ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়ার পর থেকে দেশটির উত্তর–পূর্বের রাজ্যগুলোয় উদ্বেগ বাড়ছে। তারা সংবিধানের ৩৭১ অনুচ্ছেদ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছে। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্রনীতি, যোগাযোগসহ কয়েকটি বিষয় বাদে অন্য যেকোনো আইন রাজ্যটিতে প্রয়োগ করতে হলে ভারতীয় পার্লামেন্টকে অবশ্যই রাজ্য সরকারের সঙ্গে মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করেই তা করতে হবে।
সংবিধানের ৩৭১ অনুচ্ছেদের বিভিন্ন অনুচ্ছেদে কয়েকটি রাজ্যকে বিশেষ সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে। ৫ আগস্ট কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, এসব রাজ্য তাদের সেই বিশেষ সুরক্ষা হারানোর আশঙ্কা করছে।
গত সোমবার সন্ধ্যায় মিজোরামের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী লাল থানওয়ালা জম্মু ও কাশ্মীরের ঘটনাকে উত্তর–পূর্ব রাজ্যগুলোর জন্য ‘রেড অ্যালার্ট’ বলে উল্লেখ করেন।
জম্মু ও কাশ্মীরের ভাগ্যে যা ঘটেছে, তা নিয়ে সবচেয়ে বেশি উদ্বেগে আছে নাগাল্যান্ড রাজ্য। সেখানকার উদ্বেগের বিষয়টি ধরতে পেরে গত রোববার রাজ্যটির নতুন নিয়োগ পাওয়া গভর্নর আর এন রবি একটি বিবৃতি দেন। তাতে তিনি বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তা করতে নিষেধ করেন। তিনি বলেন, ৩৭১ (এ) অনুচ্ছেদে নাগাল্যান্ডের জন্য যেসব বিভাগ, তা পবিত্র অঙ্গীকার দ্বারা সুরক্ষিত।
৩৭১ অনুচ্ছেদে যেসব বিধান রয়েছে, তাতে উত্তর–পূর্ব অঞ্চলের অধিকাংশ ক্ষেত্রে উপজাতি সম্প্রদায় ও তাদের সংস্কৃতিকে সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে। এতে ওই সব রাজ্যে বিকেন্দ্রীভূত প্রশাসন ও নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন সুবিধা রয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় নিয়ম অনুযায়ী মামলা নিষ্পত্তির সুবিধাও রয়েছে। এর মধ্যে কিছু আইনে ওই রাজ্যের বহির্ভূত কোনো নাগরিকের কাছে জমি হস্তান্তরে বিধিনিষেধ রয়েছে। মিজোরাম, নাগাল্যান্ড ও আসামের কিছু অংশ, মণিপুর ও মেঘালয়ে এসব বিধি কার্যকর।
নাগাল্যান্ডের ন্যাশনালিস্ট গ্রুপের পক্ষ থেকে বর্তমানে আরও স্বায়ত্তশাসনের জন্য কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা চালানো হচ্ছে। তারা ইতিমধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি করে শান্তি আলোচনার পথে করেছে। গ্রুপটি দীর্ঘদিন ধনে নাগাল্যান্ডের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছে।
নাগা স্টুডেন্স ফেডারেশনের কর্মী নিনোটো আওমি বলেন, এখন প্রত্যেক নাগা অধিবাসী উদ্বেগে রয়েছে। নাগাদের অনন্য রাজনৈতিক ইতিহাস রয়েছে। এখন ৩৭১ (এ) অনুচ্ছেদের চেয়েও ভালো কিছু নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এখন আলোচনার মাঝখানেই যদি সরকার ৩৭১ (এ) অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে তাদের পক্ষে স্বল্পদৃষ্টিসম্পন্ন কাজ হবে।
নাগাল্যান্ডের উপজাতি সম্প্রদায়ের সংগঠন নাগা হোহোর প্রেসিডেন্ট পি চুবা অজুকুম বলেন, সংসদে বিজেপির সংখ্যা বেশি হওয়ায় মানুষের মনে ভয় বেড়েছে। তাদের সংখ্যা বেশি থাকায় তারা যা খুশি তা–ই করতে পারে। ৩৭১ (এ) অনুচ্ছেদ তুলে দিলে নাগাল্যান্ডে মারাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। এটা নাগাল্যান্ডের মানুষের পাশাপাশি ভারত সরকারের জন্যও খারাপ অবস্থা সৃষ্টি করবে।
৩৭১ (এ) অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়া ও বিজেপির সাম্প্রতিক কার্যক্রম নিয়ে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল নাগা পিপলস ফ্রন্টের নেতা আচুমবেমো কিকন বলেন, ‘মানুষের আত্মবিশ্বাসের কথা না ভেবে কাশ্মীরের বিষয়টি সরকার যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে, তাতে আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। নাগাল্যান্ডের বিধানে হাত দিতে তারা দ্বিধা করবে না।’ তথ্যসূত্র: স্ক্রল ডট ইন।