গত দুই দশকে ডেঙ্গুবাহিত এডিস মশার কামড়ে ২৯৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। শুধু সরকারি হিসাবেই এডিস মশার কামড়ে আক্রান্ত হয়ে এ সময়কালে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শয্যাশায়ী হয়েছেন ৫২ হাজার ৮৪০ জন।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। তারা বলেন, অনেক সময় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হলেও অনেকেই হাসপাতালে আসেন না, অনেকেই চিকিৎসকের প্রাইভেট চেম্বার ও ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে খান।
ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অকাল মৃত্যুর শিকার ২৯৯ জনের সুদীর্ঘ তালিকায় ছোট্ট ফুটফুটে শিশু থেকে শুরু করে গৃহবধূ, চিকিৎসক, সংবাদ পাঠিকা, ব্যবসায়ী, ব্যাংকার ও চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ রয়েছেন।
বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, যারা ডেঙ্গুতে মারা গেছেন তাদের অধিকাংশই সুস্থ ও সবল দেহের ছিলেন। একদিন হঠাৎ জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। প্লাটিলেট দ্রুত কমে যাওয়াসহ নানা জটিলতায় আইসিইউতে ভর্তি হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এমন অনেক তথ্যপ্রমাণ রয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের সহকারী পরিচালক ডা. আয়েশা আকতার জানান, ২০০০ থেকে ২০১৯ সালের ৬ জুলাই পর্যন্ত দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ডেঙ্গুতে মোট ৫২ হাজার ৮৪০ জন ভর্তি হন।
বছরওয়ারী প্রাপ্ত পরিসংখ্যান অনুসারে ২০০০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা যথাক্রমে ৫ হাজার ৫৫১, ২ হাজার ৪৩০, ৬ হাজার ২৩২, ৪৮৬ জন, ৩ হাজার ৪৩৪, ১ হাজার ৪৮, ২ হাজার ২০০, ৪৬৬ জন, ১ হাজার ১৫৩, ৪৭৪ জন, ৪০৯, ১ হাজার ৩৫৯, ৬৭১ জন, ১ হাজার ৭৪৯, ৩৭৫ জন, ৩ হাজার ১৬২, ৬ হাজার ৬০, ২ হাজার ৭৬৯, ১০ হাজার ১৪৮ ও ২ হাজার ৬৬৪ জন।
এ সময়কালে (২০০০ থেকে ২০১৯ সাল) ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট মৃত্যু হয় ২৯৯ জনের। বছরওয়ারী পরিসংখ্যান অনুসারে মোট মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে ৯৩ জন, ৪৪, ৫৮, ১০, ১৩, ৪, ১১, ৬, একজন, দু’জন, ৬, ১৪, ৮, ২৬ ও তিনজন।
গত প্রায় দুই দশকে দেশে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ দেখা দিলেও ডেঙ্গুবাহী এডিস মশা নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। মশক নিধন ও নিয়ন্ত্রণে ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (দক্ষিণ ও উত্তর) প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার মশার ওষুধ ছিটালেও কাজ হচ্ছে না। ডেঙ্গু জ্বরের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় চিকিৎসা গাইডলাইন তৈরি করেছে।
চিকিৎসক ও নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। জনসচেতনতা বাড়াতে সারাদেশে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তারা বলছেন, ডেঙ্গু মশা নিয়ন্ত্রণ ও ধ্বংস করতে তারা জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটালেও কাজ হচ্ছে না।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক সম্প্রতি ডেঙ্গুর প্রকোপ সম্পর্কে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অভিজাত এলাকায়ই ডেঙ্গু মশার প্রকোপ বেশি। তারা কেউ শখ করে বাগান তৈরি করেন; কেউবা বাড়িতে কৃত্রিম ঝরনা বসান। এছাড়া ঘরের এয়ারকন্ডিশনের জমে থাকা পানি পরিষ্কার করেন না। এ সব কারণে অভিজাত বাসাবাড়িতে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেশি।’ ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে মুক্ত হতে চাইলে সরকারের চেয়ে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জনসচেতনাই বেশ প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।