সারদা মামলায় ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের (ইডি) কর্মকর্তারা প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে তৃণমূল সাংসদ এবং টালিউড তারকা শতাব্দী রায়কে জেরা করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার তিনি ইডি দপ্তরে গেলে সারদার চিটফান্ড থেকে টাকা নেওয়ার মামলায় তাঁর সম্পৃক্ত থাকা বা না থাকার সমর্থনে বেশ কিছু নথি চান সংশ্লিষ্টরা। অন্যদিকে, ২৯ লাখ রুপি ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ইডিকে চিঠি লেখার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন শতাব্দীর আইনজীবী। শতাব্দী রায় এবার নিয়ে তিনবার তৃণমূল কংগ্রেস থেকে সাংসদ হন পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম আসনে। তাঁর বিরুদ্ধে সারদার অর্থ নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। সারদার ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হিসেবে নিয়োগ পেয়ে ৪২ লাখ রুপি নেন তিনি। যদিও বিভিন্ন কর কাটার পর তাঁর হাতে আসে ২৯ লাখ রুপি। ২৯ জুলাই ইডিকে তিনি জানিয়ে দেন, সারদার কাছ থেকে নেওয়া টাকা তিনি ফিরিয়ে দিতে চান। এ লক্ষ্যে তিনি ইডির কর্মকর্তাদের চিঠিও দিয়েছেন।
গত মাসে ইডি বা ভারতের এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট সারদা মামলার তদন্তের স্বার্থে তাঁকে চিঠি দেয়। দপ্তরে দেখা করার জন্য তাঁকে তলবও করে। কিন্তু এতে তিনি তেমন সাড়া দেননি। এরপর ২৯ জুলাই ফের চিঠি পাঠায় ইডি। সেই চিঠির জবাবে শতাব্দী রায় জানিয়ে দেন, সংসদ অধিবেশনের কারণে ৭ আগস্ট পর্যন্ত তিনি আসতে পারছেন না। এরপর তিনি হাজির হবেন ইডি দপ্তরে। একই সঙ্গে জানান, তিনি সারদার কাছ থেকে নেওয়া ২৯ লাখ রুপি ফিরিয়ে দিতে চান। অনুমতি মিললে তিনি ব্যাংক ডিডির মাধ্যমে সেই টাকা ফেরত দেবেন। এর আগে অমিতাভ বচ্চনও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন টাকা।
এর ধারাবাহিকতায় শতাব্দী রায় গতকাল বৃহস্পতিবার হাজির হন কলকাতার ইডি দপ্তরে। গতকাল শতাব্দী রায় ইডি দপ্তরে গেলে ইডির কর্মকর্তারা তাঁকে দেড় ঘণ্টা জেরা করে এই মামলায় তাঁর সম্পৃক্ত থাকা বা না থাকার সমর্থনে বেশ কিছু নথি চান। কিন্তু এখানে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা ওঠেনি। বরং ইডির তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়ে দেন, তিনি ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সারদার অ্যাম্বাসাডর থাকাকালে ২১ দফায় সারদার কাছ থেকে টাকা নিয়েছিলেন। তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ইডিকে শতাব্দী রায় আয়কর রিটার্ন, ব্যাংক আমানত ও সম্পত্তির নানা নথি দিয়েছেন। এখন ওই সব নথি খতিয়ে দেখছে ইডি। এরপর প্রয়োজনে তাঁকে ফের তলব করা হবে।
ইডি দপ্তর থেকে বেরিয়ে শতাব্দী রায় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘ইডি তদন্তের স্বার্থে আমার কাছে কিছু নথি চেয়েছিল, আমি তা দিয়েছি। তদন্তের স্বার্থে ইডি ডাকলে আবার আসব।’ আর শতাব্দীর আইনজীবী বিপ্লব গোস্বামী জানান, টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য শতাব্দী রায় ইডিকে কোনো চিঠি দেননি।
শতাব্দীর সঙ্গে সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেনের সুসম্পর্ক ছিল। সেই সুবাদে তিনি সারদার ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছিলেন।
পশ্চিমবঙ্গের দুটি চাঞ্চল্যকর আর্থিক দুর্নীতির মামলা সারদা ও রোজভ্যালি চিটফান্ড মামলা। সারদার মামলাটি ছিল ২১ হাজার কোটি রুপির আর্থিক দুর্নীতির আর রোজভ্যালিরটি ছিল ৬০ হাজার কোটি রুপির আর্থিক দুর্নীতি মামলা। এই দুটি মামলায় জড়িয়ে পড়েন পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূলের কয়েকজন নেতা, মন্ত্রী, সাংসদ ও বিধায়ক, যার মধ্যে ছিলেন শতাব্দী রায়ও।
২০১৩ সালে ফাঁস হয় সারদার আর্থিক দুর্নীতির ঘটনা। এই ঘটনায় সেদিন গ্রেপ্তার হন সারদার কর্ণধার সুদীপ্ত সেন, পরিচালক দেবযানী মুখার্জি, সারদার মিডিয়া সেলের কর্ণধার ও সাংসদ কুণাল ঘোষ, তৃণমূল সাংসদ সৃঞ্জয় বোস, তৃণমূল বিধায়ক ও মন্ত্রী মদন মিত্র, কলকাতা পুলিশের সাবেক মহাপরিচালক রজত মজুমদার প্রমুখ। এই সারদা মামলায় সাড়ে ১৭ লাখ ক্ষুদ্র আমানতকারীর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। পরে অবশ্য কুণাল ঘোষ, সৃঞ্জয় বোস, মদন মিত্ররা উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পান।
২০১৫ সালের মার্চে ফাঁস হয় রোজভ্যালি আর্থিক দুর্নীতির কথা। অভিযোগ ওঠে, ক্ষুদ্র আমানতকারীদের বিনিয়োগকৃত ৬০ হাজার কোটি রুপি আত্মসাতের। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার হন রোজভ্যালির কর্ণধার গৌতম কুণ্ডু। আরও গ্রেপ্তার হন তৃণমূল সাংসদ ও অভিনেতা তাপস পাল এবং সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মামলায়ও উচ্চ আদালত থেকে জামিনে মুক্ত আছেন তাপস পাল ও সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সারদা ও রোজভ্যালির কর্ণধাররা এখনো কারাগারে। এ দুটি মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই ও ইডি।