চাঞ্চল্যকর দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় চট্টগ্রামের আদালতে সাবেক পুলিশ কমিশনার এসএম সাব্বির আলীর সাক্ষ্যগ্রহণ আজ (বুধবার) শেষ হয়েছে। সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বুধবার বিকেলে সাব্বির আলীকে আংশিক জেরা করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
জেরা চলাকালে রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের মধ্যে বাদানুবাদ ও হট্টগোল হয়েছে। এসময় আদালতের নির্দেশে মতিউর রহমান নিজামী ও লুৎফুজ্জামান বাবর ছাড়া আট আসামিকে আদালতের নির্দেশে বেঞ্চ থেকে ডকে পাঠানো হয়। এরপর আদালত জেরা কার্যক্রম আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত মুলতবি করেন।
বুধবার বেলা পৌনে ১টা থেকে চট্টগ্রামের স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক এসএম মুজিবর রহমানের আদালতে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনায় এসএম সাব্বির আলীর দ্বিতীয় দফা জবানবন্দি উপস্থাপন শুরু হয়।
মঙ্গলবার দেওয়া জবানবন্দির ধারাবাহিকতায় বুধবার সাব্বির আলী বলেন, ‘২০০৪ সালের ১ এপ্রিল অস্ত্র আটকের পরদিন বেলা ৩টার দিকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সাবেক আইজিপি শহুদুল হক, ডিজিএফআই’র সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল সাদিক হাসান রুমি, র্যাবের সাবেক ডিজি আনোয়ারুল ইকবাল হেলিকপ্টারযোগে চট্টগ্রাম সেনানিবাসে অবতরণ করে গাড়িযোগে চট্টগ্রামে আসেন। চট্টগ্রামের জিওসি মেজর জেনারেল মইন উ আহমেদও তাদের সঙ্গে আসেন।’
তিনি বলেন, ‘অস্ত্র ও গোলাবারূদ পরিদর্শন শেষে দামপাড়া পুলিশ লাইনে আমার অফিস কক্ষে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মিটিং অনুষ্ঠিত হয়। মিটিং চলাকালে আমি স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও আইজি মহোদয়কে জানাই, ঘটনার সঙ্গে এনএসআই’র কতিপয় অফিসার জড়িত। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আমাকে বলেন- এখন আপাতত বিষয়টি নিয়ে কিছু বলবেন না ও কিছু করবেন না। তবে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হবে। তিনি আমাকে ও ডিসি (পোর্ট) কে এ বিষয়ে কোথাও কিছু না বলার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন।’
তিনি বলেন, ‘২০০৪ সালের ৪ এপ্রিল আমি উর্দ্ধতন পুলিশ কর্মকর্তাদের নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। এসময় সিইউএফএল কর্তৃপক্ষ আমাদের কোন সহযোগিতা করেনি। ৫ এপ্রিল পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন ও সাক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেন। তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান তৎকালীন স্বরাষ্ট্র সচিব ওমর ফারুককে বলি যে, ঘটনার সঙ্গে এনএসআই’র ডিজিসহ কতিপয় সদস্য জড়িত বলে মনে হয়। তিনি আমার কথায় গুরুত্ব না দিয়ে বিনা মন্তব্যে এড়িয়ে যান।’
তিনি বলেন, ‘মামলার তদন্ত তদারকিতে জানতে পারি, অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারূদ পরিবহনের জন্য ট্রাক এবং ট্রলার থেকে মাল নামানো ও ট্রাকে উঠানোর জন্য ক্রেন এনএসআই’র ফিল্ড অফিসার আকবর হোসেন ভাড়া করেন।’
জবানবন্দি প্রদান শেষে আসামি এনামুল হকের পক্ষে অ্যাডভোকেট মাহমুুদুল হক এবং লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে অ্যাডভোকেট আব্দুস সোবহান তরফদার সাক্ষীকে জেরা করেন।
জেরার শেষ দিকে বাবরের আইনজীবীর করা এক প্রশ্নে সাক্ষীর দেওয়া জবাবে আদালতে উপস্থিত আসামিপক্ষের আইনজীবীরা হেসে উঠেন। এসময় হইচই শুরু হলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও মহানগর পিপি অ্যাডভোকেট কামাল উদ্দিন আহমেদ দাঁড়িয়ে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান। এসময় তিনি বিচারককে আদালতের কার্যক্রম চলাকালে আসামিপক্ষের আইনজীবীদের এ ভূমিকার বিষয়ে নোট রাখতে বলেন।
আসামিপক্ষের আইনজীবীরা এর বিরোধিতা শুরু করলে উভয়পক্ষে বাকবিত-া শুরু হয়। এতে বিচারকও আসামিপক্ষের আইনজীবীদের উপর অসন্তোষ প্রকাশ করেন। এক পর্যায়ে বিচারক নিজামী ও বাবর ছাড়া বাকি আটজন আসামিকে ডকে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার এসএম সাব্বির আলীর আংশিক সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আদালতের কার্যক্রম মুলতবি করা হয়েছিল।
এদিকে বেলা ১২টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ মামলার সম্পূরক চার্জশিটভুক্ত ৮ জন এবং মূল চার্জশিটের ২ জনসহ মোট ১০ জন আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।
উল্লেখ্য, ২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএল) জেটিঘাটে দশ ট্রাক অস্ত্রের চালানটি ধরা পড়ে।
বিগত তত্তাবধায়ক সরকারের আমল থেকে প্রায় সাড়ে তিন বছর অধিকতর তদন্তের পর ২০১১ সালের ২৬ জুন সিআইডি আদালতে দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। এরপর ওই বছরের ১৫ নভেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করা হয়। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর থেকে সাক্ষ্যগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিচার।