বিএনপি এমপিদের যোগদানে উত্তেজনা ফিরেছে সংসদে

বিএনপি এমপিদের যোগদানে উত্তেজনা ফিরেছে সংসদে

একাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বাজেট অধিবেশন শেষ হয়েছে। মাত্র ২১ কার্যদিবসের এই অধিবেশন গত দুই অধিবেশন থেকেও প্রাণবন্ত ছিল। মাঝেমধ্যে সরকার ও বিরোধীদলের সদস্যদের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য উত্তেজনা ছড়িয়েছে অধিবেশন কক্ষে।

বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা যোগদানের কারণে সংসদে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু উত্থাপিত হয়েছে, ফিরেছে উত্তেজনা। এ ক্ষেত্রে বিরোধীদলের দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের মাধ্যমে সংসদ আরো বেশি প্রাণবন্ত হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দশম সংসদের বিরোধীদল জাতীয় পার্টি সরকারের অংশীদার হওয়ায় তা নিয়ে সমালোচনা ছিল। এ কারণে এবার তারা পুরোপুরি বিরোধীদলের ভূমিকা পালনে বর্তমান মন্ত্রিসভার বাইরে থাকলেও বিগত দুই অধিবেশনে পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি দেখা যায়নি। কিন্তু পরিস্থিতি পাল্টে যায় নানা নাটকীয়তার পর বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্যরা যোগদানের পর থেকে।

নির্বাচনে অনিয়ম ও ভোট কারচুপির অভিযোগ এনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এমপিরা শপথ অনুষ্ঠান বর্জন করলেও পরে শপথ গ্রহণ করে সংসদ অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। সর্বশেষ বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে বিজয়ী গোলাম মো. সিরাজের শপথগ্রহণের মধ্য দিয়ে বিএনপির সাতজনসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সদস্য সংখ্যা ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

অধিবেশন চলাকালে আইন প্রণয়ন, প্রশ্নোত্তর, জনগুরুত্বপূর্ণ নোটিশসহ অন্যান্য কার্যক্রমে তাঁদের সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে দেখা যায়। পয়েন্ট অব অর্ডারে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তাঁদের কথা বলতে দেখা গেছে। অধিবেশনে জাতীয় পার্টির সদস্যরাও ছিলেন সক্রিয়। তবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সদস্যদের অভিযোগের জবাব তাঁদের দিতে দেখা গেছে, যে কাজটি ছিল সরকারদলীয় সদস্যদের।

অধিবেশনে গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির মতো ইস্যুতে সরকারের শরিক ওয়ার্কার্স পার্টি সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননকে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে। সরকারের আরেক শরিক জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু বিভিন্ন ইস্যুতে ছিলেন সক্রিয়।

অধিবেশনে আপত্তি ওঠে বিএনপিদলীয় সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ ও ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানার বক্তব্যে। এমনকি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা যে কোনো ইস্যুতে কথা বলার জন্য দাঁড়ালেই অধিবেশন কক্ষে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়তে দেখা গেছে। এই প্রেক্ষাপটে অধিবেশনে সমাপনী ভাষণে এমপিদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।

সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে স্পিকার বলেন, আমাদের এই সাফল্যের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে অব্যাহত রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা। সংসদীয় গণতন্ত্রের অব্যাহত চর্চার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। সংসদকে কটাক্ষ, কটূক্তি করা, অবমাননাকর বক্তব্য দেওয়া প্রত্যাশিত নয়। তা গণতন্ত্রের ভিতকে দুর্বল করে। অসাংবিধানিক শক্তিকে উৎসাহিত করে। অতীতে আমরা দেখেছি সামরিক আইন জারি করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের ঘটনা। সংসদকে অমর্যাদা করা দেশ জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনে না। তিনি আরো বলেন, সংসদ জনগণের কথা বলে। আসুন সংসদের মর্যাদা সমুন্নত রাখি। সংবিধানের আলোকে জনগণের উন্নয়নে কাজ করি।

এদিকে, গত ১১ জুলাই শুরু হওয়া বাজেট অধিবেশনে ১৩ জুন চলতি অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উত্থাপন হয়। ওই বাজেটের ওপর ২৬৯ জন সংসদ সদস্য ৫৫ ঘণ্টা ৩৬ মিনিট আলোচনায় করেন। এর আগে এত বেশি সংসদ সদস্য বাজেটের ওপর আলোচনার সুযোগ পাননি। বাজেট আলোচনায় সরকারের মন্ত্রী, সরকারি-বিরোধীদলের সদস্যরা অনেকেই সঞ্চয়পত্রে ওপর উৎসে কর আরোপের বিরোধিতা করেন। যদিও তা আমলে নেননি অর্থমন্ত্রী। বড় ধরনের কোনো সংশোধনী ছাড়াই ২৯ জুন অর্থবিল-২০১৯ ও ৩০ জুন বাজেট পাস হয়েছে।

সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বাজেট ছাড়াও এই অধিবেশনে সাতটি বিল পাস হয়েছে। এর মধ্যে আলোচিত আইন-শৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) (সংশোধন) বিল রয়েছে। এ ছাড়া ৭১ বিধিতে পাওয়া ২৩৫টি নেটিশের মধ্যে ১২টি নোটিশ গ্রহণ করা হয়। যার মধ্যে আলোচনা হয়েছে পাঁচটি। ৭১ (ক) বিধিতে ৭৫টি নোটিশ আলোচিত হয়েছে।

অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রীর উত্তর দেওয়ার জন্য প্রশ্ন জমা পড়ে ৯৩টি। যার মধ্যে প্রধানমন্ত্রী জবাব দেন ৪১টি প্রশ্নের। এ ছাড়া অন্যান্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীদের জন্য দুই হাজার ২৭৪টি প্রশ্ন জমা পড়ে; মন্ত্রীরা উত্তর দেন এক হাজার ৬৫৮টির। বিএনপিদলীয় এমপি মো. হারুনুর রশীদ ১৪৮ বিধিতে ৪টি মূলতবি প্রস্তাব জমা দিলেও তা গ্রহণ করেননি স্পিকার। আর সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি নিয়ে সংসদে সাধারণ আলোচনার জন্য নোটিশ জমা দিলেও সেবিষয়ে স্পিকার কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি।

তবে অধিবেশন নিয়ে অভিযোগ রয়েছে বিএনপি এমপিদের। সংসদে কথা বলার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাননি বলে দাবি করেছেন সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ। তিনি বলেন, চারবারের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের পাঁচবার নির্বাচিত এমপিকে সামনের সারিতে আসন দেওয়া হয়নি। আবার কথা বলতে চাইলে চাহিদা অনুযায়ী সময় না দিয়ে মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবার সরকারি দলের সদস্যরা হৈ হট্টগোল করে তাঁদের বক্তব্য কাউকে শুনতে দেননি। যা সংসদীয় গণতন্ত্রের জন্য সুখকর নয় বলে তিনি দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো. ফজলে রাব্বী মিয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, এবারের সংসদ অধিবেশন আগের থেকে প্রাণবন্ত ছিল। অনেক বিষয়েই প্রাণবন্ত বিতর্ক হয়েছে। বিরোধীদলকে কথা বলার জন্য আনুপাতিক হারে বেশি সময় দেওয়া হয়েছে। তবে সংসদকে আরো বেশি কার্যকর করতে বিরোধীদলীয় সদস্যদের আরো বেশি দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর