বর্ণাঢ্য আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে চ্যানেল আই পালন করলো জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী এবং বিদ্রোহী কবিতা রচনার ৯০তম বর্ষপূর্তি। চ্যানেল আই নিজম্ব প্রাঙ্গণে প্রতিবছরের মতোই এবারও জাতীয় কবির জন্মজয়ন্তীতে আয়োজন করা হয়েছিল নজরুল মেলার। এবার মেলা নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস আরাকে দেওয়া হয়েছে আজীবন সম্মানন।
সকালে বেলুন উড়িয়ে নজরুল মেলার উদ্বোধন করেন সোহরাব হোসেন, সুধীন দাশ, মোস্তফা জামান আব্বাসী, ফেরদৌস আরা, নাট্যব্যক্তিত্ব আতাউর রহমান, সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী, গণসঙ্গীতশিল্পী ফকির আলমগীর, শবনম মুশতারী ও সালাউদ্দিন আহমেদ, ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, আবৃত্তিকার কাজী আরিফ, সাংবাদিক রেজানুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান চৌধুরী, চিত্রনির্মাতা শহীদুল ইসলাম খোকন, মহম্মদ হান্নান, অনুপম হায়াৎ প্রমুখ।
মেলার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় ছিলো বিদ্রোহী কবিতা রচনার ৯০তম বর্ষপূর্তি পালন। যা এই প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রীয়ভাবে বাংলাদেশ এবং ভারত যৌথভাবে পালন করছে। চ্যানেল আই’র আয়োজনে জাতীয় কবিকে স্মরণে ৮ম বার অনুষ্ঠিত হলো এই মেলা।
নজরুল মেলায় এবার বরেণ্য নজরুল সঙ্গীতশিল্পী ফেরদৌস আরাকে আজীবন সম্মাননা প্রদান করা হয়। আগের বছরগুলোতে এ সম্মাননা পেয়েছেন সঙ্গীতগুরু সোহরাব হোসেন, সুধীন দাশ, সঙ্গীতজ্ঞ ফিরোজা বেগম ও নজরুল গবেষক ড. রফিকুল ইসলাম।
মেলার মূল মঞ্চে তার হাতে সম্মাননা ক্রেষ্ট, উত্তরীয় এবং এককালীন পাঁচ লক্ষ টাকার চেক তুলে দেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, পরিচালক ও বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ, পরিচালক জহির উদ্দিন মাহমুদ মামুন ও আবদুর রশিদ মজুমদার, সঙ্গীতগুরু সোহরাব হোসেন এবং সুধীন দাশ।
সম্মাননা পাওয়ার অনুভূতি জানাতে গিয়ে এ সময় ফেরদৌস আরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, চ্যানেল আই আমাকে যে সম্মান দিয়েছে এটা আমার জন্য বড় একটা পাওয়া। এই সম্মানের মর্যাদা রক্ষা করা আমি সমবসময়ই সচেতন থাকবো। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এটি আমি মনে রাখার চেষ্টা করবো।
সম্মাননা দেওয়া শেষে প্রাণ ম্যাংগো জুসপ্যাক নিবেদিত ফেরদৌস আরার একটি ভিসিডি ‘প্রথম প্রদীপ’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয়। মোড়ক উন্মোচন পর্বে উপস্থিত ছিলেন প্রাণ-আর এফ এল গ্র“পের সিনিয়র ম্যানেজার ফারহান রশিদ। মোড়ক উন্মোচন শেষে সোহরাব হোসেন, সুধীন দাশ ও ফেরদৌস আরা নজরুল ইসলামের ‘একি অপরূপ রূপে মা তোমার’ গানটি পরিবেশন করেন। ঢাকা ও কলকাতায় চিত্রায়িত এই অ্যালবামের সার্বিক তত্ত্বাবধান করেন আমীরুল ইসলাম। অতীতে এ সম্মাননা পেয়েছেন সঙ্গীতগুরু সোহরাব হোসেন, সুধীন দাশ, সঙ্গীতজ্ঞ ফিরোজা বেগম ও নজরুল গবেষক ড. রফিকুল ইসলাম।
নজরুল মেলা সাংস্কৃতিক পর্ব শুরু হয় বিভিন্ন বয়সের শিল্পীদের পরিবেশনায় ‘জয় হোক’ গানটির মাধ্যমে। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলো আব্বাস উদ্দিন একাডেমীর শিশুশিল্পীদের পরিবেশনায় নজরুল ইসলামের ইসলামিক গান পরিবেশন, বিভিন্ন সংগঠনের শিশুশিল্পীদের নৃত্য পরিবেশন এবং কাজী আরিফের আবৃত্তিতে নজরুল ইসলামের কালজয়ী কবিতা ‘বল বীর বল উন্নত মম শীর’ আবৃত্তি । অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন শিল্পী কল্পনা আনাম, শবনম মুশতারী, রেবেকা সুলতানা, ড. লীনা তাপসী খান, আবৃত্তি পাঠ করেন কাজী আরিফ, নৃত্য পরিবেশন করেন নৃত্যশ্রী। বিভিন্ন বয়সী শিল্পীরা ও বিভিন্ন সংগঠনের শিল্পীরা দিনব্যাপি মেলায় একক ও দলীয় সঙ্গীত, আবৃত্তি এবং নৃত্য পরিবেশন করেন।
মেলায় চিত্রাংকন করেন মনিরুজ্জামান, রনজিত দাস, আবদুল মান্নান, জাহিদ মোস্তাফা, পপি, বীরেন সোম, জাহিদ, উর্মি, সোমনা, মোঃ জহির উদ্দিন, রোজি প্রমুখ। এছাড়া ছিলো শিশুশিল্পীদের তুলিতে নজরুলের চিত্রকর্ম। মেলায় ছিলো তাঁত শিল্প, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প, নজরুলের স্মৃতিগ্রন্থ, নজরুলের চিত্রকলা, নজরুল সংক্রান্ত ভিডিও সিডি, নজরুল সঙ্গীতের গানের স্টল, নজরুলের চলচ্চিত্র প্রদর্শনী ইত্যাদি। নজরুল মেলা সরাসরি সম্প্রচার করে চ্যানেল আই।