এখনও প্রচুর ‘পুরনো’ গাড়ি চলছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের কলকাতা শহরে। আর সেগুলো চলছে প্রশাসনের নজর এড়িয়েই। পরিবেশের দূষণ ঠেকাতে এবার ১৫ বছরের পুরনো বাণিজ্যিক যানবাহন ধরবে নজরদারি ক্যামেরা। সে জন্য কলকাতা ও হাওড়ার বিভিন্ন প্রান্তে ২৫-৩০টি ডিজিটাল চেকপোস্ট তৈরির কথা ভাবছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। ইতিমধ্যেই পরিবহণ দপ্তরের কর্মকর্তারা সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। ১৫ বছরের পুরনো কোনও বাণিজ্যিক যান যাতায়াত করলে বিশেষ প্রযুক্তির ক্যামেরা সেই গাড়ির নম্বরপ্লেট চিহ্নিত করবে। তার ভিত্তিতে পাকড়াও করা হবে গাড়িটিকে। খুব শিগগিরই এমন প্রযুক্তি চালুর চেষ্টা চলছে।
কিছু দিন আগে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্তর কলকাতা ও হাওড়ার বায়ুদূষণ সংক্রান্ত জাতীয় পরিবেশ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এই প্রেক্ষিতে কেন্দ্রীয় সরকারের সড়ক পরিবহন ও হাইওয়ে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এখন কলকাতায় ১৫ বছরের পুরোনো বাণিজ্যিক যানবাহনের সংখ্যা দু’লাখেরও বেশি। তবে রাজ্য পরিবহন দপ্তরের কর্মকর্তারা এই সংখ্যা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। যদিও নিয়ম অমান্য করে অনেক গাড়ি চলছে বলে তাঁদেরও নজরে এসেছে।
এবার বিজ্ঞানসম্মতভাবে এই ‘পুরনো’ গাড়ি ধরতে তোড়জোড় শুরু করেছে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার। এর আগে পরিবেশ আদালতে হলফনামা দিয়ে রাজ্য সরকার জানায়, বিধি অমান্য করে কত গাড়ি শহরে চলছে, তা নিয়ে ‘আইডিয়েশন টেকনোলজি সলিউশন’ নামে একটি বিশেষজ্ঞ সংস্থাকে দিয়ে সমীক্ষা করানো হচ্ছে। গত বছর এপ্রিলে সংস্থাটি তাদের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দেয় সরকারের কাছে। তারপর অবশ্য বিষয়টি খুব আর এগোয়নি। বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনা করে গাড়ির ধোঁয়ার দূষণ ঠেকাতে আবার উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার।
পরিবহন দপ্তর সূত্রের খবর, গত বছর এপ্রিলে ওই বিশেষজ্ঞ সংস্থার প্রাথমিক রিপোর্ট থেকে জানা গেছে, কলকাতায় মাসে দেড় লাখের মতো বাণিজ্যিক যানবাহন চলে। এর প্রায় ১০ শতাংশ ১৫ বছরের পুরনো। এর মধ্যে আবার পুলিশ, বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অনেক পুরনো গাড়িও রয়েছে। এবার ওই সংস্থার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে পরিবহণ দপ্তরের কর্মকর্তারা নিয়ম-ভঙ্গকারী গাড়িগুলোকে কীভাবে বন্ধ করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা করছেন।
জানা গেছে, এই গাড়িগুলোকে চিহ্নিত করতে কলকাতা ও হাওড়ার কয়েকটি নির্দিষ্ট পয়েন্টে চালু হবে ডিজিটাল চেকপোস্ট। সেখানে বিশেষ ধরনের ক্যামেরা বসানো হবে, যার সরকারি নাম ‘অটোমেটিক নম্বর প্লেট রেকগনিশন ক্যামেরা’। এক-একটি পয়েন্টে পাঁচ-ছ’টি করে ক্যামেরা থাকবে যেগুলো গাড়ির নম্বরপ্লেট, নিয়ম ভাঙার মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করবে। তারপর নিয়ম-ভঙ্গকারী গাড়িগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের ধরা হবে। পরবর্তী সময়ে এসব তথ্য ‘রিয়েল-টাইম’-এ নিয়ে যাওয়ারও চেষ্টা হবে। তাতে কোনও নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পয়েন্টে ‘পুরনো’ গাড়ি দেখা গেলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের কাছে মেসেজ যাবে। এতে পরের ক্রসিংয়েই ওই গাড়িটিকে ধরা যাবে।