সম্ভাব্য অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ইপিজেড ফটক ও আশপাশ এলাকায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার বিমানবন্দর সড়কের ইপিজেড এলাকা দীর্ঘ ছয় ঘণ্টা অবরোধ করে রাখা হয়।
অবরোধ চলাকালে আন্দোলনকারী শ্রমিকদের একাংশ শনিবার ইপিজেড ফটকে তালা ঝুলিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেওয়ায় এই বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছেন বলে জানিয়েছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।
তবে শনিবার সকাল থেকে ইপিজেড অবরোধের কোনো লক্ষণ বা তৎপরতা দেখা যায়নি।
বাড়তি সতর্কতা হিসেবে বন্দর জোনের উপ-পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বে চারজন সহকারী কমিশনার, দুই জন ওসিসহ ইপিজেড এলাকায় প্রায় তিন শতাধিক পুলিশ মোতায়েন আছে। এর মধ্যে শিল্প পুলিশ রয়েছে দেড় শতাধিক।
এ প্রসঙ্গে উপ-কমিশনার কুসুম দেওয়ান বাংলানিউজকে জানান, বেলা ১১টা পর্যন্ত ইপিজেডে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে, শ্রমিকরা অন্যান্য দিনের মতো কাজে যোগ দিয়েছে। তবে পুলিশ সতর্ক অবস্থানে আছে। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবেলায় ইপিজেড এলাকায় ১০ প্লাটুন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে ইপিজেডের সার্বিক কার্যক্রম স্বাভাবিক থাকলেও ৪ নম্বর সেক্টরে একটি সোয়েটার কারখানায় বেতন পরিশোধের দাবিতে শ্রমিকরা কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করছে।
সিইপিজেডের মহাব্যবস্থাপক আব্দুর রশিদ ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বাংলানিউজকে বলেন, ‘অর্ডার না থাকায় ওই কারখানা লস দিয়ে চলছে। নিয়ম অনুযায়ী ইপিজেডে প্রতি মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন দেওয়া হয়। কারখানাটি চার দিন বন্ধ থাকার পর শ্রমিকরা আশা করেছিলো শনিবার তাদের বেতন দেওয়া হবে। কিন্তু মালিক পক্ষ বেতন দিতে না পারায় কয়েক শ’ শ্রমিক কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ করছে।
আমরা শ্রমিক ও মালিকপক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি সুরাহার চেষ্টা করছি। মালিকপক্ষ অল্প সময়ের মধ্যে বেতন পরিশোধের দিনক্ষণ জানাবে বলে আশ্বাস দিয়েছে।’
তবে ইপিজেডে অন্যান্য কারখানায় পুরোদমে উৎপাদন চলছে বলে তিনি জানান।
সিইপিজেডে ১৬৩টি কারখানায় মোট ১ লাখ ৭২ হাজার শ্রমিক কাজ করে।
উল্লেখ্য, এর আগে ইপিজেড এলাকায় দফায়-দফায় বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় কয়েক হাজার শ্রমিক সিইপিজেড এলাকায় ছয় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। বন্দর লেবার কলোনির মাঠে সমাবেশ করতে না পেরে রাস্তায় অবস্থানে নেয় তারা।
এদিকে সড়ক অবরোধের কারণে সাত কিলোমিটারব্যাপী দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়ে পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত ও বিমান বন্দরের সাথে নগরীর সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়।
পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে স্থানীয় কাউন্সিলর, বন্দর থানা ও শিল্প পুলিশ কর্মকর্তারা বাড়ি ভাড়া বাড়বে না বলে আশ্বাস দেওয়ার পর শ্রমিকদের একাংশ রাস্তা থেকে সরে যেতে রাজি হয়।
তবে অপর অংশ পুলিশের কথায় কান না দিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখার ব্যাপারে অনড় থাকলে পুলিশ লাঠিচার্জ ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এরপর রাত সাড়ে নয়টা থেকে বিমানবন্দর সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
এর আগে শিল্প পুলিশের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এ এসপি রেজাউল মাসুদ বাংলানিউজকে জানিয়েছিলেন, গত বছরের ডিসেম্বরের সিইপিজেডে সহিংসতার এক বছর পূর্তিতে একটি চক্র পুনরায় নাশকতার চেষ্টা চালাতে পারে বলে পুলিশের কাছে তথ্য ছিল। তাই বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির নামে মহাসমাবেশ ডেকে কেউ যাতে ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে না পারে, সে বিষয়টিকে সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসন সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।
উল্লেখ্য, কয়েক দিন ধরে বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির প্রতিবাদে লেবার কলোনির মাঠে শ্রমিক সমাবেশের জন্য প্রচার চালিয়ে আসছিলো শ্রমিকরা।