বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির লক্ষ্য ২০০ আসন!

বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির লক্ষ্য ২০০ আসন!

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন হতে এখনো ঢের বাকি। ২০২১ সালে হবে রাজ্য ক্ষমতায় আসীন হওয়ার এ নির্বাচন। তবে এ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে প্রস্তুতি নেওয়া শুরু করেছে বিজেপি। লোকসভা নির্বাচনে আশাতীত ফল তাদের এখন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখাচ্ছে। সে স্বপ্নকে সামনে রেখে বিধানসভা নির্বাচনের জন্য ২০০ আসনে জয়ের লক্ষ্য স্থির করেছে বিজেপি।

গতকাল রোববার পশ্চিমবঙ্গের শিল্প শহর দুর্গাপুরে বিজেপি আয়োজিত দুই দিনের চিন্তন বৈঠক শেষে এ লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রাজ্যের ২৯৪টি আসনের মধ্যে তারা জিততে চাইছে ২০০ আসন। ইতিমধ্যে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহও রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়েও দিয়েছেন এবার বিজেপির লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা দখল।

এ বছরের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিজেপি জয়ের জন্য এই রাজ্যে ২২টি আসনকে টার্গেট করেছিল। পশ্চিমবঙ্গে রয়েছে লোকসভার ৪২টি আসন। এই আসনের মধ্যে ২২টি আসন জয়ের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে বিজেপি জিতেছিল ১৮টি আসন। একইভাবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস টার্গেট করেছিল ৪২ আসনই। অর্থাৎ ৪২ আসনের সব কটি আসনে জয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিলেন মমতা। কিন্তু দল জিতেছিল মাত্র ২২টি আসন।

আগামী বছর, অর্থাৎ ২০২০ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের ১২২টি পৌরসভা এবং ছয়টি পৌর করপোরেশনের নির্বাচন। আর ২০২১ সালে অনুষ্ঠিত হবে পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি রাজ্য বিধানসভা আসনের নির্বাচন। এই দুটি নির্বাচনে জয়ের জন্য ইতিমধ্যে মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়েছে বিজেপি ও তৃণমূল।

পশ্চিমবঙ্গের শাসনক্ষমতায় যেতে হলে বিজেপিকে জিততে হবে ১৪৮টি আসন। সেই ভাবনা নিয়েই বিজেপি লক্ষ্য স্থির করেছে, পশ্চিমবঙ্গে তাদের জিততে হবে কম করে ২০০টি আসনে। আর তৃণমূল সেভাবে এবার লোকসভার মতো কোনো ঘোষণা দেয়নি। তবে বলেছে, ২০২১ সালে ফের ক্ষমতায় আসবে তৃণমূল।

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে বিজেপি এবার পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা নির্বাচনে অভূতপূর্ব ফলাফল করেছে। শুধু ১৮টি আসনে জয়লাভ করেনি, জয় পেয়েছে এই রাজ্যের ২৯৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ১২১টি বিধানসভা আসনে। শুধু তা–ই নয়, আরও ২৯টি আসনে এক হাজার থেকে তিন হাজার ভোটে হেরেছে বিজেপি। ফলে, এই ১২১টির সঙ্গে ২৯টি যোগ করে ১৬০টি আসনে বিজেপি আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে জয়ের স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। তাই বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতৃত্বকে জানিয়ে দিয়েছেন, এবার বিপুল জয়ের লক্ষ্য নিয়ে এগোতে হবে বিজেপিকে। ২০২১ সালে জয় জয় ছিনিয়ে আনতে হবে পশ্চিমবঙ্গে।

সবশেষ ২০১৬ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল ২৯৪ আসনের মধ্যে মাত্র তিনটি আসন। তৃণমূল জিতেছিল ২১১টি আসনে। আর কংগ্রেস ৪৪টি এবং বামফ্রন্ট জিতেছিল ৩২টি আসনে।

সেই বিজেপির এখন জনপ্রিয়তা দ্রুত বাড়ছে, আর কমছে তৃণমূলের জনপ্রিয়তা। ইতিমধ্যে তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন ছয় বিধায়ক। সম্প্রতি বিধানসভার শূন্য আসনে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনে বিজেপি জিতেছে চারটি আসনে। আরও বাকি রয়েছে চারটি বিধানসভার উপনির্বাচন। সেখানে লোকসভা ভোটের আগাম সমীক্ষায় তিনটি আসনে এগিয়ে রয়েছে বিজেপি আর একটি আসনে তৃণমূল। এবার লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছে ৪০ শতাংশ ভোট আর তৃণমূল পেয়েছে ৪৩ শতাংশ ভোট। অথচ ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি পেয়েছিল মাত্র ৬.১৪ শতাংশ ভোট। ২০১১ আলে বিধানসভা নির্বাচনে সেই ভোট বেড়ে হয়েছিল ১০ শতাংশ। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে সেই ভোট আরও বেড়ে হয়েছিল ১৭ শতাংশ।

২০২০ সালে এই রাজ্যের ১২২টি পৌরসভার নির্বাচন হওয়ার কথা। এর মধ্যে লোকসভার ভোটের সমীক্ষায় ১০১টি পৌরসভায় এগিয়ে রয়েছে বিজেপি। আবার ৬টি পৌর করপোরেশনের মধ্যে ৪টিতে এগিয়ে বিজেপি।

এসব ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিজেপি মনে করছে, ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভার নির্বাচনে বিজেপি তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাস্ত করে ক্ষমতায় আসতে পারবে।

দুর্গাপুরে আয়োজিত বিজেপির চিন্তন বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের ২৯৪টি আসনের ফলাফল নিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়। বৈঠকের পর রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ জানিয়ে দেন, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়ের লক্ষ্যমাত্রা স্থির হয়েছে ২০০টি আসন। তিনি বলেন, ২০২১ সালে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতায় আসবে বিজেপি। ভারতের ‘ভোটগুরু’ হিসেবে পরিচিত প্রশান্ত কিশোরকে তৃণমূল নিয়োজিত করেও নির্বাচনে সাফল্য পাবে না। পরাজয় নিশ্চিত তৃণমূলের। মানুষ ভোট দেবে বিজেপিকে।
এর আগে শনিবার এই চিন্তন বৈঠক শেষে বিজেপি নেতা মুকুল রায় প্রশান্ত কিশোরকে কটাক্ষ করে বলেছিলেন, ‘তৃণমূলের শেষকৃত্যে মুখাগ্নি করতে এসেছেন ভোটগুরু প্রশান্ত কিশোর। এর আগে উত্তর প্রদেশে মায়াবতীর বিএসপি দলের শেষকৃত্যে মুখাগ্নি করেছেন, অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির শেষকৃত্যে মুখাগ্নি করেছেন। এবার করবেন তৃণমূলের শেষকৃত্যে মুখাগ্নি।’

আন্তর্জাতিক