দেশের উচ্চ আদালতের নির্দেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখালেন পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. কামাল উদ্দিন তালুকদার। সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেই পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনের (পিডিবিএফ) বোর্ড সভা ডেকেছেন সচিব। সংস্থাটির আইন অনুযায়ী পদাধিকার বলে বোর্ডের চেয়ারম্যান হন সমবায়সচিব। বোর্ড চেয়ারম্যানের নির্দেশে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বোর্ড মিটিং ডাকার আইন থাকলেও সংস্থার আইন না মেনেই বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিব নিজেই বোর্ড সভা ডেকেছেন। একদিকে, হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞার আদেশ উপেক্ষা, অন্যদিকে, স্বায়ত্বশাসিত সংস্থা পিডিবিএফের নিজস্ব আইনকে উপেক্ষা করে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তিনি বোর্ড সভা ডেকে নিজের ব্যক্তিস্বার্থ হাসিল করার চেষ্টা করছেন।
অভিযোগ উঠেছে, পিডিবিএফের চাকরিচ্যুত কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বহাল করতেই একের পর এক আইন ভঙ্গ করে অন্যায়ভাবে হস্তক্ষেপ করে যাচ্ছেন পিডিবিএফের পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও সমবায়সচিব মো. কামাল উদ্দিন তালুকদার।
খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে প্রায় শতাধিক চিঠি পাঠিয়ে বিভিন্নভাবে দৈনন্দিন কাজে বাধাগ্রস্ত করেছেন এবং সচিব নিজেই বোর্ড মিটিং ডাকেন। শেষ পর্যন্ত নিরুপায় হয়ে গত ২৭ মে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একটি বেঞ্চে রিট মামলা করেন সংস্থাটির ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মদন মোহন সাহা। উচ্চ আদালত শুনানির পর বোর্ড সভা বন্ধসহ বেআইনি হস্তক্ষেপের বিষয়ে একটি রুল জারিও করেন। এরপর হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে সচিব কামাল উদ্দিনের পক্ষে আপিলও করা হয়। উভয় পক্ষের শুনানির পর ১৬ জুন আপিল বিভাগ থেকে চেয়ারম্যানের পক্ষে করা আবেদনটি খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টেও আদেশটি বহাল রাখার নির্দেশনা দেন আপিল বিভাগ। কিন্তু হাইকোর্টেও সেই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সচিব এক দিনের নোটিশে বোর্ড মিটিং ডেকে শুধু হাইকোর্টের রায়কে অমান্য করলেন না, রাষ্ট্রের আইনকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন বলে মনে করছেন আইনজ্ঞরা।
সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১ আগস্ট পিডিবিএফর বোর্ড অব গভর্নর্সের চেয়ারম্যান ও পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব কামাল উদ্দিন তালুকদার সই করা একটি নোটিশ জারি করেন। নোটিশে বলা হয়, পিডিবিএফের কার্যক্রম চলমান ও গতিশীল রাখার প্রয়োজনে কতিপয় অপরিহার্য জরুরি প্রয়োজনে ফাউন্ডেশনের বৃহত্তর স্বার্থে ৫ আগস্ট (আজ সোমবার) সকাল ১১টায় সমবায় বিভাগের সভাকক্ষে জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় সভাপতিত্ব করবেন সমবায়সচিব ও বোর্ডের চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন তালুকদার।
ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মদন মোহন সাহা বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের রায়কে উপেক্ষা করে যিনি একের পর এক আইন ভেঙেই চলছে, সেখানে আমরা কতটা অসহায় হয়ে পড়েছি সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। বোর্ড চেয়ারম্যানের অন্যায়ভাবে ডাকা বোর্ড মিটিং করার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করার পর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হলো, তারা আপিল করার পর খারিজ করে দিল তাদের আবেদন। কিন্তু এরপরও হাইকোর্টকে পাত্তা দিচ্ছেন না বোর্ড চেয়ারম্যান।
হাইকোর্টেও নিষেধাজ্ঞার পরও বোর্ড মিটিং ডাকতে পারেন কি-না? জানতে চাইলে সমবায়সচিব কামাল উদ্দিন বলেন, আদালতের নিষেদাজ্ঞার পরও বোর্ড মিটিং ডাকার সুযোগ আছে, সুযোগ না থাকলে আমি কিভাবে বোর্ড মিটিং ডাকলাম? সেই সুযোগটা কি ধরনের? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আপনাকে আমি ব্যাখ্যা দিতে পারব না। আমি ব্যস্ত আছি পরে কথা বলি বলেই লাইনটি কেটে দেন তিনি।
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সাবেক সচিব ও সংস্থাটির সাবেক চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায় বলেন, স্বশাষিত প্রতিষ্ঠানটিতে মন্ত্রণালয়ের সরাসরি হস্তক্ষেপ করার কোনো সুযোগ নেই। ব্যবস্থাপনা পরিচালকই নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী। নিয়োগ, পদোন্নতি ও চাকরি স্থায়ীকরণ বন্ধ করার চিঠি দেওয়া আর নিজেই বোর্ড মিটিং ডাকা কোনোভাবেই বোর্ডের চেয়ারম্যান করতে পারেন না, এটা এমডির মাধ্যমেই করবেন। একই কথা বললেন সংস্থাটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফজলুল হক খান। তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটিতে সকল ধরনের কাজের প্রধান নির্বাহী এমডি। পিডিবিএফ এর আইনে সেটা সুস্পষ্ট বলা আছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকার পর কিভাবে সভা ডাকেন?
জানা গেছে, ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে সারা দেশের দারিদ্র্যতা দূরীকরণের স্বপ্ন দেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তাই কানাডিয়ান সিডা থেকে পরবর্তী সময়ে সংসদে আইনের মাধ্যমে ১৯৯৯ সালে পল্লী দারিদ্র্য বিমোচন ফাউন্ডেশনটি স্বশাষিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে সারা দেশে সুনামের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। সেই প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ৬ হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং প্রতিষ্ঠানের সুবিধাভোগী পরিবার আছে ১০ লক্ষাধিক।