দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। সচিবালয়ের ৬ নম্বর ভবনের পঞ্চম তলার ৪২৫ নম্বর রুমে খোলা হয়েছে এ নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। নিয়ন্ত্রণ কক্ষের ফোন নম্বর ০২৯৫৭০০২৮।
আজ শুক্রবার (১২ জুলাই) বিকেলে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আবু নাছের জানান, নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে সারা দেশে বন্যা সংক্রান্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। বন্যা-সংক্রান্ত তথ্য প্রদানের জন্য সবাইকে নিয়ন্ত্রণ কক্ষের বর্ণিত নম্বরে ফোন করার অনুরোধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন পানি উন্নয়ন বোর্ডের ‘বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র’ এর টোল ফ্রি ১০৯০ নম্বরে ফোন করার পর ৫ প্রেস করে জানা যাবে বন্যার পূর্বাভাস-সংক্রান্ত তথ্য।
একইভাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও খোলা হয়েছে নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানান, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মেডিক্যাল টিম গঠন করেছে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট প্রস্তুত রেখেছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে।
এদিকে, ভারী বর্ষণের কারণে ১০ জেলায় নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এসব জেলায় বন্যা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কায় ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে সরকার। দুর্গত জেলাগুলোতে পাঠানো হয়েছে সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিকটন চাল এবং ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার এবং দুই কোটি ৯৩ লাখ নগদ টাকা।
দুই-এক দিনের মধ্যে এসব জেলায় ৫০০টি করে তাঁবু এবং মেডিক্যাল টিমের পৌঁছে যাবে বলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান জানান।
সচিবালয়ে শুক্রবার আন্তঃমন্ত্রণালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটির এক সভা শেষে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বৃষ্টির কারণে দেশের কয়েকটি অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় মাঠ পর্যায়ের সঙ্গে সমন্বয় করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
ত্রাণ সচিব শাহ কামাল বলেন, যেসব জেলা দুর্গত হতে পারে সেগুলোর পাশাপাশি অন্য জেলাগুলোতেও সমান প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি জেলায় দুই হাজার প্যাকেট করে মোট ৫০ হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার পাঠানো হয়েছে। একটি প্যাকেটে চিড়া, মুড়ি, বিস্কুট, তেল, আটা, মসুরের ডাল, শিশু খাবারসহ একটি পরিবারের সাত দিনের খাবার রয়েছে।
এখন পর্যন্ত দুই কোটি ৯৩ লাখ টাকা এবং দুই দফায় সাড়ে ১৭ হাজার মেট্রিকটন চাল বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়েছে জানিয়ে শাহ কামাল বলেন, কোনো জেলা প্রশাসক চাহিদা পাঠানোর সঙ্গে সঙ্গে চাল দেওয়া হবে।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং সরকারি দপ্তর বন্যা মোকাবেলায় যেসব প্রস্তুতি নিয়েছে সেগুলো বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন এনামুর। তিনি বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো যাতে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা যায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত জনগণকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে সব ধরনের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
সিভিল সার্জনদের নেতৃত্বে টিম গঠন করা হয়েছে যাতে পানিবাহিত রোগ বিস্তার রোধ করা যায়। খাদ্যগুদামের কর্মরতদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা আশা করি এই বন্যায় আমরা মানুষের জীবন রক্ষা করতে তো পারবই, গবাদিপশু এবং খাদ্যশষ্যেরও নিরাপত্তা দিতে পারব। তিনি বলেন, রবিবার থেকে ডিসি সম্মেলনে অংশ নিতে সব ডিসি ঢাকায় থাকবেন। ভারপ্রাপ্ত ডিসি হিসেবে যারা দায়িত্বে থাকবেন তাদের কেন্দ্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে দায়িত্ব পালনের জন্য ইতোমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করি সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে প্রতিবারের মত বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় আমরা সফল হব।
প্রতিমন্ত্রী জানান, আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে জায়গার অভাব হলে ব্যবহারের জন্য দুর্গত এলাকাগুলোতে ৫০০টি করে তাঁবু পাঠাতে বলা হয়েছে। প্রত্যেক তাঁবুতে ২০ জন করে থাকতে পারবে।