ঈদ মানেই ফাঁকা ঢাকা। আর দশটি দিনের মতো সড়কে নেই কোনো যানজট, যা আক্ষরিক অর্থেই দুঃসহ। সুপার মার্কেট, বিপণিবিতান, ফুটপাত—কোথাও নেই মানুষের ভিড় বা জটলা। কারণ, রাজধানীর ঢাকার বেশির ভাগ মানুষ যে গ্রামে চলে গেছে, ঈদ উদ্যাপন করতে। পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে মানুষ মূলত গত বৃহস্পতিবার থেকেই ঘরমুখী হতে থাকে। এর কারণ এবারের ঈদের দিনের আগে এক দিনের বদলে তিন দিনের ছুটি মিলে যাওয়া।
কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবু ধরে নেওয়া হয়, প্রতিবারই ঈদের সময়ে ঢাকা থেকে অর্ধেকের বেশি মানুষ গ্রামে চলে যায়। যাওয়ার বাহন বাস, ট্রেন ও লঞ্চ। কেউ কেউ আজকাল আকাশপথেও বাড়ি যান। রাজধানী শহর ছেড়ে যাওয়ার এই স্রোত অব্যাহত ছিল গতকাল রোববার পর্যন্ত।
ঢাকা ছেড়ে গ্রামে যাওয়া যাত্রীদের এবার যে ভোগান্তি সইতে হয়েছে, তা অতীতে খুব কমই দেখা গেছে। উল্লেখ করার মতো ছিল রেলের শিডিউল বিপর্যয়। কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে একাধিক ট্রেন নির্ধারিত সময়ের ১২ ঘণ্টা পরও ছেড়ে যেতে পারেনি। ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গে ছেড়ে যাওয়া অনেক বাস সকালে যাত্রা করে যমুনা সেতু পর্যন্ত যেতেই সময় নিয়েছে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টা। তবু বাড়ি যেতে হবে। এ যে নাড়ির টান।
আজ কোনো ট্রেন চলেনি। তবে গাবতলী, মহাখালী ও সায়েদাবাদ থেকে দূরপাল্লার কিছু বাস ছেড়ে গেছে নির্ধারিত গন্তব্যে। পরিবহন অফিসগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উল্লেখযোগ্য আসন ফাঁকা রেখেই এসব বাস ঢাকা ছেড়ে গেছে।
কিছু মানুষের বাড়ি ছুটে যাওয়ার এই সুবাদে ঢাকায় বসবাস করা মানুষ কয়েক দিনের জন্য পেয়ে গেছে স্বস্তির ঢাকা। ঈদের আমেজের কারণে ঢাকার সড়কগুলোতে যানবাহন চলাচল করতে খুব বেশি দেখা যায়নি, অনেকটাই ফাঁকা ফাঁকা। প্রতিদিনের মতো সায়েদাবাদ, গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেট, নিউ মার্কেট, আসাদগেট, মহাখালী বা রাজধানীর অন্য ব্যস্ততম এলাকাগুলোয় দেখা যায়নি কোনো যানজট।
আমিনবাজার থেকে বাস এসে কারওয়ান বাজার নামেন এক যাত্রী। তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারে আসতে তাঁর সময় লেগেছে মাত্র ২০ মিনিট। অন্যদিন, এই দূরত্ব পার হতে সময় লাগে দুই ঘণ্টা বা তারও বেশি।
রিকশাচালক আখতার হোসেন বাড়ি যাননি। সুযোগ বুঝে আয়েশ করে রিকশা চালাচ্ছেন। তিনি জানান, সকাল থেকে সাতটা থেকে দুপুর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে তিনি যাত্রী নিয়ে রাজধানীর গুলিস্তান, নিউ মার্কেট, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার এলাকা ঘুরে বেড়িয়েছেন। অন্য সময়ে তিনি এমনটা কল্পনাও করতে পারেন না। অন্য সময়ের চেয়ে আজ তাঁর আয়ও বেশি হয়েছে।
আখতার হোসেন বলেন, তাঁর গ্রামের বাড়ি সিলেটে। এক সপ্তাহ পর সবাই যখন গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে আসবে, তখন তিনি এক সপ্তাহের জন্য গ্রামে বেড়াতে যাবেন।