ভারী স্বয়ংক্রিয় হাতুড়ির শব্দ আর শোনা যাবে না। আড়াই বছর ধরে রাতে হাতুড়ি চালানোর শব্দ শুনে দূর গ্রামের মানুষ বলে দিত এ তো পদ্মা সেতুর কাজ শুরু হয়েছে। গতকাল রবিবার সেতুর ২৬ নম্বর পিয়ারের ৭ নম্বর পাইলটি স্থাপনের মধ্য দিয়ে এ কাজের সমাপ্তি হলো। এখন আর সেতু তৈরিতে কোনো প্রতিবন্ধকতার আশঙ্কা থাকল না।
শেষ পাইলটি স্থাপন উপলক্ষে প্রকল্প এলাকায় আনন্দ আয়োজন করেন সেতুর দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, কর্মকর্তা আর কর্মীরা।
পদ্মা সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাতুড়ির পরিচিত শব্দটি আর কানে আসবে না। তবে বড় চ্যালেঞ্জের কাজটি যে সম্পন্ন হয়েছে, এটিই হচ্ছে অনেক ভালো লাগার। তা বলে বোঝাতে পারব না।’
তিনি আরো বলেন, ‘সেতুর পিয়ারের পাইল স্থাপনের কর্মযজ্ঞটি ছিল নানা চ্যালেঞ্জে ভরা। উত্তাল পদ্মাকে জয় করার এই প্রচেষ্টা এখন সাফল্যে রূপ নিয়েছে। এখন বাকি কাজও আমরা সফলভাবে শেষ করতে পারব।’
প্রকৌশলী দেওয়ান আব্দুল কাদের বলেন, ‘গতকাল সকাল ১১টা ২৫ মিনিটের সময় শেষ পাইলটি স্থাপনের কাজ শুরু করি। এ উপলক্ষে প্রকল্প এলাকায় সেতুর চীনা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান সেলিব্রেশন করেছে। চীনা ভাষায় টানানো হয় ব্যানার-ফেস্টুন।’
তিনি জানান, ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মূল সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন। এর পর থেকে পাইল বসানোর কাজ শুরু হয়। নানা জটিলতার মধ্যে তাঁদের কাজ করতে হয়েছে। পদ্মা নদীর মাটির বৈচিত্র্যতার কারণে পাইলের নকশায় পরিবর্তন আনতে হয়েছে।
মুন্সীগঞ্জ-২ (লৌহজং-টঙ্গিবাড়ী) আসনের সংসদ সদস্য সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, ‘পদ্মা সেতু ছিল মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর একটি চ্যালেঞ্জিং কাজ। সব ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করে আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতুর কাজে হাতে দেন তিনি। আজ (রবিবার) একটি বড় চ্যালেঞ্জ পার হয়েছে। সেতু নির্মাণে এখন আর তেমন কোনো বাধা নেই।’
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ৪২টি পিয়ারের ওপর ৪১টি স্প্যানে গড়ে উঠবে পুরো পদ্মা সেতু। মূল নদীতে ৪০টি পিয়ার থাকবে। নির্মাণকাজের শুরুতে মূল নদীর প্রতিটি পিয়ারে পাইলের সংখ্যা ছিল ছয়টি করে। আর দুই প্রান্তে ১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারে ১২টি করে ২৪টি পাইল ছিল। কিন্তু নদীর গভীর তলদেশে কাদামাটির স্তর থাকায় নকশা পরিবর্তন করতে হয়। গত বছরের শেষ দিকে করা নতুন নকশায় ১ ও ৪২ নম্বর পিয়ারে ১৬টি করে মোট ৩২টি পাইল রাখা হয়। আর ২২টি পিয়ারে সাতটি করে ১৫৪টি এবং ১৮টি পিয়ারে ছয়টি করে মোট ১০৮টি পাইল রাখা হয়। এর মধ্যে ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ১৪টি স্প্যান বসানো হয়েছে। এতে সেতুর দুই হাজার ১০০ মিটার দৃশ্যমান এখন।
দায়িত্বশীল একজন প্রকৌশলী জানান, সেতুর ৪২টি পিয়ারের মধ্যে ৩০টি পিয়ারের কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যে বাকি ১২টি পিয়ারের কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। মূল সেতুর ৮১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। নদীশাসন কাজের অগ্রগতি ৫৯ শতাংশ। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৭১ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, পাইলগুলো বসানোর কাজ শেষ হওয়ায় এ বছরের মধ্যে চেষ্টা করা হবে সবকটি পিয়ারের নির্মাণকাজ শেষ করতে। একই সঙ্গে স্প্যান বসানোর কাজও চলবে।