দেশের শাসন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে

দেশের শাসন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে

২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশে পরিণত হবে আবরো আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই সময়ের মধ্যে দেশের শাসন ব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ করা হবে। এ জন্য সরকারি ব্যয়ের সিংহভাগ বাস্তবায়িত হবে স্থানীয় পর্যায়ে। স্থানীয় প্রশাসন এ দায়িত্ব পালন করবে। স্থানীয় প্রশাসন ও কেন্দ্রের সুস্পষ্ট সমন্বয়ের মাধ্যমে পরিকল্পনা করা হবে।

বুধবার জাতীয় সংসদ অধিবেশনে লিখিত প্রশ্নোত্তর পর্বে তিনি এ কথা জানান। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনে লিখিত জবাবে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সমৃদ্ধ ও উন্নত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় দুঃখী ও অসহায় মানুষের মুখে হাসি ফোটানোই আওয়ামী লীগ সরকারের মূল লক্ষ্য। আর এ লক্ষ্য পূরণে নিরলসভাবে কাজ করতে আমি ও আমার সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ।

সরকার দলীয় সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, সার্বিকভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতি শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। বিনিয়োগ ক্রমাগত বাড়ছে, রপ্তানি এবং প্রবাস আয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধির প্রেক্ষিতে বৈদেশিক লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রয়েছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বাজেট ঘাটতির পরিমাণ জিডিপি’র পাঁচ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। এমন পরিবেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন সামনের দিনগুলোতে আরো বেগবান হবে। সোনার বাংলায় ’দারিদ্র্য’ হবে সুদূর অতীতের কোন ঘটনা।

তিনি আরো জানান, জাতিসংঘের বিশ্ব অর্থনীতির অবস্থা ও সম্ভাবনা, ২০১৯ প্রতিবেদনে শীর্ষ প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী দেশের তালিকায় বাংলাদেশ রয়েছে। জাতিসংঘের এই প্রতিবেদনে ২০১৮ সালে সবচেয়ে দ্রুত জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনকারী ১০টি দেশের মধ্যে (৭ ভাগের বেশি প্রবৃদ্ধি অজর্নকারী) বাংলাদেশ একটি। এই ১০টি দেশের তালিকায় এশিয়া অঞ্চলে ভারতের পরেই বাংলাদেশের অবস্থান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মূলে রয়েছে সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ ও তার দক্ষ বাস্তবায়ন। ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী ইশতেহার দিন বদলের সনদের অঙ্গীকার অনুযায়ী অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করে। আমরা রূপকল্প, ২০২১ ঘোষণা করেছি। এ পরিকল্পনার আওতায় আমরা দেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নতি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়বো।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক সক্ষমতা এমন পর্যায়ে উন্নীত করেছি যে, পদ্মা সেতুর মত বৃহৎ প্রকল্প নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করছি। পদ্মা সেতুসহ আমরা ১০টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছি। এ সকল পরিকল্পনা সফলভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা ২০১৫ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উত্তরণে সক্ষম হয়েছি। জাতিসংঘ আমাদের স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এটি দেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন ও স্বীকৃতি। জাতি হিসেবে এটি আমাদের জন্য অবশ্যই একটি বড় অর্জন। আশা করছি, আমরা উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবো।

আমার গ্রাম, আমার শহর : সরকার দলীয় সদস্য আহসানুল হক টিটুর প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি আমার গ্রাম আমার শহর বাস্তবায়নের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগরের সুযোগ-সুবিধা সম্প্রসারণ করে গ্রামকে শহরে রূপান্তর করার লক্ষ্যে বহুমুখী প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার লক্ষ্যে পরিকল্পিত ও সুষম উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে আমরা রূপকল্প-২০২১ ঘোষণা করি। রূপকল্প-২০২১ এর অন্যতম উদ্দেশ্যে হলো- গ্রামীণ দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা।

তিনি আরো বলেন, এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা আমাদের নির্বাচনী ইশতেহার, ২০১৮, সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ-এ প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণের অঙ্গীকার করেছি। যার শ্লোগাণ হলো- আমার গ্রাম আমার শহর। এ লক্ষ্য পূরণের উদ্দেশ্যে আমরা গ্রামাঞ্চলের উন্নয়নে অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করেছি।

শেখ হাসিনা বলেন, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে কৃষকের আয় বেড়েছে। সঙ্গে সঙ্গে কৃষি শ্রমিকের চাহিদা ও মজুরি বেড়েছে। বর্তমানে একদিনের মজুরি দিয়ে একজন শ্রমিক প্রায় ১৫ কেটি চাল কিনতে পারছে। ২০০৭ সালে একদিনের মজুরি দিয়ে মাত্র সাড়ে ৩ কেজি চাল ক্রয় করা যেত। চালের মূল্যের সঙ্গে তুলনা করে দেখা যায়, বিগত ৭ বছরে কৃষি শ্রমিকের মজুরি বেড়েছে চারগুণেরও বেশি। গ্রামীণ মানুষের আয় বৃদ্ধি পাওয়ায় জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, গত এক দশক ধরেই আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত কর্মপরিকল্পনার বাস্তবায়নের ফলে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নে বেশ সফলতা অর্জন করেছে। গ্রামীণ জনগণের আত্ম-কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে এবং আয় বৃদ্ধি পেয়েছে। গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে এবং শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা হ্রাস পেয়েছে। তিনি বলেন, জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, শিক্ষার হার ও গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং দারিদ্র্য বিমোচনে বাংলাদেশ এখন সারা বিশ্বে এক অনন্য উদাহরণ। দেশের নগর উন্নয়নের পাশাপাশি গ্রামীণ সমাজের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করার মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে নগর সুবিধা সম্প্রসারণের মাধ্যমে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে আমাদের সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

১০০ অর্থনৈতিক অঞ্চলে এক কোটি কর্মসংস্থান : জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য পনির উদ্দিন আহমেদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে শিল্পের অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন তথা শিল্পায়ন, কর্মসংস্থান, উৎপাদন এবং রপ্তানি বৃদ্ধি ও বহুমুখীকরণের লক্ষ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) এর মাধ্যমে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে

তিনি বলেন, পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর এলাকাসহ সম্ভাবনাময় সকল এলাকায় পরিকল্পিতভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন আমাদের এই উদ্যোগের অন্যতম লক্ষ্য। এসব অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন সম্পন্ন হলে অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ মূল্যের পণ্য ও সেবা উৎপাদন ও রফতানি করা সম্ভব হবে এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ১ কোটি লোকের কর্মসংস্থান হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে উন্নীতকরণে অর্থনৈতিক অঞ্চলসমূহ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ শীর্ষ খবর