রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের ১৩৬ শাখা লোকসানে রয়েছে। এর মধ্যে সোনালী ব্যাংকের ৬৫, জনতা ব্যাংকের ৫৮, অগ্রণী ব্যাংকের ৯ এবং রূপালী ব্যাংকের ৪টি শাখা লোকসানে চলছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র বলছে, অতীতের তুলনায় এ সংখ্যা কিছুটা কমলেও এখনো চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের যে সংখ্যক শাখা লোকসানে রয়েছে তা উদ্বেগজনক। তাদের লোকসানি শাখা শূন্য করতে হবে। কোনভাবেই ব্যাংকের শাখা লোকসানে থাকা মেনে নেওয়া যায় না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে সোনালী ব্যাংকের ১ হাজার ১৯৬টি শাখা। জনতা ব্যাংকের ৮৭৩টি, অগ্রণী ব্যাংকের ৮৭৬টি শাখা, রূপালী ব্যাংকের ৫০৯টি শাখা রয়েছে। বর্তমানে সবচেয়ে কম রূপালী ব্যাংকের ৪টি শাখা চলছে লোকসানে। বেশি লোকসানে রয়েছে সোনালী ব্যাংকের শাখা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সূত্র বলছে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর এ সংখ্যক শাখা লোকসানি হবার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। এর মধ্যে প্রথম কারণ, সম্ভাব্যতা যাচাই না করে রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং চাপের মুখে ব্যাংকের শাখা খোলার অনুমতি দেওয়া। এর পরে রয়েছে- ঋণ প্রদানে অনিয়ম, আদায়ে ব্যর্থতা, আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি, যথাযথ পর্যবেক্ষণ ও তদারকির অভাব, নির্দেশিত হয়ে কার্যক্রম পরিচালনা, নিজস্ব দক্ষতার অভাব এবং পরিচালনায় চরম অব্যবস্থাপনা।
এদিকে, আগামী এক বছরে মধ্যে লাকসানী শাখা গুটিয়ে আনতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকে সর্তক করে দেন। তিনি ওই বৈঠকের বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
পাশাপাশি রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক সোনালী, জনতা, অগ্রণী ও রূপালী ব্যাংকের পরিচালনা খরচও কমাতে বলেছেন। না পারলে আগামী বছর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করতে চায় না বাংলাদেশ ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, যুগ-যুগ ধরে লোকসান গুনছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাণিজ্যিক চার ব্যাংকের শত-শত শাখা। রাজনৈতিক চাপের কারণে শাখাগুলো গুটিয়ে আনতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। লোকসানি শাখা কমাতে দফায়-দফায় চাপ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তথ্যমতে, লোকসানি শাখার সংখ্যা দেখে ১৯৮৪ সালে একটি কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিটি করা হয় বিশ্বব্যাংকের পরামর্শে। কমিটি সুপারিশ করে, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পুনর্গঠন জরুরি। এরপর ২০০২ সালে আবার দ্বিতীয় প্রকল্প নেওয়া হয়। ২০০৬ সালে ব্যাংকের সংশ্লিষ্টদের আরো দায়িত্বশীল করতে এগুলো করপোরেশন করতে বলা হয়। তবে মালিকানা থাকবে সরকারের। ২০০৭ সালে চুড়ান্ত ভাবে তা করা হয়। সেই মূহূর্তে চার ব্যাংকের লোকসানি শাখা ছিলো প্রায় সাড়ে তিনশ।
সাড়ে ৫ বছরের ২০০ শাখার উন্নতি হয়েছে। তবে সবগুলো যে লাভজনক হয়েছে তা নয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, সেগুলোর অনেক শাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অনেকগুলোকে অন্য কোনটির সঙ্গে মিলিয়ে একটি করে দেওয়া হয়েছে।
এদিকে লোকসানি শাখা থাকার পরেও রাষ্ট্রায়ত্ত এই ব্যাংকগুলোর প্রতি বছর নতুন করে শাখা খুলছে। তবে সেগুলোর অনুমতিও দেওয়া হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনা থেকেই।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের অব সাইট সুপারভিশন বিভাগের মহাব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘আমরা বারবার লোকসানি শাখা গুটিয়ে আনার তাগাদা দিচ্ছি। একই স্থানে দুটি শাখা থাকলে সমন্বয় করে একটি করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে চার ব্যাংকের খেলাপি ঋণ নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। চারটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণের হার প্রায় দ্বিগুণ, ১১ দশমিক ২৭ শতাংশ। এছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা খরচ কমিয়ে রাখার কথা বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষে।