আট বছর পর বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মধ্যে যৌথ নদী কমিশনের সচিব পর্যায়ের বৈঠক বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুইদেশের সীমান্ত দিয়ে বহমান নদীগুলো নিয়ে খুব ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ৫৪টি অভিন্ন নদী বয়ে গেছে। যার মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৭টি নদীর পানির সুষম ব্যবহার নিয়ে উভয়পক্ষ একসঙ্গে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বৃহস্পতিবার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার ও ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। বৈঠক শেষে দুই দেশের সচিব গণমাধ্যমকর্মীদের এসব তথ্য জানান।
বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের মধ্য দিয়ে বহমান অভিন্ন ৫৪ টি নদীর মধ্যে মনু, মুহুরী, খোয়াই, ফেনী, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার এবং তিস্তা, এই ৭টি নদীর পানির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে উভয়পক্ষ। এ ছাড়া পদ্মা নদীতে ব্যারাজ নির্মাণে একটি যৌথ কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব কবির বিন আনোয়ার বলেন, দুই দেশের মধ্যে বিগত ১৯৯৬ সালে গঙ্গাচুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী, বাংলাদেশ এই অংশ থেকে ন্যায্য পানির হিস্যা পাচ্ছে। এই চুক্তিটি যেহেতু অনেক বছর আগে হয়েছে তাই গঙ্গার পানির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতের জন্য নতুন করে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা আবারও যাচাই করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য যৌথভাবে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
সচিব জানান, দুই দেশের ৫৪টি নদীর মধ্যে ৭টি নদী নিয়ে ঢাকা-নয়া দিল্লি যৌথভাবে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নদীগুলো হচ্ছে মনু, মুহুরী, খোয়াই, ফেনী, গোমতী, ধরলা, দুধকুমার এবং তিস্তা। এই নদীগুলোর পানি অন্তবর্তীকালীন ব্যবহারের জন্য একটি কাঠামো প্রণয়নে সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং বলেন, বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ‘গঙ্গা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির আওতায় প্রাপ্ত পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে যৌথভাবে সমীক্ষা ও বাংলাদেশে গঙ্গা-পদ্মা ব্যারাজ নির্মাণে ভারতীয় কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা’ শীর্ষক এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ভারতের কোনো আপত্তি নেই। এ প্রকল্পের শর্তাবলি (টার্মস অব রেফারেন্স) ঠিক করার জন্য আমরা একটি যৌথ কমিটি গঠন করেছি। এই কমিটি আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।
তিনি আরও বলেন, দীঘ ৮ বছর বিরতির পর এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। তবে এর মধ্যে মন্ত্রী বা অন্য পর্যায়ের বৈঠক অবশ্য হয়েছে। এই যাত্রা এখন থেকে অব্যাহত থাকবে। খুব শিগগির এই বিষয়ে মন্ত্রিপর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উপেন্দ্র প্রসাদ সিং জানান, যৌথ নদী কমিশনের সচিব পর্যায়ের বৈঠকে ঢাকার পক্ষে ছয়টি প্রস্তাব এবং নয়াদিল্লির মধ্যে চারটি প্রস্তাব ছিল।
ঢাকার ছয়টি প্রস্তাব হচ্ছে— গঙ্গা নদীর পানি বণ্টনচুক্তির আওতায় প্রাপ্ত পানির সর্বোত্তম ব্যবহারের লক্ষ্যে যৌথভাবে সমীক্ষা ও বাংলাদেশে গঙ্গা-পদ্মা ব্যারাজ নির্মাণে ভারতীয় কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা; অন্যান্য অভিন্ন নদী যেমন—মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বণ্টন চুক্তির ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন; আপারা সুরমা-কুশিয়ারা প্রকল্পের ইনটেক চ্যানেলের (রহিমপুর খাল) অবশিষ্ট অংশের খনন কাজ বাস্তবায়ন; বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বিষয়ে বাংলাদেশ-ভারত সহযোগিতা সম্প্রসারণ; বাংলাদেশের আখাউড়ায় সিঅ্যান্ডবি খাল ও জাজি নদীতে দূষণ এবং আন্তঃসীমান্ত নদীর অববাহিকাভিত্তিক পানি সম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা।
অন্যদিকে, নয়াদিল্লির প্রস্তাবগুলো হচ্ছে— মনু, মুহুরী, খোয়াই, গোমতী, ধরলা বা জলঢাকা এবং দুধকুমার বা তরসা ছয়টি আন্তঃসীমান্ত নদীর পানি বণ্টন; পশ্চিম বাংলার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত আত্রাই, পুনর্ভবা ও টাঙ্গন নদীতে শুষ্ক মৌসুমে প্রবাহ কমে যাওয়া;ফেনী নদী থেকে ১ দশমিক ৮২ কিউসেক পানি উত্তোলনের মাধ্যমে ত্রিপুরার সাবরুম শহরে ‘ড্রিংকিং ওয়াটার সাপ্লাই স্কি’ বাস্তবায়ন এবং বাংলাদেশের চিনিকল থেকে নির্গত তরল বর্জ্য দ্বারা পশ্চিম বাংলার মাথাভাঙা-চূর্ণী নদী দূষণ ।