বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মাত্রা মাত্র দিন দিন বেড়েই চলছে। এটা নিয়ে উন্নত এবং উন্নয়নশীল বিশ্বের অধিকাংশ দেশই কমবেশি উদ্বিগ্ন। আর এই উদ্বেগের মধ্যে সারা বিশ্বের পৃষ্ঠের তাপমাত্রার হালনাগাদ তথ্য-উপাত্ত প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। তারা জানিয়েছে, গত একশ ৩৯ বছরের মধ্যে সবচেয়ে উষ্ণতম মাস ছিল চলতি বছরের জুন মাস। বিগত বছরের সব রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে এবারের জুন। এদিকে জুলাই মাস হতে পারে জুন মাসের থেকেও উষ্ণ। শুধু তাই নয় এই বছরের প্রথম ছয় মাসেই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের দ্বিতীয় স্থানটি দখল করেছে।
নাসা বলছে, গা পোড়ানো জুনের জন্য দায়ী ইউরোপে নজির গড়ে ফেলা তাপপ্রবাহ, গোটা সুমেরু ও ইউরেশিয়ার তাপমাত্রা বৃদ্ধি আর পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি। এর আগে প্রায় একই কথা জানিয়েছিল ইউরোপের ‘কোপারনিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস’।
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা জানিয়েছে, ১৯৫১ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর তিন দশকের তাপমাত্রাকে ‘বেসলাইন’ ধরে নাসা দেখেছে, জুনে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা যা থাকা উচিত, সদ্য ফেলে আসা জুনের গড় তাপমাত্রা ছিল তার চেয়ে ১ দশমিক ৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ০ দশমিক ৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরে। অভিজ্ঞতার নিরিখে যা এক কথায়, অস্বাভাবিক। অভূতপূর্ব।
গা পোড়ানো জুন এর আগেও এক বার দেখেছিলাম আমরা। তিন বছর আগে, ২০১৬ সালে। কিন্তু সে বার জুনের গড় তাপমাত্রা ছিল ‘বেসলাইনে’র গড় তাপমাত্রার ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ০ দশমিক ৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরে। এ বছরের জুনের তাপমাত্রা সেই রেকর্ডও ভেঙে দিল।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জুন মাসের থেকেও জুলাই মাসে গরম বেশি পড়বে। ফলে, এই জুলাই মাসটা যতটা গা ঝলসানো হবে, এই মাসে ততোটা গরম এর আগে কখনও দেখা যায়নি।
পেনসিলভানিয়া স্টেট ইউনিভার্সিটির জলবায়ু বিশেষজ্ঞ মাইকেল ম্যান তার টুইটে লিখেছেন, এই জুলাই যদি আমাদের হিসাবে থাকা বছরগুলোর মধ্যে উষ্ণতম জুলাই হয়ে ওঠে (যা হওয়ার সম্ভাবনা যথেষ্টই), তা হলে তা হবে এখনও পর্যন্ত আমাদের রেকর্ডে থাকা পৃথিবীর উষ্ণতম মাস।
হঠাৎ করেই কেনো এতটা গরম পড়ছে বিশ্বব্যাপী তার কয়েকটি কারণও দেখিয়েছে নাসা। তার জানিয়েছে, জুনের শেষ সপ্তাহে পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে যে ভয়াবহ তাপপ্রবাহের ঘটনা ঘটেছে, গত কয়েক শতকের মধ্যে ওই সময় পৃথিবীতে যা হয়নি। ফ্রান্স তার ইতিহাসে যে তাপমাত্রায় কোনো দিন পৌঁছতে পারেনি, গত জুনের শেষ সপ্তাহের তাপপ্রবাহে ফরাসি বিপ্লবের দেশের ১৩টি জায়গার উষ্ণতা তা ছাপিয়ে গিয়েছে। ওই সময় ফ্রান্সে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ছিল গালার্গ লো মোঁত্যো অঞ্চলে। ১১৪ দশমিক ৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা ৪৫ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২০০৩ সালের দিকে জুলাইয়েও ভয়ঙ্কর তাপপ্রবাহ হয়েছিল ফ্রান্সের গালার্গ লো মোঁত্যোয়। তবে এ বার তাপমাত্রা ছিল তার চেয়েও ৩ দশমিক ২ ডিগ্রি ফারেনহাইট উপরে।
এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফল সবচেয়ে বেশি ভোগ করতে হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের তিনটি শহরে। নিউ ইয়র্ক, ওয়াসিংটন ডিসি এবং সিকাগো শহরে একশ ডিগ্রির সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্র রেকর্ড করা হতে পারে বলে জানিয়েছে ইউএসটুডে।
এদিকে বাংলাদেশেও তাপমাত্রা দিন দিন বেড়ে চলছে। গত জুন মাসে রাজধানীতে আসহ্য মাত্রার গরম পড়েছিল। জুলাই মাসের শুরুতেও একই চিত্র ছিল। কিন্তু জুলাই মাসের শুরুতে কয়েকদিন বৃষ্টি ছিল। তবে আজ থেকে আবারও অসহনীয় গরম পড়তে শুরু করছে।
সূত্র: টপবাজ, ইউএসটুডে।