সুভাষচন্দ্র দাস। এমএ পাস। বয়স প্রায় ৪০। কিন্তু উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরেও পেটের দায়ে জুতা পালিশ করতে হয় তাঁকে। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনার বাসিন্দা।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে ট্রেনের কামরায় জুতা পালিশ করতেন তিনি। স্বপ্ন দেখতেন, একদিন পরিস্থিতি বদলে যাবে। চাকরি করবেন, সংসার পাতবেন। দিন গড়িয়েছে ঠিকই। কিন্তু সুভাষের জীবন চলছে সেই একই রকম, দিন বদলায়নি তাঁর। এখনও রাস্তার পাশে বসে জুতো পালিশ করেন তিনি।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর ২৪ পরগনার সুন্দরবন-সংলগ্ন দক্ষিণ গোবিন্দকাটি গ্রামে থাকেন সুভাষ।
তিনি বলেন, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে এমএ করেছি। বহু চেষ্টা করেও সরকারি চাকরি পাইনি। কিন্তু সংসার তো চালাতে হবে।
তাঁর বাড়িতে অসুস্থ মা, ভাই এবং দুই বোন রয়েছে। সকলের ভরণপোষণের দায়িত্ব সুভাষেরই। সংসার চালাতে জুতা পালিশ করতেও আপত্তি নেই তাঁর। যোগেশগঞ্জ বাজারে ফুটপাতের ধারে সরঞ্জাম নিয়ে বসেন দু’বেলা। এরই ফাঁকে ছাত্র পড়ান।
বিমল ও রাধারানির দাসের ছয় সন্তানের একজন সুভাষ। তাদের দুই মেয়ের বিয়ে হয়েছে। এক ছেলে বিভাস ব্যান্ডপার্টির বাজনদার। নদীতে ভেসে আসা গরু-ছাগলের চামড়া ছাড়ানোর কাজ করতেন বিমল। সংসার তাঁর কোনোদিনই সচ্ছলতা ছিল না। এরমধ্যেই পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন সুভাষ। তিনি যোগেশগঞ্জ হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে ভর্তি হন কলকাতার রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সুভাষ জানানতাঁর জীবনের দীর্ঘ সংগ্রামের ইতিহাস। পরিবারে স্বচ্ছলতা ছিল না কোনও দিনই। কলেজে পড়ার সময়ে বারাসতে এক পরিচিতের বাড়িতে থাকতেন। সে সময়েও নিজের খরচ চালাতে প্ল্যাটফর্মে বা ট্রেনে জুতা সেলাই, পালিশের কাজ করতেন। কিন্তু যে বাড়িতে থাকতেন, সে বাড়ির মালিকের চোখে পড়ে যায় ঘটনাটা। তাতে হিতে বিপরীত হয়। জুতা পালিশ করলে তাঁর বাড়িতে জায়গা হবে না, সাফ জানিয়ে দেন মালিক।
তারপরের কয়েকটা দিন প্ল্যাটফর্মেই কাটে সুভাষের। স্থানীয় এক মুদি দোকানি তাঁকে নিজের বাড়িতে থাকতে দেন। সেখানে থেকে ছাত্র পড়িয়ে নিজের পড়ার খরচ চালাতেন সুভাষ।
সুভাষের স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক লক্ষ্মীকান্ত সাহা বলেন, ছোটবেলা থেকেই ছেলেটা মেধাবী। অনেক কষ্ট করে পড়াশোনা চালিয়েছে। এখনও যেভাবে সংসার চালাচ্ছে, তাকে কুর্নিশ না করে পারা যায় না।
হিঙ্গলগঞ্জের বিধায়ক দেবেশ মণ্ডল বলেন, উচ্চশিক্ষিত যুবককে জুতা পালিশ করতে দেখলে খারাপ তো লাগেই। সে যাতে একটা সরকারি চাকরি পায়, সেই চেষ্টা করছি।
সুভাষের জীবন শিখিয়েছে, কোনও কাজই ছোট নয়। সুভাষ বলেন, যে কাজ করে দু’বেলা দু’মুঠো খেতে পারছি, তাকে কোনোভাবেই ছোট বলতে পারি না। তবে হ্যাঁ, সরকারি চাকরির স্বপ্ন দেখাটা এখনও ছাড়তে পারিনি।
চাকরির পরীক্ষা দেন কি এখনও?-এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চাকরির পরীক্ষায় বসার টাকা কোথায়? আর সময়ও তো তেমন পাই না।