‘গ্রিনল্যান্ড বিক্রির জন্য নয়’, সাফ জানিয়ে দিয়েছে গ্রিনল্যান্ড সরকার। অস্ট্রেলিয়ার পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই দ্বীপ ডেনমার্কের কাছ থেকে কিনে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর প্রতিক্রিয়াতেই ডেনমার্কের স্বায়ত্তশাসিত এ অঞ্চলের সরকার এ কথা বলেছে।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ শুক্রবার গ্রিনল্যান্ড সরকারের নিজের এই অবস্থানের কথা জানায়।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেনমার্কের কাছ থেকে গ্রিনল্যান্ড কিনে নেওয়ার বিষয়ে বিভিন্ন সময়ে তাঁর উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন বলে খবর বেরিয়েছে। নৈশভোজ ও বিভিন্ন সভাতেও তিনি বিষয়টি উত্থাপন করেছেন। কিন্তু গ্রিনল্যান্ডের সরকার সরাসরি জানিয়ে দিয়েছে, ‘ব্যবসার জন্য আমরা উন্মুক্ত, বিক্রির জন্য নই।’
শুধু গ্রিনল্যান্ড নয়, ডেনমার্কের রাজনীতিকেরাও ট্রাম্পের এমন খেয়ালকে খারিজ করে দিয়েছেন। ডেনমার্কের সাবেক প্রধানমন্ত্রী লার্স লোক রাসমুসেন এক টুইটে লেখেন, ‘এটা নিশ্চয় এপ্রিল ফুলের একটি তামাশা..কিন্তু বড় অসময়ের!’
তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প সত্যিই বিষয়টি তামাশা করে বলেছিলেন কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বিষয়টিকে প্রেসিডেন্টের একটি তামাশা হিসেবে উল্লেখ করা হলেও ওয়ালস্ট্রিট জার্নাল অন্তত এটিকে ‘সিরিয়াস’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
ট্রাম্প যেভাবেই বলুন না কেন গ্রিনল্যান্ড বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছে। গ্রিনল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে জানিয়েছে, ‘বিক্রির জন্য গ্রিনল্যান্ড বাজারে ওঠেনি। খনিজ, বিশুদ্ধ পানি ও বরফ, মাছ, সামুদ্রিক মাছ, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ নানা মূল্যবান সম্পদে সমৃদ্ধ গ্রিনল্যান্ড। গ্রিনল্যান্ড ব্যবসার জন্য উন্মুক্ত; বিক্রির জন্য নয়।’
একই অবস্থান পরে পুনর্ব্যক্ত করেছেন গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী কিম কিলসেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ যেকোনো দেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও সহযোগিতার জন্য গ্রিনল্যান্ড উন্মুক্ত; বিক্রির জন্য নয়।’
আগামী মাসে ডেনমার্ক সফরের কথা রয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের। কিন্তু সে সময়ে এ ধরনের কোনো বিষয়ে আলোচ্যসূচিতে রয়েছে কিনা, তা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। তবে ট্রাম্পের এমন ইচ্ছার প্রকাশ নিয়ে গ্রিনল্যান্ড ও ডেনমার্কের রাজনীতিক বলয়ে রীতিমতো হাস্যরস চলছে।
তবে এ ধরনের অঞ্চল কেনাবেচার ঘটনা কিন্তু ইতিহাসের পাতা উল্টালেই পাওয়া যাবে। যুক্তরাষ্ট্রের লুইজিয়ানা অঙ্গরাজ্যটি যুক্তরাষ্ট্র ১৮০৩ সালে ফ্রান্সের কাছ থেকে কিনেছিল। সে সময় ৮ লাখ ২৭ হাজার বর্গমাইল বিস্তৃত এ অঞ্চল কিনতে যুক্তরাষ্ট্রকে গুনতে হয়েছিল দেড় কোটি ডলার। ১৮৬৭ সালে রাশিয়া থেকে ৭২ লাখ ডলারের বিনিময়ে আলাস্কা কেনার চুক্তি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ ১৯১৭ সালে ডেনমার্ক থেকেই ড্যানিশ ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিনেছিল যুক্তরাষ্ট্র, যার বর্তমান নাম ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ড। আর গ্রিনল্যান্ডের প্রতি এমন আগ্রহ কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পই প্রথম দেখাচ্ছেন না। এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট হেনরি ট্রুম্যানও গ্রিনল্যান্ড কেনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ডেনমার্ককে। ১৯৪৬ সালে দেওয়া ওই প্রস্তাবে গ্রিনল্যান্ডের বিনিময়ে ১০ কোটি ডলার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।