ওয়ানডেতে এমন বছর আগে কাটেনি মোস্তাফিজ-তামিমের

ওয়ানডেতে এমন বছর আগে কাটেনি মোস্তাফিজ-তামিমের

এফটিপি অনুযায়ী এ বছর আর ওয়ানডে নেই। যদি আগামী পাঁচ মাসে বাংলাদেশ আর কোনো ওয়ানডে না খেলে শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়ে এ পঞ্জিকা বর্ষে ৫০ ওভারের ক্রিকেট শেষ সাকিব-তামিমদের। কেমন কাটল তাঁদের বছরটা?

ভবিষ্যৎ সফর সূচি (এফটিপি) অনুযায়ী এ বছর আর ওয়ানডে নেই বাংলাদেশ দলের। আগামী পাঁচ মাসে বিসিবি যদি আর কোনো দ্বিপক্ষীয় সিরিজ আয়োজন না করতে পারে, শ্রীলঙ্কা-সিরিজ দিয়েই এই বছর ৫০ ওভারের ক্রিকেট শেষ করল বাংলাদেশ। গত ছয় মাসে বাংলাদেশ অবশ্য একেবারে কম ওয়ানডে খেলেনি—১৮টি। সংখ্যায় আফগানিস্তান, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।

২০১৯ সালে ১৮ ম্যাচে বাংলাদেশ জিতেছে ৭টি। পরিসংখ্যান দেখে মনে হতে পারে গত চার বছরে ওয়ানডেতে নিজেদের সমীহ জাগানো এক দল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা বাংলাদেশ ৫০ ওভারের ক্রিকেটে খুব একটা ভালো বছর কাটাতে পারেনি। পরিসংখ্যান সব সময়ই প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে না। এই পরিসংখ্যানও বলবে না, এ বছরই বড় একটা বাধা বাংলাদেশ পেরিয়েছে, প্রথমবারের মতো জিতেছে কোনো ফাইনাল। মে মাসে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ জেতা বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্মরণীয় সাফল্য।

বিশ্বকাপে অষ্টম হলেও টুর্নামেন্টের মাঝ পর্যন্তও মাশরাফিদের পারফরম্যান্স ছিল বলার মতো। মনে রাখতে হবে, মাশরাফিরা এ বছর দেশের মাঠে কোনো ওয়ানডেই খেলেননি। বিদেশের মাটিতে ৭টি জয়—সাফল্যের বিচারে বছরটা সেরা তিনেই থাকবে। বাংলাদেশের বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বেশি জিতেছে ২০০৭ সালে—৮টি।

বাংলাদেশের ওয়ানডে বছরটা খারাপ না গেলেও দলের অন্যতম ব্যাটিং ভরসা তামিম ইকবালের গেছে খুব বাজে। বাঁহাতি ওপেনারের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু ২০০৭ সালে। ওই বছর ২১ ওয়ানডে খেলা তামিমের গড় ছিল ২১.৬৬। এর পর কখনো গড় ২৫-এর নিচে নামেনি। বরং বেশির ভাগ সেটি থেকেছে ৩০-এর ওপরে। ২০১৫ বিশ্বকাপের পর টানা চার বছর ধারাবাহিক দুর্দান্ত খেলেছেন তামিম। এই সময় তাঁর গড় ৬০-এর ওপরে ছিল। ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের পর শ্রীলঙ্কা সিরিজ—লম্বা রানখরায় ভুগতে থাকায় গড়ের লেখ চিত্রটা অনেক নিচে নেমে এসেছে তাঁর। এই বছর বাংলাদেশের প্রতিটি ওয়ানডে খেলা তামিমের গড় ২৪.৫৫। ২০১৫ সালে বাঁহাতি ওপেনার সেঞ্চুরি করেছেন ২টি, ২০১৬ সালে ১টি, ২০১৭ সালে ২টি, গত বছরও সেঞ্চুরি করেছেন ২টি। এ বছর তিন অঙ্কের দেখাই পাননি তামিম।

১৮ ম্যাচে ৩ ফিফটিতে ৪৪২ রান করা তামিমের ২০১৯ সালটা ভালো না কাটলেও এ বছর ওয়ানডেতে ভালো কেটেছে মুশফিক-সাকিবের। ১৮ ম্যাচে ৫০.২৬ গড়ে ১ সেঞ্চুরি ও ৫ ফিফটিতে ৭৫৪ রান করে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবার ওপরে মুশফিকুর রহিম। রানে মুশফিক সবার ওপরে থাকলেও সবচেয়ে সফল ছিলেন সাকিব আল হাসান। আঙুলের চোটে পড়ায় ফেব্রুয়ারিতে নিউজিল্যান্ড সফরে যেতে পারেননি। আবারও চোটে পড়লে মে মাসে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে খেলতে পারেননি। ১১ ম্যাচে ৯৩.২৫ গড়ে ২ সেঞ্চুরি ও ৭ ফিফটিতে করেছেন ৭৪৬ রান। ১৩ বছরের ক্যারিয়ারে এক পঞ্জিকা বর্ষে এটাই তাঁর সেরা ব্যাটিং পারফরম্যান্স।

বোলারদের মধ্যে উইকেট শিকারে সবচেয়ে সফল মোস্তাফিজুর রহমান। গত বছরের মতো এবারও চোটমুক্ত থেকে খেলেছেন। মোস্তাফিজ মাত্র দুটি ওয়ানডে মিস করেছেন। দুটিতেই টিম ম্যানেজমেন্ট তাঁকে বিশ্রাম দিয়েছে। ১৬ ওয়ানডেতে মোস্তাফিজের উইকেট ৩৪। এক বছরে এটাই তাঁর সর্বোচ্চ উইকেট শিকার। উইকেটপ্রাপ্তিতে খুশি হলেও মোস্তাফিজের হাসি উবে যাবে ইকোনমির দিকে তাকিয়ে। এ বছর ওভার প্রতি ৬.৭৭ রান দিয়েছেন বাঁহাতি পেসার। ওয়ানডেতে এত খরচে বোলিং আগের চার বছরে হয়নি। আগের চার বছরে ইকোনমি পাঁচের নিচেই থেকেছে।

এবার বেশির ভাগ উইকেট মোস্তাফিজ পেয়েছেন স্লগ ওভারে, যখন ব্যাটসম্যানদের আক্রমণাত্মক খেলা ছাড়া আর কোনো উপায় ছিল না। আক্রমণাত্মক খেলতে গেলে অতিরিক্ত ঝুঁকি নিতেই হবে। সেই ঝুঁকি নিতে গিয়ে মোস্তাফিজকে উইকেট দিতে হয়েছে বেশির ভাগ সময়ে। নতুন বলে বাঁহাতি পেসারের দুর্বলতা নতুন নয়। যদি ইনিংস মাঝের ওভারগুলোয় তিনি আরও বেশি উইকেট বের করতে পারতেন, প্রতিপক্ষকে চাপে রাখাটা আরও সহজ হতো। নির্দিষ্ট কিছু বৈচিত্র্য কাজে লাগিয়ে মোস্তাফিজ উইকেট ঠিকই পেয়েছেন, তবে রান গুনতে হয়েছে অনেক বেশি। বিষয়টা নিয়ে নিজেও যে ভীষণ চিন্তিত বিশ্বকাপের পর সেটি জানিয়েছিলেনও মোস্তাফিজ।

খেলাধূলা