জামায়াত-বিএনপির ৫৩ নেতাকর্মীর নামে অভিযোগপত্র

চট্টগ্রাম নগরীতে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনার ১০ দিনের মাথায় গাড়ি পোড়ানোর অভিযোগে দ্রুত বিচার আইনে দায়ের হওয়া দুটি মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেছে পুলিশ। দুটি অভিযোগপত্রে পৃথকভাবে ৫৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম বি এম নিজামুল হকের আদালতে মামলা দুটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন সংশ্লিষ্ট তদন্তকারী কর্মকর্তা।

কোতয়ালী থানার ওসি (তদন্ত) সদীপ কুমার দাশ অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘দ্রুত বিচার আইন অনুযায়ী মামলার এজাহার দাখিলের সাত কার্যদিবসের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করতে হয়। আইনি বাধ্যবাধকতা মেনেই অভিযোগপত্র দুটি দাখিল করা হয়েছে।’

আদালত সূত্রে জানা গেছে, পৃথক দুটি গাড়ি পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের হওয়া দুটি মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইনের ২০০২-এর ৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর মধ্যে নগরীর নাসিমন ভবনের সামনে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় কোতয়ালী থানার এসআই হারুনুর রশিদের মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন এসআই মো. জাফর ইকবাল। অভিযোগপত্রের নম্বর ২৪৬/০১।

মামলায় নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাৎ হোসেন, উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরী, নগর যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যার আবু আহম্মেদ হাসনাতসহ ৩০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে পর্যায়ক্রমে আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার হওয়া ১৫ জনের নাম প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে। তারা হলেন শরাফতউল্লাহ (২৮), সালাহউদ্দিন টিটু (২৭), সালাহউদ্দিন ভুট্টু (২৮), শহিদউল্লাহ প্রকাশ শহিদ (৩০), সাদ্দাম হোসেন (২২), আল আমিন (২১), গিয়াস উদ্দিন বাবলু (৩৫), এনামুল হক (২৭), ছালেহ আহম্মেদ (৩৫), শফি মিয়া (৪৫), আবুল কাসেম খান (৫০), রফিকুল ইসলাম (২৫), আমির হোসেন (২০), মো. মামুন (৩২), এস এম সালাহউদ্দিন (৩৫)।

মামলার পলাতক আসামিরা হলেন শেখ রাসেল (৩২), এম এ হাশেম রাজু (৪৭), আসলাম হোসেন চৌধুরী (৫০), আবুল হাশেম বক্কর (৪৫), আবু সাইদ রিপন (৩০), ডা. মো. শাহাদাৎ হোসেন (৪৮), আবু আহাম্মেদ হাসনাত, মোহাম্মদ হোসেন (৫০), নূরুল আমিন (২৭), ফয়সাল মোহাম্মদ ইউনূছ (৩৫), ইয়াছিন আরাফাত (২০), কলিম উল্লাহ (৪০), দেলোয়ার হোসেন (২৮), জসীম উদ্দিন (৩৫) এবং দোলোয়ার হোসেন (৩৭)।

প্রথম অভিযোগপত্রে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা চট্টগ্রামে বিএনপির রাজনীতিতে আলোচিত নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

অন্যদিকে ওয়াসার মোড়ে গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় এএসআই রফিকুল ইসলামের দায়ের করা মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও কোতয়ালী থানার এসআই মোহাম্মদ শাখাওয়াৎ হোসাইন। এতে নগর জামায়াতের আমির ও সাংসদ আ ন ম শামসুল ইসলামসহ ২৩ জনকে আসামি করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে পর্যায়ক্রমে আসামি হিসেবে যাদের নাম উল্লেখ করা হয়েছে তারা হলেন মো. মাঈন উদ্দিন ৯২৭), মো. আইয়ূব (২২), আব্দুল কাদের (৩১), জসিম উদ্দিন (২৫), সাইফুল ইসলাম (১৫), আব্দুস শুক্কুর (২৪), মুসলিম উদ্দিন (১৫), এরশাদুল ইসলাম (২৫), আ ন ম শামসুল ইসলাম (৫০), নজরুল ইসলাম (৪৫), আ ন ম হারুন (২৭), জাহিদ মাহমুদ (৩৫), মো. ইসমাইল (৩৫), মাসরুর হোসাইন (৩৩), মাওলানা মাঈনউদ্দিন রুহী (৪৭), মো. সোয়েব (৩২), ফয়সাল মো. ইউনূস (৩৮), আব্দুল মান্নান (৩৫), নাসির উদ্দিন (২৭), আবদুল মাবুদ (২৭), ইকবাল হোসেন (২৫), মো. শাহআলম (২২) এবং ফজলে কবির (৩০)।

দ্বিতীয় অভিযোগপত্রে যাদের আসামি করা হয়েছে তারা সবাই জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোটের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে।

উল্লেখ্য, গত ১৩ মে বিকেলে নগরীর নাসিমন ভবনের বিএনপি কার্যালয়ের সামনে ১৮ দলের সমাবেশ কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের সঙ্গে জোটের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে।

নগরীর কাজীর দেউড়ির মোড়ে জামায়াত-শিবিরের একটি মিছিলকে সারিবদ্ধভাবে সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য পুলিশের অনুরোধকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক, জোটের নেতাকর্মীসহ কমপক্ষে ১০০ জন আহত হন।

এ ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের জ্যেষ্ঠ নেতা, সাংসদসহ পৃথকভাবে মোট দুই হাজার ১০০ জনকে আসামি করে নগরীর কোতয়ালী থানায় চারটি ও খুলশী থানায় দুটিসহ মোট ছয়টি মামলা দায়ের করে পুলিশ।

রাজনীতি