মিশরের গত বছরের ফেব্রুয়ারির ঐতিহাসিক বিপ্লবের ১৫ মাস পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এতে দেশটির প্রায় পাঁচ কোটি মানুষ তাদের ভোটাধিকার প্রদান করছে। বহু প্রতীক্ষিত এ নির্বাচনের মাধ্যমে মিশরের মানুষ এই প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্ট পেতে যাচ্ছে।
বুধবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। অনেক ভোট কেন্দ্রে ভোটারদের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। ভোটের মাধ্যমে এই প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সুযোগ পাওয়ায় মিশরীয় নাগরিকদের মধ্যে বেশ উৎসাহ উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে এক ঐতিহাসিক বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পতন ঘটে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের। এরপর দেশের শাসনভার গ্রহণ করে সেনাবাহিনীর বাহিনীর সুপ্রিম কাউন্সিল। বেসামরিক আইনের আওতায় স্বচ্ছতার প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আয়োজন তারাই করেছে।
সাবেক সেনা কমান্ডার হোসনি মোবারক ১৯৮১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত মিশরের প্রেসিডেন্ট পদ আঁকড়ে ছিলেন।
নির্বাচনে মোবারক সমর্থকদের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছে ইসলামপন্থি কট্টর, উদারপন্থি এবং বিপ্লবী দলগুলো।
প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাদের মধ্যে লড়াই হবে বলে মনে করা হচ্ছে তারা হলেন- বিমান বহিনীর সাবেক কমান্ডার আহমেদ শফিক। গত বছর বিপ্লবের পর সামিয়িক সময়ের জন্য মিশরের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
আমর মুসা, যিনি হোসনি মোববারকের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন এবং আরব লিগের সাবেক প্রধান।
এরপর আছেন মুসলিম ব্রাদারহুডের রাজনৈতিক শাখা ফ্রিডম অ্যান্ড জাস্টিস পার্টির নেতা মোহাম্মদ মুরসি এবং ইসলামপন্থি স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মুনেম আবুল ফাতহ।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী কামাল আল-গানজুরি একটি শান্তিপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘ভোটারদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নির্বাচনী ফলাফল মেনে নেওয়ার জন্য আমি নির্বাচনী প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের শাসনামলে মিশরে বৈদেশিক বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। কমে যায় দেশটির পর্যটনখাতের রাজস্ব আয়ও। এখন একটি গণতান্ত্রিক সরকার মিশরে উন্নয়নে কতোটা দক্ষতার প্রমাণ রাখতে পারে সেটাই দেখার প্রতীক্ষায় বিশ্ববাসী।
মিশরের আগের সংবিধানে সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের অনেক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এখন নবনির্বাচিত সংসদে নতুন সংবিধান অনুমোদন না হওয়া পর্যন্ত এটা পরিষ্কার করে বলা যাচ্ছে বিপ্লব পরবর্তী মিশরের নতুন প্রেসিডেন্টে ক্ষমতার আওতা কেমন হবে।
এছাড়া, বর্তমান সংসদ এবং ক্ষমতাসীন সামরিক সুপ্রিম কাউন্সিলের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব চলছে। এ অবস্থায় তারা প্রেসিডেন্টে ক্ষমতা কতোটা সংরক্ষিত রাখতে রাজি হবে সেটাও বিবেচনার বিষয়।