজনীতিতে নাম লেখানোর পর আনুষ্ঠানিকভাবেই জানিয়েছিলেন, তাঁর পরিকল্পনা বিশ্বকাপ পর্যন্ত। বিশ্বকাপের পর জানালেন, এখনই অবসর নিচ্ছেন না। বিসিবি অবশ্য চেয়েছিল, মাশরাফি রাজি থাকলে সেপ্টেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুব ঘটা করে বিদায়ের আয়োজন করা হবে। সেটি জানতেই আজ বিসিবি কার্যালয়ে ডাকা হয়েছিল তাঁকে।

বিসিবি সভাপতি নাজমুল সাংবাদিকদের বললেন, মাশরাফি এখনই অবসর নিতে চান না, ‘জিম্বাবুয়ের সঙ্গে একটা ওয়ানডে আয়োজন করব কি না, সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছিলাম। ও মনে করে যে এত তাড়াতাড়ি…যেহেতু আগামী মার্চের আগে আমাদের কোনো ওয়ানডে নেই। এখন এসব না হলে তার সুবিধা হয়। দুই মাস পরে হলে সে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

দুই সপ্তাহ ধরেই মাশরাফি নড়াইলে রাজনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত। যেহেতু তিনি সময় চেয়েছেন, আর বাংলাদেশের কোনো ওয়ানডেও নেই আগামী ছয় মাসে, এখন তাঁর ক্রিকেটীয় কর্মসূচি কী হবে—এটি নিয়ে মাশরাফি নিজেই কিছু বলতে পারলেন না। ক্রিকেটবিষয়ক আলোচনাই তাঁর কাছে আপাতত অপ্রাসঙ্গিক! বিকেলে বিসিবির এক পরিচালক জানালেন, মাশরাফি আসলে এ বছরে অবসরের কোনো ঘোষণাই দিতে চান না। জানুয়ারিতে বিপিএল শেষ হলে তবেই অবসর নিয়ে ভাববেন। আগামী মার্চে জিম্বাবুয়ে আবার আসবে বাংলাদেশে। জিম্বাবুইয়ানদের এই সফরে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ থাকছে। অবসরের ঘোষণা যদি দিতেই হয়, তখনো দেওয়ার সুযোগ থাকছে—তার আগে মাশরাফি এ নিয়ে ভাবতে চান না।

আজ বিসিবির শীর্ষ কর্তারা যখন অবসরের কথা জানতে চান মাশরাফির কাছে, তিনি বেশ আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন। যেহেতু তিনি অবসর নিয়ে কিছুই ভাবছেন না, বিসিবি বাধ্য হয়েই সেপ্টেম্বরে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একটি ওয়ানডে আয়োজনের পরিকল্পনা বাতিল করে দিচ্ছে। তবে এবার মাশরাফিকে বিদায় দিতে যেভাবে জাঁকাল মঞ্চ আয়োজন করার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল, ভবিষ্যতে পরিস্থিতি এমন না–ও থাকতে পারে। এখন থেকে মাশরাফির ফিটনেস, বোলিং-ব্যাটিং-ফিল্ডিং—সবকিছুই যে আতশ কাচের নিচে থাকবে, সেটিও জানিয়ে রাখলেন বিসিবির ওই পরিচালক। শুধু তা-ই নয়, কত দিন মাশরাফির কাঁধে ওয়ানডে দলের ভার রাখা হবে, সেটি নিয়েও ভাবতে শুরু করেছে বিসিবি।

মাশরাফিকে বিদায় জানানোর যে উদ্যোগ নিতে চাইছে বিসিবি, এটি অন্য খেলোয়াড়দের জন্যও করা হবে কি না, এ প্রশ্নে বিসিবি সভাপতি নাজমুল জানিয়ে রাখলেন তাঁদের আন্তরিকতায় ঘাটতি নেই। তবে খেলোয়াড় যদি এটি না উপলব্ধি করতে পারে, নিজেদের মতো সিদ্ধান্ত নেবে বিসিবি, ‘এটা শুধু বোর্ড দিয়ে হবে না। খেলোয়াড়ের মাথায়ও চিন্তাটা আসতে হয়। খেলোয়াড় যদি সেভাবে চিন্তা না করে, তাহলে তো লাভ হলো না। আমাদের কাজ হলো জানানো যে আমরা ভালোভাবে, সুন্দরভাবে বিদায় দিতে চাই। এখন সিদ্ধান্ত তার। সে যদি সিদ্ধান্ত নিতে পারে নেবে, না হলে বোর্ড বোর্ডের সিদ্ধান্ত নেবে।’

বিসিবি সভাপতির ইঙ্গিতটা যে আপাতত মাশরাফির দিকে, না বললেও চলছে।

খেলাধূলা