গাড়ি পোড়ানোর মামালায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের ৩৪ নেতার জামিন আবেদন ফের নাকচ করে দিয়েছেন আদালত।
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. জহুরুল হকের আদালতে বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় শুরু হয়ে বেলা ১১টা ৫ মিনিট পর্যন্ত জামিন আবেদনের শুনানি চলে।
শুনানি শেষে দুপুরে সংশ্লিষ্ট আদালতের বিচারক ফখরুলসহ সব আসামির জামিন আবেদন নাকচ করে দেন।
এর আগে গত ১৬ মে তারা ঢাকার সিএমএম আদালতে আত্মসর্মপণ করলে মহানগর হাকিম এরফান উল্লাহ জামিন আবেদন নাকচ করে তাদের জেল হাজতে প্রেরণ করেছিলেন।
ওইদিন জামিন নাকচের পর আসামিদের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া ও অ্যাডভোকেট মাসুদ আহমেদ তালুকদার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম বিকাশ কুমার সাহার কাছে জামিন আবেদন পুনর্বিবেচনার আবেদন করলে বিচারক তাও নাকচ করে দেন।
এদিকে বুধবার আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে জামিন শুনানিতে অংশ নেন ব্যারিস্টার রফিক উল হক, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, অ্যাডভোকেট নিতাই রায় চৌধুরী, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদিন, ব্যারিস্টার আমিনুল হক, অ্যাডভোকেট মাহাবুব হোসেন, অ্যাডভোকেট মোসলেহ উদ্দিন জসিম।
আসামিদের জামিনের বিরোধীতা করেন মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আবু, জেলা পাবলিক প্রসিকিউটর খন্দকার আব্দুল মান্নান, অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর শাহ আলম তালুকদার, মো. কবির হোসাইন প্রমুখ আইনজীবী।
তবে ঢাকা বারের নেতাদের নামে মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের হওয়ায় তাদের কাউকে আদালতে উপস্থিত হতে দেখা যায়নি।
গত ১৭ মে সন্ধ্যায় পৃথক ১৬টি আবেদনের মাধ্যমে জোটের ৩৪ নেতার জামিন চাওয়া হয়।
আসামিরা হলেন- বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, স্থায়ী কমিটির সদস্য বিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব) আ স ম হান্নান শাহ, সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকা, এলডিপি চেয়ারম্যান কর্নেল (অব) অলি আহমেদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খোন্দকার মোশাররফ হোসেন, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম ফজলুল হক মিলন, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম, সংসদ সদস্য ও ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিবুন-উন-নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আমীরুল ইসলাম খান আলীম, সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান খোকন, ঢাকা মহানগর উত্তর যুবদলের সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেন সরদার, ঢাকা মহানগর যুবদলের সেক্রেটারি রফিকুল ইসলাম মজনু, বিজেপির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ, ঢাকা মহানগর উত্তরের স্বেচ্ছাসেবক দল আহ্বায়ক ইয়াছিন আলী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম নীরব, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের আহ্বায়ক আ. মতিন, ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রদল সাধারন সম্পাদক কামাল আনোয়ার আহমেদ লিটু, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রদল সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব, বিএনপি নেতা ও ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার আবুল বাসার, বিএনপি নেতা ও ৪০ নং ওয়ার্ড কমিশনার আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার, লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানা বিএনপি নেতা লুৎফর রহমান ওরফে এল রহমান, বিএনপির সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক নবী সোলায়মান, খিলগাঁও থানা বিএনপির সভাপতি সাবেক কমিশনার ইউনুছ মৃধা ও মোহাম্মদপুর থানার স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি মো. মান্নান হোসেন শাহীন।
জামিন চেয়ে আসামিদের আইনজীবীরা বলেন, ‘এটি একটি রাজনৈতিক মামলা, আসামিদের নামে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নাই। শুধুমাত্র রাজনৈতিকভাবে হয়রানী করার জন্যই এ মামলা করা হয়েছে। এ মামল নিয়ে চরম অশান্তির সৃষ্টি হচ্ছে। আদালতের উচিত যাতে অশান্তি সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা। এছাড়াও অনেক আসামি ঢাকায় ছিলেন না। তাদেরও এ মামলায় আসামি করা হয়েছে।’
দ্রুতবিচার আইনের ৪ ও ৫ ধারাটি জামিনযোগ্য বলেও তারা আদালতকে জানান।
জামিনের বিরোধীতা করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বলেন, `অনেক আসামি ঢাকায় না থাকলেও মোবাইলে অপর আসামিদের ভাঙচুরের নির্দেশ দিয়েছে। তাদের কথোপকথনের সিডি রেকর্ড করা আছে। তাদের মদদেই অপর আসামিরা ভাঙচুর ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। আসামিদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে।` এ সময় তারা জামিন নামঞ্জুরের আবেদন করেন।
দ্রুতবিচার আইনের ৪ ও ৫ ধারাটি অজামিনযোগ্য বলে তারা আদালতকে অবহিত করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ এপ্রিল বিএনপিসহ ১৮ দলীয় জোটের ডাকা হরতালের পর রাত ৯টা ৫ মিনিটে তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে একটি গাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হরতালকারীরা।
এ ঘটনায় তেজগাঁও থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক ইসমাইল মজুমদার বাদী হয়ে তেজগাঁও থানায় দ্রুতবিচার আইনের ৪ ও ৫ ধারায় এ মামলা দায়ের করেন।
মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের ৪৪ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়।
মামলায় উল্লেখ করা হয়, ৬/৭টি মাইক্রোবাসে করে আসামিরা এসে ঢাকা মেট্রো জ- ১১- ২১০৯ বাসটিতে ভাঙচুর করে ও আগুন ধরিয়ে দেয়।
গত ১০ মে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ জোটের ৪৫ জনের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের ইন্সপেক্টর নুরুল আমিন।
২১ মে সব আসামির বিরুদ্ধেই চার্জশিট আমলে নেন সিএমএম আদালত। ওইদিন জামিনে থাকা একমাত্র আসামি ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনের জামিন আবেদনও নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
তবে, মামলার অপর চার্জশিটভুক্ত আসামি জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল হোসেন, ঢাকা মহানগর জামায়াত নেতা বুলবুল ও ছাত্রশিবির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন সাঈদী পলাতক আছেন। তাদের পক্ষে এ পর্যন্ত আদালতে কোনো আবেদন করা হয়নি।